কৃষ্ণেনদু অধিকারী ও অর্ণব মুখোপাধ্য়ায়, কলকাতা: গো-বলয় থেকে এ রাজ্যের রাজনীতিতেও ঢুকে পড়েছে ব্যক্তিগত আক্রমণ। শাসক-বিরোধী, আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ থেকে বাদ নেই কেউই। এবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতির (Justice Abhijit Ganguly) মুখেও  উঠে এল 'ভাইপো'র উল্লেখ।


গত কয়েকবছর ধরে বঙ্গ রাজনীতির বাগযুদ্ধে বারবার শোনা গেছে এই 'ভাইপো'র উল্লেখ। তৃণমূলকে আক্রমণ করতে গিয়ে, 'ভাইপো' অস্ত্রে শান দিয়েছে বিরোধীরা। পাল্টা চ্য়ালেঞ্জ ছুড়ে দিতে শোনা গিয়েছে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়কেও (Abhishek Banerjee)। এবার রাজনীতির গণ্ডি পেরিয়ে, আদালতে শোনা গেল সেই বহুচর্চিত শব্দ।


গত কয়েক বছর ধরে, রাজ্য় রাজনীতির সমুদ্রে বারবার ঢেউ তুলেছে এই একটি শব্দ। এবার কলকাতা হাইকোর্টে, বিচারপতির মুখেও উঠে এল সেই 'ভাইপো'র উল্লেখ। একটা সময়ে উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ-মায়াবতীকে বিঁধতে প্রতিপক্ষ শিবিরের মুখে শোনা যেত 'বুয়া-ভাতিজা'র কথা।কিন্তু, গত কয়েকবছরে গোবলয় থেকে সেই শব্দবন্ধ ঢুকে পড়েছে এ রাজ্য়েও।


২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন থেকে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রচার। স্বয়ং নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহও তৃণমূলকে আক্রমণ করতে, বার বার ঝুলি থেকে বার করেছেন 'ভাইপো' অস্ত্র। তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে যাওয়ার পর, শুভেন্দু অধিকারীর আক্রমণে যে শব্দ কার্যত নিয়মিত হয়ে উঠেছে, তা হল, 'ভাইপো'। 


তৃণমূলে অলিখিত ভাবেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরসূরি হিসেবে ধরা হয় অভিষেককে। তাঁদের পারিবারিক সম্পর্কের নিরিখেই অভিষেককে আক্রমণ করতে 'ভাইপো' শব্দটি ব্যবহার করেন বিরোধীরা। যদিও অভিষেকের বক্তব্য, তাঁর নাম মুখে আনার সাহস নেই বলেই, 'ভাইপো' বলে আক্রমণ। অভিষেককে বলতে শোনা যায়, "আমার নাম নিতে ভয় পায়। তাই ভাইপো বলে। আমি নাম করে বলছি শুভেন্দু চোর।"


আরও পড়ুন: Sabyasachi Dutta : 'পুরসভা নির্বিকার, আসি যাই মাইনে পাই, কাজ করলে ওভারটাইম চাই' বিস্ফোরক তৃণমূল কাউন্সিলর সব্যসাচী দত্ত

রাজনীতির পর আদালতের আঙিনা বিচারপতির মুখেও 'ভাইপো' শব্দের উল্লেখ উঠে আসায় তাই বিতর্ক শুরু হয়েছে। এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, " উনি কোন ভাইপোর বাড়ি দেখেছেন আমি তো জানি না। ওঁর মতো এমন ঐশ্বরিক ক্ষমতা আমার নেই। হয়ত উনি নিজের ভাইপোর বাড়ি দেখেন। ওঁর নিজের ভাইপোর চার না পাঁচ তলা বাড়ি, এবার আমাদেরও অনুসন্ধান করতে হবে। উনি বরং আদালত ছেড়ে নবান্নে বসুন। উনি মাননীয় বিচারপতি। আমরা যখন প্র্যাকটিস করেছি, এই আবহাওয়া ছিল না। হাইকোর্টের ঐতিহ্য়শালী চেয়ারে বসে এই সব কথা বলছেন। শুভবুদ্ধির উদয় হোক।"


যদিও বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য, "আমাদেরও প্রশ্ন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে বলছেন, উনি খুব গরিব ঘরের মেয়ে। তাঁর দাদা অর্থাৎ ভাইপোর বাবার একটি হার্ডওয়্যায়ের দোকান দক্ষিণ কলকাতায় রয়েছে বলে জানি। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ডাক্তারি করলেন না, ইঞ্জিনিয়ারিং করলেন না.. আমরা কম পড়াশোনা জানি। তাই বুঝতে পারছি না, কী এমন কনসালটেন্সি গড়লেন যে এত কোটি কোটি টাকা এল!"


এর আগে, আদালতের ভূমিকা নিয়ে একাধিক বার প্রশ্ন তুলেছেন অভিষেক। হাতেগোনা কিছু বিচারপতির আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি তিনি।