ঝিলম করঞ্জাই, কলকাতা: এক, দু’-কেজি নয়, জটিল অস্ত্রোপচার (Critical Surgery) করে এক মহিলার শরীর থেকে ১০ কেজি ২৮ গ্রাম ওজনের টিউমার (Huge Tumour) বার করে উঠলেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকেরা। প্রায় দু’ঘণ্টার ওই অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। রোগিনী আপাতত স্থিতিশীল। তাঁকে রোগমুক্ত দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন পরিবারের লোকজনও।
মাস দুয়েক আগের ঘটনা। বাস থেকে নামার সময় ডান স্তনে আঘাত পান এক মহিলা। তার কিছু সময় পর স্তনের উপর ছোট একটি টিউমার গজিয়ে উঠতে দেখেন তিনি। প্রথমে এ নিয়ে উদ্বিগ্ন না হলেও, যত সময় যেতে শুরু করে, ততই আয়তনে বাড়তে থাকে ওই টিউমার। পাশাপাশি অস্বাভাবিক ভাবে কমে যেতে থাকে রক্তে শর্করারও মাত্রাও (হাইপারগ্লাইসিমিয়া)।
শুরুতে ছুরি-কাঁচির নীচে যাওয়ার আগে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা কাজ করে কি না দেখতে চেয়েছিলেন ওই মহিলা। সেই মতো হোমিওপ্যাথি ওষুধ খেতে শুরু করেন। কিন্তু তাতে পরিস্থিতি তো শোধরায়ইনি, বরং তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে।
এমন পরিস্থিতিতে শহরের বিশিষ্ট চিকিৎসক তথা মেডিক্যাল কলেজের ব্রেস্ট অ্যান্ড এন্ডোক্রিন সার্জারি ক্লিনিক অ্যান্ড সার্ভিসেস-এর অস্ত্রোপচার বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ধৃতিমান মৈত্রর দ্বারস্থ হন ওই মহিলার পরিবার। প্রথমে শুধুমাত্র কোর বায়োপসি রিপোর্ট করানো ছিল রোগিনীর। ধৃতিমান মৈত্র ওই মহিলাকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (Calcutta Medical College and Hospital) ব্রেস্ট অ্যান্ড এন্ডোক্রিন সার্জারি বিভাগে।
ধৃতিমান মৈত্রের সন্দেহ ছিল যে, ওই মহিলা স্তনের ‘ফিলোডস টিউমার’ এর পাশাপাশি অগ্ন্যাশয়েপ বিরল টিউমার ‘ইন্সুলিনমা’ থাকতে পারে। এর জন্যই বার বার রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। সেই মতো রোগিনীকে ভর্তি করে শুরু হয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা। রক্তে ইনসুলিন, সি পেপটাইজ মেপে, সিটি স্ক্যান করে এবং রক্ত পরীক্ষা করে বোঝা যায়, ‘ইন্সুলিনমা’ নেই রোগিনীর। বরং তার চেয়েও বিরল রোগ বাসা বেঁধে তাঁর শরীরে, স্তনের টিউমার থেকে নিঃসৃত আইউসিএফ-২ নামের এক পদার্থ, যা কি না রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে দিচ্ছে।
সব কিছু পর্যালোচনা করে শেষ পর্যন্ত অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন ধৃতিমান মৈত্র। দু’ঘণ্টার চেষ্টায় কেটে বাদ দেওয়া হয় বিশালাকার সেই টিউমার। ওজন করে দেখা যায় সেটির ওজন ১0.২৮ কেজি। এই জটিল অস্ত্রোপচারে ধৃতিমান মৈত্রকে সাহায্য করেন চিতিৎসক শতক্রতু বর্মন, অন্তরীপ ভট্টাচার্য এবং শুভ রায়। অস্ত্রোপচারের পর রোগিনী আপাতত স্থিতিশীল। তাঁর পরিবার পরিজনরা ধন্যবাদ জানিয়েছেন মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকেদের।