কলকাতা: অনুব্রত মণ্ডলকে (Anubrata Mandal) বার বার হেফাজতে নেওয়ার কারণ হিসেবে তাঁর 'প্রভাবশালী' হওয়ার তত্ত্ব তুলে ধরেছিলেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। বীরভূমের (Birbhum) তৃণমূল (TMC) সভাপতি যে 'প্রভাবশালী', তদন্তকারীদের সেই তত্ত্বে এ বার কার্যত আদালতের সিলমোহর পড়ল। গরুপাচার মামলায় (Cattle Smuggling Case) গ্রেফতার হওয়ার পরও এখনও বীরভূমে তৃণমূলের সভাপতি পদে রয়েছেন অনুব্রত, প্রশাসনেও তাঁর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে বলে মন্তব্য করল আদালত। 


গ্রেফতার হওয়ার পরও বীরভূমে তৃণমূলের সভাপতি পদে রয়েছেন অনুব্রত


বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে অনুব্রতর জামিনের আর্জি খারিজ হয়ে গিয়েছে। সেখানে তৃণমূল কর্মী শিবঠাকুর মণ্ডলের দায়ের পুরনো অভিযোগকে খুঁচিয়ে তোলার বিষয়টি যেমন উঠে এসেছে, তেমনই অনুব্রতর 'প্রভাবশালী' হওয়ার বিষয়টিও উঠে আসে। অনুব্রত ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন, তসাক্ষীদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন বলে এ দিন মন্তব্য করে আদালত।


এ দিন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি এবং বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্তর ডিভিশন বেঞ্চে অনুব্রতর জামিনের শুনানি চলছিল। সেখানে অনুব্রতর আর্জির খারিজ করে দিয়ে বলা হয়, "অনুব্রত মণ্ডল এখনও ক্ষমতাশালী। রাজনৈতিক পদে রয়েছেন। শুধু সমাজে নয়, প্রশাসনেও ব্যাপক প্রভাব রয়েছে ওঁর।"


তদন্তকারীদের তরফে জমা দেওয়া রিপোর্ট পর্যবেক্ষণ করে আদালত বলে, "পেশ করা তথ্যে দেখা যাচ্ছে, অনুব্রত মণ্ডল একজন রাজনৈতিক হেভিওয়েট। ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাক্ষীদের প্রভাবিত করেছেন। হুমকি দিয়েছেন, চেষ্টা করেছেন তদন্তকে বিপথে চালিত করার। সাক্ষীদেরও প্রভাবিত করেছেন অনুব্রত মণ্ডল।" গরুপাচার মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পরও বীরভূমের তৃণমূল সভাপতির পদ যায়নি তাঁর, এমনকি তাঁকে বীরের সম্মানে ফিরিয়ে আনার কথাও বলতে শোনা গিয়েছে তৃণমূল নেতৃত্বকে। সেই নিরিখেই আদালতের এমন পর্যবক্ষণ কিনা, জল্পনা শুরু হয়েছে। 


আরও পড়ুন: Anubrata Mandal: কাঁটা হলেন সেই ‘শিবঠাকুর’ই! হাইকোর্টেও ধাক্কা অনুব্রতর, খারিজ হল জামিনের আর্জি


কিন্তু গরু পাচার মামলায় বিএসএফ-এর সতীশ কুমার যেখানে জামিন পেয়ে গিয়েছেন, সেখানে অনুব্রতকে নিয়ে টানাপোড়েন কেন, ওঠে প্রশ্ন। জবাবে আদালত বলে, "অনুব্রত জামিন পেলে শুধু সাক্ষীদের উপর নয়, বিচারপ্রক্রিয়ার উপরও অশুভ প্রভাব পড়বে।  গরুপাচারে অনুব্রত মণ্ডলের যুক্ত থাকার সপক্ষে পর্যাপ্ত প্রমাণ দিয়েছে সিবিআই।"


গরুপাচার মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর গত ১৪৬ দিন ধরে জেলে রয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল। সম্প্রতি হাইকোর্টে জামিনের আর্জি জানান তিনি। কিন্তু বুধবার সেই আবেদনও খারিজ হয়ে গেল। প্রভাবশালী হওয়ার পাশাপাশি, অনুব্রতর জামিন খারিজ হওয়ার নেপথ্যে 'শিবঠাকুর'ও কাঁটা হিসেবে কাজ করেছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। 


কারণ সম্প্রতি অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সম্প্রতি আদালতের অনুমোদন জোগাড় করেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তাতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় অনুব্রতর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া এক বছর আগের একটি অভিযোগ, যেখানে তৃণমূল কর্মী শিবঠাকুর মণ্ডল (Shivthakur Mondal),  অনুব্রতর বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগ করেছিলেন। সেই মামলায় রাতারাতি অনুব্রতকে গ্রেফতার করে রাজ্য পুলিশ। ফলে অনুব্রতর দিল্লিযাত্রা আটকে যায়।


গরুপাচার মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর গত ১৪৬ দিন ধরে জেলে রয়েছেন অনুব্রত


গোড়া থেকেই পুরনো মামলাকে এ বাবে খুঁচিয়ে তোলা নিয়ে উঠছিল প্রশ্ন। বিরোধীরা অভিযোগ তোলেন, অনুব্রতর দিল্লি যাত্রা রুখতেই পরিকল্পনা করে মিথ্যে মামলা দায়ের করানো হয়েছিল শিবঠাকুরকে দিয়ে। যে প্রক্রিয়ায় অনুব্রতকে গ্রেফতার করা হয়, তা অত্যন্ত অস্বচ্ছ ছিল বলে গতকাল মেনে নেয় আদালতও। খুনের চেষ্টার অভিযোগে এক বছর পর কেন অনুব্রতকে গ্রেফতার করার প্রয়োজন পড়ল, প্রশ্ন তোলে আদালত। সমালোচনা করে পুলিশের ভূমিকারও। এর পরই বুধবার অনুব্রতর জামিনের আর্জি খারিজ করে দেওয়া হল।