কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গ 'ছাত্র সমাজে'র আহ্বায়ক সায়ন লাহিড়িকে (Sayan Lahiri) জেল থেকে মুক্তির নির্দেশ। নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা। হাইকোর্টের বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছেন, শনিবার, দুপুর দুটোর মধ্যে তাঁকে জেল থেকে মুক্ত করতে হবে।
জেল থেকে মুক্তির নির্দেশ: শুক্রবার এই মামলার শুনানিকে রাজ্য সরকারকে একাধিক প্রশ্নবানে বিদ্ধ করে কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি জানতে চান, সায়ন লাহিড়ি কতটা প্রভাবশালী? তার কি অপরাধের কোনও পূর্ব ইতিহাস আছে? সন্দীপ ঘোষ তো আর জি করের নেতা ছিলেন। তাঁকে কি হেফাজতে নিয়েছিলেন? উস্কানিমূলক মন্তব্যের অভিযোগ আনছেন। রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নিয়েছেন? যারা আসলে দোষী বা দোষ করার মতো জায়গায় আছেন, তাদের কতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে?
'পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজে'র ডাকে নবান্ন অভিযানের পর রাতে এবিপি আনন্দর স্টুডিও থেকে বেরোতেই গ্রেফতার করা হয় সংগঠনের আহ্বায়ক সায়ন লাহিড়িকে। গ্রেফতারিকে চ্য়ালেঞ্জ করে শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি। এদিন শুনানিতে জামিনের আবেদন করে সায়ন লাহিড়ির আইনজীবী বলেন, পুলিশ এমন একটা উদাহরণ দেখাক, যেখান থেকে প্রমাণ হয় যে, সায়ন লাহিড়ি পুলিশকে আহত করেছেন বা আহত করার উদ্দেশ্য নিয়ে মিছিলে যোগদান করেছিলেন। পুলিশ কি কোনও প্রমাণ দেখাতে পারবে, যার থেকে এটা প্রতিষ্ঠিত হয় যে সায়ন লাহিড়ি কাউকে খুনের চেষ্টা করেছিলেন? তখন রাজ্য সরকারের আইনজীবী বলেন, সায়ন মিছিলের ডাক দিয়েছেন। তিনি কি এখন মিছিলের মধ্যে ঘটে যাওয়া কোনও ঘটনার দায় এড়াতে পারেন? সায়ন লাহিড়ির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ আছে। প্রথমত, সায়ন লাহিড়ি পুলিশের অনুমতি নেননি। দ্বিতীয়ত, সায়ন স্ট্র্যান্ড রোডের ওপর একটি মিছিলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। সেই মিছিল যখন বাবুঘাটে পৌঁছয় তখন তারা আক্রমণাত্বক হয়ে ওঠে, পুলিশের বাইক জ্বালিয়ে দেয়, গাড়ি ভেঙে দেয়, RPF-এর আধিকারিকদের হেনস্তা করে।
তখন, রাজ্য সরকারের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল বলেন, সায়ন লাহিড়ি নিজেই বলেছেন যে, তিনি এই অভিযানের নেতা এবং আয়োজক। ফলে, তিনি যদি বাড়িতে বসেও নেতৃত্ব দেন এবং একটি ইটও যদি তিনি না ছোড়েন, তাহলেও কিছু ঘটলে, তার দায় তাঁকে নিতেই হবে। আমাদের কাছে প্রমাণ আছে যে, ইটবৃষ্টি এবং সরকারি সম্পত্তি নষ্টের পিছনে সায়নের ভূমিকা রয়েছে। পুলিশের আহত হওয়ার ঘটনা যদি আমরা ছেড়েও দিই, তাহলেও সরকারি এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তি নষ্টের ঘটনা কি করে ছেড়ে দেব? পুলিশ বারবার বলেছিল যে, মিছিলের জন্য নিয়ম অনুযায়ী আবেদন দাখিল করার জন্য। কিন্তু সায়ন কর্ণপাত করেননি। এই প্রবণতাকে উৎসাহ দেওয়া হলে, কাল থেকেই নেতাহীন কর্মসূচি শুরু হয়ে যাবে।
তবে এই সওয়াল শুনে রাজ্য সরকারের আইনজীবীর উদ্দেশে বিচারপতি অমৃতা সিনহা বলেন, এখনও পর্যন্ত আমার সায়ন লাহিড়িকে এতটা প্রভাবশালী মনে হচ্ছে না যে, তিনি একডাকে এত লোক জোগাড় করতে পারেন। তখন অ্যাডভোকেট জেনারেল বলেন, কতজন ছাত্র এই বিক্ষোভে ছিলেন সেটা সবাই জানে। বিচারপতি অমৃতা সিনহা প্রশ্ন করেন, আপনার কি মনে হয় না, যারা সত্যিই আর জি কর হাসপাতালের ঘটনার জন্য দায়ী, তাদের শনাক্ত করা এখনও বাকি রয়েছে, আর যারা প্রতিবাদ করছেন তাদের ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে?
এর উত্তরে অ্যাডভোকেট জেনারেল বলেন, না, এভাবে বিষয়টি দেখবেন না। জুনিয়র ডাক্তাররা তো আন্দোলন করছেন। তাদের বিরুদ্ধে তো কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। অনেক কিছু বলা হলেও, শেষপর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। শান্তিপূর্ণ অবস্থানের ক্ষেত্রে আমাদের কোনও বাধা নেই। সুপ্রিম কোর্টও সেই মর্মে নির্দেশ দিয়েছেন। তখন বিচারপতি সিনহা জানতে চান, মনে করুন কেউ শান্তিপূর্ণ মিছিলের ডাক দিল, মাঝপথ থেকে কেউ সেই কর্মসূচি হাইজ্যাক করে নিল আর তার জন্য আয়োজকদের গ্রেফতার করা যায়? সায়ন লাহিড়িকে সামনে রেখে কেউ যদি পিছন থেকে তাঁকে নিয়ন্ত্রণ করে সেক্ষেত্রে? সায়ন পাথর ছুঁড়ছেন এমন কোনও ছবি আছে? সায়ন যে সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত সেটা কি রেজিস্টার্ড সংগঠন? তখন সায়ন লাহিড়ির আইনজীবী বলেন, না, প্রতিবাদী ছাত্ররা একত্রিত হয়ে এই সংগঠন তৈরি করেছেন। কোন দুষ্কৃতীরা এই মিছিলে আসছে, কারা শান্তিপূর্ণ মিছিলে অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে সেটা খুঁজে বের করা পুলিশের কাজ।
সওয়াল জবাব শুনে, সায়ন লাহিড়িকে জেল থেকে মুক্তির নির্দেশ দেন বিচারপতি। এর পাশাপাশি, বিচারপতি সিন্হা নির্দেশ বলেন, আদালতের নির্দেশ ছাড়া সায়ন লাহিড়ির বিরুদ্ধে যে মামলাগুলি রুজু হয়েছে বা ভবিষ্যতে যে মামলাগুলো রুজু হতে পারে, সেগুলির প্রেক্ষিতে কোনও কড়া পদক্ষেপ নিতে পারবে না পুলিশ। আইনের অপব্যবহার যাতে না হয়, সেই কারণে এই অন্তর্বর্তী নির্দেশ। হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে আর কোনও প্রয়োজন আছে বলে মনে করছে না আদালত।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।
আরও পড়ুন: Bankura News: জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে কুড়ুল দিয়ে খুন, স্বামীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ আদালতের