কলকাতা : ১৭ এপ্রিলের মধ্যে কর্মচারীদের সঙ্গে রাজ্যকে আলোচনায় বসার নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) । 'কর্মচারী সংগঠনের তরফে তিন জনের নাম দিতে হবে। তাঁদের সঙ্গে সরকার আলোচনায় বসবে।' এমনই নির্দেশ দিলেন হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম। তাঁর পরামর্শ, 'মুখ্যসচিব, অর্থসচিব সহ দায়িত্বশীল পদে থাকা ব্যক্তিরা কর্মচারী সংগঠনের সঙ্গে কথা বলুন। কর্মচারীরা বারবার কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন, সরকারের পদক্ষেপের প্রয়োজন রয়েছে।'
তবে, ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে দেন, 'এই মামলা এখন সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। কর্মচারী সংগঠনগুলি কি অপেক্ষা করতে পারছে না ?' এর পরিপ্রেক্ষিতে কর্মচারী সংগঠনের আইনজীবী জানান, 'মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন, তার বিরুদ্ধেই তাঁদের পেনডাউন।' তাতে অবশ্য ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বলেন, 'এই সমস্যার জন্য তো বেশ কিছু আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের উপায় রয়েছে। 'আজকে কর্মবিরতির কারণে ৪৩৬ কোটি টাকার ক্ষতি হবে বলে অভিযোগ।' এটা খতিয়ে দেখতে হবে বলে মন্তব্য করেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি।
বকেয়া DA-র (Dearness Allowance) দাবিতে ৭০ দিনে পড়ল শহিদ মিনারে রাজ্য সরকারি কর্মীদের ধর্না-অবস্থান। DA-আন্দোলনকারীদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিবাদে আজ রাজ্যজুড়ে ১২ ঘণ্টা সরকারি দফতরে কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চোর-ডাকাত’ মন্তব্যের প্রতিবাদেই মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার রাজ্যের প্রশাসনিক কাজকর্ম স্তব্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা।
মুখ্যমন্ত্রী গত মাসের শেষে ধর্নামঞ্চ থেকে মন্তব্য করেছিলেন, 'চিরকুটে চাকরি পেয়েছিল। সব গিয়ে বসে আছে ওখানে, ডিএ-র ওখানে। তাঁদের কাছে আমায় জ্ঞান শুনতে হবে। জ্ঞানদাতারা, চোরেরা, ডাকাতরা, ডাকাত সর্দাররা।’ এর পরেই ফুঁসে ওঠেন আন্দোলনকারীরা।
তৃণমূলের ধর্নামঞ্চ থেকে মাত্র ৬০০ মিটার দূরে বসে থাকা সেই ডিএ-আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে চড়া সুরে হুঁশিয়ারি দেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়! তিনি বলেন, ' আমি সব ডিপার্টমেন্টকে বলেছি, সব ফাইল খুঁজে বের করুন, খুঁজতে খুঁজতে দেখছেন তো কত বেরচ্ছে... টাকা নিচ্ছে, পেনশন নিচ্ছে, আরও চাই!... সব চাকরি চিরকুটে হয়েছে। সব ফাইল খুঁজে বার করতে বলেছি। যাঁরা আন্দোলনে বসেছেন তাঁদের বেশিরভাগের চিরকুটে চাকরি।'
৬ মার্চ, বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, তাঁর মুণ্ড কেটে নেওয়া হলেও, এই মুহূর্তে এর থেকে বেশি DA দিতে পারবে না রাজ্য সরকার। পাশাপাশি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এও দাবি করেছিলেন যে, সিপিএমের আমলে সব DA বকেয়া ছিল। ৩৪ বছরে, সিপিএম মাত্র ৩৩ শতাংশ DA দিয়েছে। তৃণমূল জমানায় ৯৯ শতাংশ প্লাস ৬ শতাংশ DA অর্থাৎ ১০৫ শতাংশ DA দেওয়া হচ্ছে।
যদিও বৃহস্পতিবার পরীক্ষার কারণে স্কুলগুলিতে কর্মবিরতি পালন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। পাশাপাশি, রাজ্য সরকারকে চাপে রাখতে এবার সাঁড়াশি আক্রমণে নামতে চাইছেন DA-আন্দোলনকারীরা। আগামী ১০-১১ এপ্রিল দিল্লির যন্তর মন্তরে অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচি নিতে চলেছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি ও কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করতে পারেন DA-আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনকারীদের দাবি, এদিন রাজ্য প্রশাসনকে স্তব্ধ করে দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন ; ৭০ দিনে আন্দোলন, আজ রাজ্যজুড়ে ১২ ঘণ্টা সরকারি দফতরে কর্মবিরতি