কলকাতা: শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং রত্না চট্টোপাধ্যায়ের বিবাহবিচ্ছেদ মামলায় এবার কলকাতা হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ। দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি করতে আলিপুর আদালতকে নির্দেশ দিল হাইকোর্ট। অযথা মামলা পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন গ্রহণ না করার নির্দেশ দেওয়া হল। আলিপুর কোর্টের বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে হাইকোর্টে গিয়েছিলেন রত্না। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী ছাড়াই আলিপুর কোর্টে বিচারপ্রক্রিয়া চলছে বলে অভিযোগ করেছিলেন।
যদিও আলিপুর আদালতের বিচারকের সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করল না হাইকোর্ট। (Sovan-Ratna Divorce Case)


হাইকোর্টে রত্না জানিয়েছিলেন, বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী ছাড়াই নিম্ন আদালতে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নিম্ন আদালতের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন তিনি। সেই নিয়ে শুক্রবার শুনানিতে বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্য জানান, আলিপুর আদালতের বিচারক যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এক্ষেত্রে, তা সঠিক। তাতে কোনও রকম হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই। এই মুহর্তে যে সাক্ষীদের কথা বলেন রত্না, যে সাক্ষীদের বয়ান গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ করেন, তা গুরুত্ব দিয়ে দেখছে না হাইকোর্ট। দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি করতে হবে বলেই জানিয়েছে। (Calcutta High Court)


আদালতে  সব সাক্ষীদের ডাকা হচ্ছে না বলে অভিযোগ ছিল রত্নার। অন্য দিকে শোভনের দাবি ছিল, আট বছর ধরে মামলা টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যাঁদের বয়ানের প্রয়োজন নেই, তাঁদের ঢাল করে মামলা পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে লাগাতার। এই ধরনের মামলা যেখানে অতি অল্প দিনে মিটে যাওয়ার কথা, তাকে আট বছর দীর্ঘায়িত করা হয়েছে বলে জানান শোভন। সবমিলিয়ে চরমে ওঠে বিবাদ। আর সেই আবহেই দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ দিল হাইকোর্ট।


শোভন এবং রত্নার বিবাহবিচ্ছেদ মামলায় শোভনের আইনজীবী তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। কল্যাণের বিরুদ্ধেও একাধিক অভিযোগ তোলেন রত্না। কল্যাণও সেই নিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। আইনজীবী হিসেবে তাঁর বিরুদ্ধে কুরুচিকর অভিযোগ আনা হয়েছে, মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে বলে দাবি করেন কল্যাণ। সেই নিয়ে হাইকোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন তিনি।


সেই মামলায় এদিন কল্যাণের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন রত্না। লিখিত আকারে ক্ষমা চেয়েছেন তিনি। হলফনামার আকারে বিকেল ৪টের মধ্যে তাঁকে সেই লিখিত বক্তব্য জমা করতে হবে। ক্ষমার বয়ান নিয়ে দুপক্ষের আইনজীবীদের আলোচনা হয়।


এর আগে, সংবাদমাধ্যমেও কল্যাণের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন রত্না। তাঁর বক্তব্য ছিল, "উনি পেশাদার আইনজীবী। টাকার বিনিময়ে মামলা লড়বেন, সেই নিয়ে কিছু বলার নেই। কিন্তু সেখানেও তিনি অসম্ভব মিথ্যে বলেছেন।" রত্নার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন কল্যাণও। তিনি বলেন, "ডাক্তারের কাছে যান, অনেকেই তো তৃণমূলের! তাঁরা কি পয়সা নেন না! এর সঙ্গে দলের কী সম্পর্ক? আমি মক্কেলের হয়ে লড়ব। তৃণমূলের বিধায়ক-সাংসদদের হয়ে অভিষেক মনু সিঙ্ঘভই মামলা লড়েননি?"


রত্নাকে "প্যাথলজিক্যাল লায়ার' বলেন শোভনও। তাঁর কথায়, "প্যাথলজিক্য়াল লায়ারের মতো কথা যদি কেউ বলেন। তাঁর পিছনে ছোটা মানে কাকে কান নিয়ে গেল, কাকের পিছনে ছোটার চেয়ে নিজের কানে হাত দেওয়া ভাল।" কিন্তু রত্নার দাবি, তাঁর বাবাকেও ছাড়া হচ্ছে না। তাঁর বাবা দুলাল দাসকে 'কালারফুল' বলা হয়েছে বলে জানান তিনি। রত্নার কথায়, "তুমি মিথ্যা কথা বলছো কেন? আমি একজন অসহায় মহিলা বলে, একা দুই সন্তানকে নিয়ে লড়াই করছি বলে, যা খুশি নোংরা কথা বলে চলে গেলে...।" যদিও শোভনের দাবি, রত্না ও তাঁর বাবার মধ্যে মিল নেই। তা  যদি আদালতে উঠে আসে, তার দায়িত্ব তাঁর নয়।