সৌভিক মজুমদার, কলকাতা: নিয়োগ-দুর্নীতির মামলা প্রসঙ্গে (SSC Scam) ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করলেন, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Justice Abhijit Ganguly)। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের এলাকা, নাকতলার এক বাসিন্দার উদ্দেশে, বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, "আমার জীবদ্দশায় আসল অপরাধী ধরা পড়বে বলে তো মনে হয় না।" কিন্তু, 'আসল অপরাধী' বলতে কাকে বোঝাতে চাইলেন তিনি? উঠছে সেই প্রশ্ন।


নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের!


শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির একের পর এক মামলায় সিবিআই (CBI) তদন্তের দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta Hifh Court) বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। গ্রেফতার হয়েছেন মন্ত্রী, তৃণমূল বিধায়ক থেকে শিক্ষা-প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত একাধিক আধিকারিক। 


কিন্তু, বৃহস্পতিবার এজলাসে সেই বিচারপতিকেই বলতে শোনা গেল, "আমার জীবদ্দশায় আসল অপরাধী ধরা পড়বে বলে তো মনে হয় না।" কিন্তু, আসল অপরাধী বলতে কার বা কাদের দিকে ইঙ্গিত করলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়, তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। 

এদিন মামলার মাঝেই কলকাতা হাইকোর্টে দেখা যায় এক অন্য ছবি। দুপুর পৌনে একটা নাগাদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে আসেন এক ব্যক্তি। সুনীল ভট্টাচার্য বলে নিজের পরিচয় দিয়ে তিনি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের উদ্দেশে বলেন, "আমি নাকতলার বাসিন্দা। কাজের সূত্রে ওড়িশায় থাকি। নাকতলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কুকুরদের জন্য যে ফ্ল্যাট আছে, তা এলাকার সবাই জানে। কিন্তু পুলিশ জানত না। অবাক কাণ্ড। এরপর তিনি বলেন, আমি এবং আমার ৯২ বছরের মা আপনার ভক্ত। বাংলাজুড়ে আপনার আরও অনেক ভক্ত রয়েছেন।"


আরও পড়ুন: Upper Primary Recruitment: অপেক্ষমান সকলেরই চাকরি, উচ্চ-প্রাথমিকের শারীর ও কর্মশিক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ


বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তখন বলেন, "৬ বছর আগে ওড়িশা থেকে আসার সময় ব্যঙ্গের শিকার হয়েছিলাম। ট্রেনে করে আসার সময় এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আপনি পশ্চিমবঙ্গে থাকেন? আপনাদের ওখানে টাকা নিয়ে কলেজে ভর্তি হয়? আমাকে মাথা নীচু করে শুনতে হয়েছিল। কয়েক বছর আগে ঘনশ্যাম বলে আমার একজন ক্লার্ক বলেন, তাঁর মেয়েকে মেদিনীপুরের কলেজে ইংরেজি স্নাতকে ভর্তির জন্য, আড়াই লাখ টাকা চাওয়া হয়েছিল। এই তো অবস্থা।"


এর পর সুনীল ভট্টাচার্য নামে ওই ব্যক্তি বিচারপতির উদ্দেশে আবার বলেন, "আপনি একজন নমস্য ব্যক্তি। আসল অপরাধীদের ধরতে হবে।" তখনই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "নিয়োগ দুর্নীতিতে আসল অপরাধী কে, সবাই জানে। আমার জীবদ্দশায় তারা ধরা পড়বে বলে তো মনে হয় না। আমি তো নিজে ধরতে যেতে পারব না। সবাই মিলে চেষ্টা করে এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।"


নিয়োগ দুর্নীতিতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ই!


ইতিমধ্যে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির মামলায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিন্হা, প্রাক্তন সচিব অশোককুমার সাহা, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য এবং দুই মিডলম্যান প্রদীপ সিং ও প্রসন্নকুমার রায়কে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু, আসল অপরাধী বলে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় কাকে বোঝাতে চাইলেন? সেই প্রশ্ন জোরাল হচ্ছে বিভিন্ন মহলে।