কলকাতা: ২৮ অগাস্ট তৃণমূল ছাত্র পরিষেদের-র প্রতিষ্ঠা দিবসে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত করা নিয়ে হাজার তর্ক-বিতর্কের মধ্যে বারবার সামনে এসেছে একটি নাম, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য শান্তা দত্ত দে। উচ্চ-শিক্ষাদফতর পরীক্ষার দিন বদল করার আবেদন এলেও তা নাকচ করেছেন, বরং পরীক্ষার দিনেই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বশাসন অধিকারকে স্থান দিয়েছেন। এরপরও অবশ্য বিতর্ক থামেনি। তাঁর বিরুদ্ধে কদর্য আক্রমণ শানিয়েছেন TMCP নেতা। এবিপি আনন্দ-র যুক্তি তক্কো অনুষ্ঠানে এসে নেপালে জেন-জি'র আন্দোলন, সরকার পতনের ইস্যুতে একাধিক বিষয় তুলে ধরলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য শান্তা দত্ত দে।
এই অনুষ্ঠানের বিষয় ছিল- ''দুর্নীতি আর স্বজনপোষণ/ মাত্রা যদি ছাড়ায়,/ নেপাল দেখাল, জনতা ক্ষেপলে/ কীভাবে শাসক তাড়ায়!''- এ প্রসঙ্গে নিজের বক্তব্যর শুরুতে শান্তা দত্ত দে বলেন, 'পৃথিবীর নানা দেশের ইতিহাস লড়াইয়ের ইতিহাসকে দেখিয়েছিল। বলশেভিক বিপ্লব, ভিয়েতনামের গণজাগরণ, কম্বোডিয়ার আন্দোলন আমাদের দেশে নীল বিদ্রোহ, সন্ন্যাস বিদ্রোহ, সিপাহী বিদ্রোহ। দেখেছি বিপ্লব কখনও শান্তিপূর্ণ হতে পারে না।'
পরবর্তীতে আজকের সমাজ ব্যবস্থার প্রেক্ষাপট নিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্যর বক্তব্য, 'দেশব্যাপী সারা সমাজব্যবস্থা জনবিরোধী সমাজব্যবস্থা হয়ে উঠেছে। শুধু বাংলার কথা নয়। স্বজনপোষণ আগেও ছিল। এখন কেবল নখদন্ত বেরিয়ে পড়েছে। বারবার খর্ব হচ্ছে নাগরিক অধিকার। স্বাধীনতার পর থেকে কেউ কোনওদিন দেখেছে এভাবে যোগ্য শিক্ষকদের চাকরি যাওয়ার ঘটনা? এখানেও তো সেই স্বজনপোষণ দুর্নীতি। কতবড় বিপর্যয়। এরপর যদি কোনও বিদ্রোহ বা বিপ্লব হয়, যদি উগ্র বলপ্রয়োগের জায়গায় চলে যায়। যদি সব ভাঙচুর করে হলে অপরাধ কি তাঁদের হবে? যেখানে আর জি কর-এ ডিউটিরত চিকিৎসক প্রাতিষ্ঠানিক খুন হয়, সঠিক কিনারা হয়নি। এখানে বাঁচার পরিবেশ নেই। শাসক বলুন, শোষক বলুন গণবিদ্রোহের কারণ তারাই। তাঁদের কাজ, দুর্নীতি, অনিয়মই তো প্ররোচিত করছে জনতাকে আন্দোলনের পথে যেতে। তাই অপরাধ তো ছাত্রছাত্রীদের নয়।'
এরপরই তাঁর কথায় উঠে আসে TMCP-এর প্রতিষ্ঠা দিবসে পরীক্ষা আয়োজনের বিষয়টি। শান্তা দত্ত দে'র কথায়, 'আমি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বশাসন অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বিশেষ বিশেষ মানুষের দ্বারা সমালোচিত হয়েছি। আমাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করার চেষ্টা করা হয়েছিল। আমি সেই মানুষ নই, যাকে এত সহজে ভেঙে ফেলা যায়। কারণ আমি জানি এর থেকে অনেক অনেক বেশি লড়াই করেছে আমাদেরই দেশের মানুষরা।'
অনুষ্ঠানে সব শেষে পড়ুয়া-শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'অন্ধকারময় ভবিষ্যত থেকে বেরিয়ে আসতে নিজেদের মানসিকভাবে দৃঢ় করো, শক্ত করো। কারণ তোমাদের সামনের দিনগুলি সত্যিই অন্ধকারাচ্ছন্ন।'
ভিডিওটি দেখুন-