আবির দত্ত, কলকাতা : সুপ্রিম কোর্টের পর এবার কলকাতা হাইকোর্টের ইউটিউব অ্যাকাউন্টও হ্যাক ? বিচারপতি শুভেন্দু সামন্তর ৭ নম্বর এজলাসে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের সময় হঠাৎই অশ্লীল ভিডিও চালু হয়ে যায়। তড়িঘড়ি বন্ধ করে দেওয়া হয় হাইকোর্টের লাইভ স্ট্রিমিং। কীভাবে এই ঘটনা ঘটল তা খতিয়ে দেখছে হাইকোর্টের আইটি সেল। এনিয়ে কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইমে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।


কী ঘটনা ?


এদিন সকালে ভ্য়াকেশন বেঞ্চ চলছিল। বিচারপতি শুভেন্দু সামন্তর ৭ নম্বর এজলাসের লাইভ স্ট্রিমিং চলাকালীন সেখানে কিছু অশ্লীল ছবি দেখা যায়। সঙ্গে সঙ্গে স্ট্রিমিং বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেওয়া হয় হাইকোর্টের আইটি সেলের তরফ থেকে। 


আর জি কর কাণ্ডে জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে রাজ্য সরকারের বৈঠকের ক্ষেত্রে এই লাইভ স্ট্রিমিং নিয়ে বিপত্তি বাধে, যার জেরে বার বার ভেস্তে যায় আলোচনা। বৈঠক আগাগোড়া লাইভ সম্প্রচার করতে হবে বলে শর্ত দিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। কিন্তু রাজ্য সরকার বিচারাধীন বিষয় নিয়ে আলোচনার লাইভ সম্প্রচার করতে রাজি হয়নি। শেষ পর্যন্ত কার্যবিবরণীতে দুই পক্ষের সই-সহ বৈঠক হয়। এর পরই, আদালতের শুনানিপর্বের লাইভ স্ট্রিমিং নিয়ে আপত্তি তোলেন সিবল। সুপ্রিম কোর্টে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের বিরোধিতায় সওয়াল করেন কপিল সিবল। এর পাল্টা প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় জানিয়ে দেন, লাইভ স্ট্রিম বন্ধ হবে না। সেই নিয়ে বাক্য বিনিময় হয় সিবল এবং প্রধান বিচারপতির মধ্যে। 


সেদিন শুনানির শুরুতেই প্রধান বিচারপতি জানান, সওয়াল-জবাব শুরু হওয়ার আগে সকলকে একটা বিষয় জানাতে চান তিনি, লাইভ স্ট্রিমিং চলছে বলে মাঝখানে উঠে চেঁচাবেন না কেউ। সঙ্গে সঙ্গে মুখ খোলেন সিবল। তিনি বলেন, "এই ধরনের বিষয়ে লাইভ স্ট্রিমিং হলে, তার ব্যাপক প্রভাব পড়ে। আমরা অভিযুক্তের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছি না। ৫০ বছরের সম্মান জড়িয়ে আমাদের।"


এর পাল্টা প্রধান বিচারপতি বলেন, "জনস্বার্থের প্রশ্ন জড়িয়ে রয়েছে। আদালত মুক্ত।" সিবল বলেন, "আমাদের সম্মানের প্রশ্ন জড়িয়ে। আমি ঠিক কখন হেসেছি ? এটা ঠিক নয়। আমাদের মহিলাদের উপরও প্রভাব পড়ছে। মহিলা আইনজীবীরা হুমকি পাচ্ছেন। বলা হচ্ছে, অ্যাসিড ছোড়া হবে, ধর্ষণ করা হবে।"


রাজ্যের মহিলা আইনজীবীদের সোশ্য়াল মিডিয়ায় হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে জানান সিবল। এতে প্রধান বিচারপতি বলেন, "কোনও মহিলাকে কি হুমকি দেওয়া হয়েছে ? মহিলা বা পুরুষ, যাঁরা মামলায় যুক্ত... ঠিক আছে, আমরা বিষয়টি দেখব।"


এরপর আরজি করের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ আন্দোলনের পর অভাবনীয় ঘটনা ঘটে গত ২১ অক্টোবর। আচমকা, জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবি ছাড়াই বৈঠকের 'লাইভ স্ট্রিমিং' করে রাজ্য সরকার।  বৈঠকে ১০ জনের কথা উল্লেখ থাকলেও, নবান্নে গিয়েছিলেন ২২ জন জুনিয়র চিকিৎসক। তাঁদের মধ্যে ১৭ জন যোগ দিলেন বৈঠকে।


এই বৈঠকে এমন কোনও শর্তই ছিল না আন্দোলনকারী ডাক্তারদের তরফে। আর একটা সময় বিচারাধীন বিষয় এই যুক্তি দেখিয়ে বৈঠকের লাইভ স্ট্রিমিং করতে রাজি হয়নি যে নবান্ন, অবশেষে তারাই সবাইকে চমকে দিয়ে কোনও দাবিদাওয়া ছাড়াই বৈঠকের লাইভ স্ট্রিমিং করল।