সৌভিক মজুমদার, সুমন ঘড়াই ও সমীরণ পাল, কলকাতা: গার্ডেনরিচে বহুতল (Garden Reach Disaster) বিপর্যয়ের পর, কলকাতা পুরসভার রিপোর্ট নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ (Calcutta High Court On KMC Report)। অস্ত্রোপচার সফল হলেও রোগী মৃত বলে মন্তব্য করলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম।
কী বলল হাইকোর্ট?
গার্ডেনরিচে বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনায় রিপোর্ট পেশ করার পর কলকাতা পুরসভার উদ্দেশে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, 'যদি রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করতে যান তাহলে কিছুই হবে না। অস্ত্রোপচার সফল কিন্তু রোগী মৃত।' বৃহস্পতিবার কলকাতা পুরসভার উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, 'খাতায় - কলমে দেখে সব ভালই লাগছে। কিন্তু আসলে কিছুই হচ্ছে না। প্রশাসনিক সদিচ্ছা থাকলে অনেক কিছু করা সম্ভব, কিন্তু সেটা না থাকলে কিছুই হবে না। সরকারি আধিকারিকদের হাত বেঁধে রেখে, তাঁদের যদি রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করতে বলা হয় তাহলে কোনওদিনই কিছু হবে না।' এদিন প্রধান বিচারপতির বক্তব্যে উঠে আসে কলকাতা পুরসভা এলাকায় হকার সমস্যার প্রসঙ্গও। বলেন, 'আপনারা ( কলকাতা পুরসভা) নিজেদের অফিসের সামনে হকার সমস্যার সমাধান করতে পারছেন না, কারণ সদিচ্ছার অভাব। কোনওদিন এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছেন?'
আর যা...
গার্ডেনরিচে বহুতল বিপর্যয়ের পর, ওই এলাকায় কীভাবে একটি বহুতলের ওপর আরেকটি বহুতল হেলে রয়েছে সেই ছবি তুলে ধরেছিল এবিপি আনন্দ। এদিন প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, 'আমি ছবিতে দেখছিলাম, গার্ডেনরিচের ওই ঘটনাস্থলে আরও একটি হলুদ রঙের বাড়ি আছে। তার অবস্থাও ভাল না। কী করেছেন আপনারা? বিধাননগরে যে বাড়ি ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তার কী হল? আপনারা বলছেন যে মানুষের প্রতিবাদের কারণে ভাঙা যাচ্ছেন না। অত্যন্ত দুঃখজনক পরিস্থিতি। যেভাবে জমির চরিত্র পাল্টে দিচ্ছেন তা দেখে আমরা বিস্মিত! একটা ৪০ বছরের পুকুর বুজিয়ে দিয়ে বাড়ি করে বলা হচ্ছে ক্ষতিপূরণ হিসাবে আরেকটি জলাশয় বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা কী করে হয়? একটা বড় জলাশয় বুজিয়ে ছোট্ট একটা জলাশয় বানালে কি ক্ষতিপূরণ হয় ? নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁরা বলেন যে আমরা জানি না। তাহলে তো তাঁদের অবিলম্বে অপসারণ করা উচিত।' এদিন কলকাতা হাইকোর্ট অন্তর্বর্তী নির্দেশ দেয় , আদালতের পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত, বৈধ অনুমোদন নেই, এমন নির্মাণের ক্ষেত্রে কোনও ব্যক্তিকে সেল ডিড, পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি দেওয়া যাবে না। গার্ডেনরিচে বহুতল ভেঙে নিহতদের ৫ লাখ এবং আহতদের ১.৫০ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। এর পাশাপাশি, তৃণমূল কাউন্সিলর শামস ইকবাল এবং ধৃত প্রোমোটারকে মামলা সংক্রান্ত নোটিস দেওয়ার জন্যও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৯ মে এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
আরও পড়ুন:মুখ ফেরাননি নির্বাচনের ডিউটি থেকে; প্রত্যয়ী 'চাকরিহারা' বলছেন, "লড়াই চলবে"