কলকাতা: টাকার বিনিময়ে সংসদে আদানিদের নিয়ে প্রশ্ন তোলার অভিযোগ। সেই নিয়ে সংসদের নীতি কমিটিতে হাজিরা দেওয়ার কথা তাঁর। তার আগে এবিপি আনন্দের মুখোমুখি হয়ে বিজেপি-কে তীব্র আক্রমণ করলেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র (Mahua Moitra)। জানালেন, শীতকালীন অধিবেশনে প্রশ্ন তোলা থেকে তাঁকে বিরত রাখাই লক্ষ্য বিজেপি-র। তাই মিথ্যা অভিযোগ নিয়ে কমিটিতে গিয়েছে। সাংসদ পদ খারিজ করানোই লক্ষ্য। (Cash for Query)


ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানির থেকে মোটা টাকা ঘুষ এবং দামি উপহারের বিনিময়ে মহুয়া সংসদে আদানিদের নিয়ে সরব হয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। মহুয়ার এককালের ঘনিষ্ঠ বন্ধু জয় অনন্ত দেহদ্রাইও বিষয়টি নিয়ে চিঠি লিখেছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে। ব্যবসায়ী হীরানন্দানি গোড়ায় অভিযোগ অস্বীকার করলেও, আদানিদের বিরুদ্ধে প্রশ্ন সাজাতে মহুয়া তাঁকে নিজের আইডি-পাসওয়ার্ড দিয়েছিলেন, তাঁর থেকে উপহার নিয়েছিলেন বলে হলফনামায় পরে দাবি করেছেন দর্শনও।


সেই আবহে আগামী ২ নভেম্বর মহুয়াকে তলব করেছে সংসদের নীতি কমিটি। তার আগে, এদিন এবিপি আনন্দের মুখোমুপখি হন মহুয়া। সেখানে তিনি বলেন, "যে কোনও ভাবে বিজেপি আমার মুখ বন্ধ করতে চায়। এক পয়সা নিয়েছি প্রমাণ থাকলে, বিজেপি এথিক্স কমিটিতে ডাকত না। এফআইআর করে সরাসরি জেলে ঢুকিয়ে দিত। নীতি কমিটিতে যাব ২ নভেম্বর। সব অভিযোগ খণ্ডন করব।"


আরও পড়ুন: Mahua Moitra: আদানিদের নিয়ে প্রশ্ন আটকানোই কি লক্ষ্য, সাংসদপদ কি খারিজ হবে তাঁর? মুখ খুললেন মহুয়া


মহুয়া এদিন আরও বলেন, "সমস্যাটা হল, বিজেপি ভাবে সবাই গাধা। সংসদে প্রশ্ন লিখে জমা দেওয়া যায়, আবার ওয়েবসাইটে আপলোডও করা যায়। সেখানে কোনও গোপন তথ্য থাকে না।  তথ্য জানার অধিকারে যা জানা যায়, এখানে.ও সেই তথ্যই মেলে। কোনও সাংসদই নিজের হাতে এসব করেন না। সহযোগীরা করে দেন। একটি বেসরকারি সংস্থাও রয়েছে PRS. কয়েক মাস অন্তরই নতুন ছেলেমেয়ে পাঠায়। তারা কোথা থেকে আসে, কোথায় থাকে, কেউ জানে না। এ নিয়ে নির্দিষ্ট কোনও নিয়ম নেই। বিষয়টি অত্যন্ত হাস্যকর। যেখানে বিরোধী সাংসদদের ফোন হ্য়াক হচ্ছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে তা করাচ্ছেন, সেখানে কে প্রশ্ন পাঠাল, সেটা বেশি জরুরি! আমাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু আগেই বলেছি, ভুল মানুষকে ধরেছেন।"


মহুয়া জানিয়েছেন, নিজের সংসদীয় ইমেল আইডি বা পাসওয়ার্ড কাউকে দেননি তিনি। সরকারকে প্রশ্ন করার যে পোর্টাল রয়েছে, তার আইডি-পাসওয়ার্ড দিয়েছিলেন। আর তিনি যদি কোনও অপরাধও করেন, এখানে নীতি কমিটির কিছু করার নেই বলেও জানান। মহুয়ার দাবি, তাঁকে শীতকালীন অধিবেশন থেকে বাইরে রাখতেই এত তৎপর বিজেপি। 


মহুয়া জানিয়েছেন, সাংসদ পদ খারিজের এক্তিয়ার নেই নীতি কমিটির। তারা সাংসদদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত, এই সংক্রান্ত নীতি-নিয়ম লেখে শুধু। গত আড়াই বছর ধরে সেই নিয়ে কোনও বৈঠকই করেনি নীতি কমিটি। ১৮-২০টি অভিযোগের তদন্ত আটকে পড়ে রয়েছে। বিজেপি-র সাংসদ রমেশ বিদুরিকে ডাকা হলেও, তিনি হাজিরা দেননি। অথচ তা নিয়ে কিছু করেনি নীতি কমিটি। তবে নীতি কমিটিতে বিজেপি-র সদস্য সংখ্যা বেশি। তাদের সাত এবং বিরোধীদের পাঁচ। তাই তারা বড় জোর মহুয়ার সাংসদপদ খারিজের সুপারিশ করতে পারে এবং সেটি স্পিকার লোকসভায় তুলতে পারেন বলে মন্তব্য করেছেন মহুয়া।


এদিন মহুয়া বলেন, "শীতকালীন অধিবেশনের জন্য আমরা প্রস্তুত। কী কী প্রশ্ন উঠবে, বুঝতে পেরেছে। তাতে ওদের মুখ বন্ধ হয়ে যাবে। সেখানে ওদের সদস্য সংখ্যা ৩০৩। তাই আমার সাংসদ পদ খারিজের প্রস্তাব পেশ হলে, সবাই সায় দেবে। তেমন হলে আর শীতকালীন অধিবেশনে অংশ নিতে পারব না আমি।  তার জন্যই এত চেষ্টা। কিন্তু এসব করতে গিয়ে ওরা আমাকে ঝাঁসির রানি বানিয়ে দিচ্ছে। অধিবেশনে না গেলেই কি চুপ থাকব আমি?"