সৌভিক মজুমদার, আশাবুল হোসেন ও দীপক ঘোষ, কলকাতা: স্কুল সার্ভিস কমিশনে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে অযোগ্য চাকরিপ্রাপকদের কী পরিণতি হবে? দু’টি বিকল্পের কথা জানাল কলকাতা হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ। প্রয়োজনে বাতিল করা হতে পারে সম্পূর্ণ নিয়োগ, প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে জানালেন বিচারপতি দেবাংশু বসাক।


'একটা পচা আপেল গোটা ঝুড়ির আপেলকে নষ্ট করে দেয়'- SSC দুর্নীতি মামলায় এমন মন্তব্য়ই শোনা গেল কলকাতা হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চের বিচারপতির মুখে। নিয়োগের দাবিতে রোদ-ঝড়-জল উপেক্ষা করে যখন গান্ধীমূর্তির নীচে টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন SSC চাকরিপ্রার্থীরা। তখনই অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিতে শোনা গেল আদালতকে। প্রয়োজনে SSC-র সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলেরও পূর্বাভাস দিল কলকাতা হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ। 


দু'টি বিকল্পের কথা উল্লেখ করলেন বিচারপতি দেবাংশু বসাক। প্রথমত, দুর্নীতি (Recruitment Scam Case) প্রমাণিত হলে বাতিল করা হতে পারে সম্পূর্ণ নিয়োগ। অথবা বাতিল করা হতে পারে গোটা নিয়োগের অংশবিশেষ।


বুধবার, SSC-দুর্নীতি মামলার প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে বিচারপতি দেবাংশু বসাক বলেন,'পিছনের দরজা দিয়ে চাকরি পেলে কী করা উচিত? পদ ভরাতে হবে বলে অযোগ্যদের নিয়োগ কেন? ৫-১০ হাজার ব্যক্তির ভবিষ্যতের থেকে দেশের ভবিষ্যৎ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সবটা অবৈধ হলে পরিণতি যা হওয়ার তাই হবে।' 


বুধবার, হাইকোর্টে স্কুল সার্ভিস (School Service Commission) কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিতর্কিত চাকরিপ্রাপকদের আইনজীবী জয়ন্ত মিত্র। তিনি সওয়ালে বলেন, 'স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফ থেকে আদালতের সামনে সব কথা বলা হচ্ছে না। কমিশনের কারা কারা এই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত সেটা প্রকাশ্যে আনা হোক। OMR-এর মূল্যায়ন, OMR স্ক্যান করার বরাত কাকে কীভাবে দেওয়া হয়েছিল সেটা স্পষ্ট করা হোক।'


এরপরই বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চের তরফে বলা হয়, 'কমিশনকে বিশ্বাস করতে না পারলে তো গোটা নিয়োগই বাতিল করা উচিত।'


'২৩ লক্ষ চাকরিপ্রার্থীর কী দোষ? শুধু স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ প্রক্রিয়া চেয়েছিলেন। যাঁরা ৫ বছর ধরে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করলেন, তাঁদের কী হবে?' প্রশ্ন করেন বিতর্কিত চাকরিপ্রাপকদের আইনজীবী। তখনই বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য...'অযোগ্য ব্যক্তিরা কী শেখাবেন? যদি সবটা অবৈধ হয়, তাহলে যা পরিণতি, তাই হবে'। ৫ বা ১০ হাজারের ভবিষ্যতের থেকে দেশের ভবিষ্যত কী হবে সেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলেও মন্তব্য করে কলকাতা হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ। 


বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, 'এই প্যানেলের মধ্যে সামান্য কিছু হলেও কিছু পরীক্ষার্থী ছিলেন, যাঁরা মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ পেয়েছিলেন। তাঁদের সংখ্যা অত্যন্ত কম। কিন্তু পুরো প্যানেল যদি বাতিল হয়ে যায়, যদিও এছাড়া আর কোনও পথ খোলা নেই বোঝা যাচ্ছে, তাহলে তাঁরাও তো প্রতারিত হবেন। সুতরাং কমিশনকে এগিয়ে আসতে হবে, আদালতকেও বিষয়টা দেখতে হবে। যাতে নিরপেক্ষ কাউকে দিয়ে পুরো প্যানেলটাকে চেক করানো যায়।'


তৃণমূলের রাজ্য সহ সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, 'অনেকদিন তদন্ত হচ্ছে, সেই তদন্তে কেন দোষী পাওয়া যাচ্ছে না, কেন প্রমাণিত হচ্ছে না, তার দায়দায়িত্ব তো নিতে হবে, তদন্তকারী সংস্থা এবং বিচারবিভাগকে, কী করছেন তাঁরা? তা না বলে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এইরকম ন্যারেটিভ তৈরি করা, এটা বোধ হয় বিচারবিভাগকে আর মানাচ্ছে না।' বৃহস্পতিবার SSC মামলার (SSC Scam) পরবর্তী শুনানি।


আরও পড়ুন: দ্বিতীয় প্রার্থীতালিকা প্রকাশ বিজেপির, রয়েছে হেভিওয়েট নাম! কার ভাগ্যে শিকে ছিড়ল?