সৌভিক মজুমদার, কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, রঞ্জিত সাউ, কলকাতা: কসবা গণধর্ষণকাণ্ডে রাজ্য়জুড়ে তোলপাড়। এই প্রেক্ষিতে, ছাত্র ভোট না হওয়া, ইউনিয়নগুলোতে তালা মেরে দেওয়ার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। হাইকোর্টের নির্দেশের পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তদারকি ২ ডেপুটি রেজিস্ট্রারের। ইতিমধ্যেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধ ইউনিয়ন রুম।
আরও পড়ুন, হাইকোর্টের দ্বারস্থ তামান্নার মা, 'মুখ্যমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করুন, কেন আমাকে এতদূর আসতে হয়েছে ?'
আজ বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি স্মিতা দাস দে-র বেঞ্চ নির্দেশ দিল, যেখানে ছাত্র ভোট হয়নি, সেখানেই ইউনিয়ন রুম বন্ধ রাখতে হবে। হাইকোর্ট আরও নির্দেশ দিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের অনুমতি ছাড়া ছাত্র সংসদের ঘর খোলা যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের অনুমতি ছাড়া ছাত্র সংসদের ঘর খোলা যাবে না। হাইকোর্টের এই নির্দেশকে হাতিয়ার করে সুর চড়িয়েছে বিরোধীরা।
অবৈধ ইউনিয়ন রুমগুলোর মাধ্যমেই ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে অপরাধচক্র। কটাক্ষ SFI-এর রাজ্য সম্পাদক দেবাঞ্জন দে-র। ইউনিয়ন রুমে তৃণমূলের স্বঘোষিত ছাত্র নেতারা, তাঁরা দাদাগিরি করছে, পয়সা কামাচ্ছে। যদিও TMCP -র রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্যর দাবি - ইউনিয়ন রুম কখনও রাজনৈতিক দলের হয় না। একটা ইউনিয়ন রুম একটা সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য হয় এবং সেটা তারাই নিয়ন্ত্রণ করে। আর এই প্রেক্ষাপটেই আদালতের নির্দেশের পর পাটুলির কে কে দাস কলেজে ইউনিয়ন রুম বন্ধ করে দেওয়া হল। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলিতে সে কাজ আগেই করা হয়েছে বলে জানালেন অন্তর্বর্তী উপাচার্য শান্তা দত্ত দে। তাঁর কথায়, 'আমরা আগেই করেছি। আমাদের আইনজীবী ছিল, বাকি কলেজগুলো কী করছে, হাইকোর্টে অর্ডার দিয়েছে। শতাধিক কলেজগুলো কী করছে।'
প্রায় ৮ বছর ধরে রাজ্যের কলেজগুলোতে ছাত্র ভোট হয়নি। কিন্তু কলেজে কলেজে খোলাই থেকেছে ইউনিয়ন রুম। অভিযোগ, দাপিয়ে বেড়িয়েছেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা-নেত্রীরা!বহু প্রভাবশালী প্রাক্তনীই রাজনৈতিক মদতে কলেজে ঢুকছেন-বেরোচ্ছেন। মৌরসীপাট্টা চালাচ্ছেন। ছাত্র ইউনিয়ের জন্য় বরাদ্দ হাজার হাজার টাকা নয়ছয়ের পাশাপাশি ইউনিয়ন রুমে অবৈধ কার্যকলাপ চালানোরও ভুরি ভুরি অভিযোগ উঠেছে। এই আবহেই শেষ অবধি তৎপর হতে হল সেই কলকাতা হাইকোর্টকে!
যেখানে ভোট হয়নি, সেখানেই কলেজের ইউনিয়ম রুমে ঝোলাতে হবে তালা, স্পষ্ট নির্দেশ দিল আদালত। বিচারপতি সৌমেন সেন, এবং বিচারপতি স্মিতা দাস দে-র বেঞ্চ নির্দেশ দিল,যেখানে ছাত্র ভোট হয়নি, সেখানেই ইউনিয়ন রুম বন্ধ রাখতে হবে। SFI এর রাজ্য সম্পাদক দেবাঞ্জন দে বলেন, এই অবৈধ ইউনিয়ন রুমগুলোর মাধ্যমেই ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে অপরাধচক্র, ক্রাইম সিন্ডিকেট পরিচালনা করে এসেছে তৃণমূল। হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, যেখানে ছাত্র ভোট হয়নি, সেখানে ইউনিয়ন রুম বন্ধ রাখতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের অনুমতি ছাড়া ছাত্র সংসদের ঘর খোলা যাবে না। মামলাকারী আইনজীবী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আজ থেকে গোটা রাজ্যে কোনও অবৈধ ছাত্র ইউনিয়ন অফিস খোলা থাকবে না। ওখানে লেখা নেই, পরবর্তী আদেশ না হওয়া পর্যন্ত। কিন্তু, যে মামলার সঙ্গে ট্যাগ করা হয়েছে, সেই মামলা ছাত্র ভোট করানোর মামলা। ফলে, সেখান থেকে আমরা ধরে নিতে পারি, যতদিন না ছাত্র ভোট হচ্ছে, ততদিন অবধি এই নির্দেশিকা জারি থাকবে।
কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা সুকান্ত মজুমদার বলেন, নির্বাচন যেখানে হয় না বা হয়নি এখনও স্বাভাবিকভাবে সেখানে কোনও ইউনিয়ন রুম থাকার কথা নয়। সেখানে তৃণমূলের স্বঘোষিত ছাত্র নেতারা, তাঁরা দাদাগিরি করছে, পয়সা কামাচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে রাজ্য়ে ছাত্র সংসদের ভোট হয় না। ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে কী ভাবা হচ্ছে? হাইকোর্টের এই প্রশ্নের মুখেও বৃহস্পতিবার পড়তে হয়েছে রাজ্য সরকারকে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য বলেন, একটা ইউনিয়ন রুম কখনও রাজনৈতিক দলের হয় না। একটা ইউনিয়ন রুম একটা সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য হয় এবং সেটা তারাই নিয়ন্ত্রণ করে। আজ একটা ইউনিয়ন রুম থেকে একটা সাধারণ ছাত্রের বিভিন্নরকম কাজ হয়।' কলকাতা হাইকোর্টের কড়া নির্দেশের পরই কলেজে কলেজে ইউনিয়ন রুমে তালা ঝোলানো শুরু হয়েছে।