প্রকাশ সিনহা, রঞ্জিত হালদার ও কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতি থেকে রাজনৈতিক হিংসা, গত কয়েক মাসে একের পর এক মামলা সিবিআই-এর (CBI) হাতে গিয়েছে। নাগরিক জীবনে তা নিয়ে শুরু হয়েছে রসিকতাও। পান থেকে চুন খসলে সিবিআই ডাকা হচ্ছে বলে উড়ে আসছে কটাক্ষ। কিন্তু আদৌ সিবিআই তদন্তে কোনও লাভ হচ্ছে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্নের অন্তঃ নেই। সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের (Kolkata High Court) বিচারপতিকেই তা নিয়ে স্বগতোক্তি করতে শোনা যায়। সিবিআই দিয়ে আদৌ কাজের কাজ হবে কিনা, সন্দেহ প্রকাশ করেন নিজেই। 


বছরের পর বছর ঝুলে একাধিক মামলা


তবে এই সন্দেহ যে অমূলক নয়, সারদা (Saradha Scam), রোজভ্যালি (Rose Valley) এবং নারদকাণ্ডেই (Narada Case) তা প্রমাণিত। কোনও ক্ষেত্রে আট বছর পেরিয়ে গিয়েছে, কোনও ক্ষেত্রে পাঁচ বছর। কিন্তু আজও চূড়ান্ত চার্জশিট জমা করতে পারেনি সিবিআই, ইডি-র মতো কেন্দ্রীয় সংস্থা। ২০১৪ সাল থেকে সারদা ও রোজভ্যালি মামলার তদন্ত চালাচ্ছে সিবিআই। নারদকাণ্ডে তদন্ত শুরুর পর পেরিয়ে গেছে পাঁচ বছর। কিন্তু এখনও কোনও মামলাতেই জমা পড়েনি চূড়ান্ত চার্জশিট। এই প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে, সারদা-রোজভ্যালি কি রাজনীতির ইস্যু হয়েই থেকে যাবে? প্রতারিতরা আর কত দিন যন্ত্রণা সহ্য করবেন?


সারদাকাণ্ডে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) গ্রেফতারির দাবিতে সম্প্রতি আন্দোলনে নেমেছে তৃণমূল (TMC)। পাল্টা নারদ, কয়লা পাচার-গরু পাচার থেকে ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস-সহ নানা মামলায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব বিজেপি (BJP)। কিন্তু এরই মধ্যে মূল প্রশ্ন হল, এই রাজনৈতিক বাগযুদ্ধ আর কতদিন চলবে? এই মামলাগুলোর সিবিআই তদন্ত কি কোনওদিন শেষ হবে না? প্রতারিতরা কি এভাবেই বছরের পর বছর যন্ত্রণা সহ্য করে যাবেন? আর এই ইস্যুগুলোকে হাতিয়ার করে শুধুই ভোটের লড়াইয়ে রাজনৈতিক দলগুলি ফায়দা তুলে যাবে?


আরও পড়ুন: Teacher Alleged in Wife Beating: স্বামীকে না ধরালে আত্মহত্যার হুমকি স্ত্রী-র, উত্তেজনা দাঁতনের স্কুলে


২০১৪ থেকে চলছে সিবিআই তদন্ত। আট বছর হয়ে গেল। সিবিআই সূত্রে খবর, সারদাকাণ্ডে এখনও অবধি সাতটি চার্জশিট জমা পড়েছে। দেড় বছর আগে CGO কমপ্লেক্স থেকে চূড়ান্ত চার্জশিটের একটা খসড়া দিল্লির সদর দফতরে পাঠানো হয়।  কিন্তু তারপর তা নিয়ে কোনও সবুজ সঙ্কেত আসেনি। 


সারদা মামলায় এখন শুধু সুদীপ্ত সেন এবং দেবযানী মুখোপাধ্যায় জেলবন্দি। বাকি সবাই জামিনে মুক্ত। একই হাল রোজভ্যালি মামলারও। ২০১৪ থেকে মামলার তদন্ত করছে CBI-ED। এই মামলার তদন্তেরও আট বছর হয়ে গেল। রোজভ্যালি-মামলায় সিবিআই চারটি এবং ইডি তিনটি চার্জশিট দিয়েছে।  চূড়ান্ত চার্জশিট এখনও জমা পড়েনি। এই মামলায় বর্তমানে জেলে রয়েছেন শুধু রোজভ্যালি কর্ণধার গৌতম কুণ্ডু এবং তাঁর স্ত্রী।


কবে বিচার পাবেন সাধারণ মানুষ!


২০১৬-র বিধানসভা ভোটের মুখে নারদের স্টিং অপারেশন বঙ্গ রাজনীতিতে ঝড় তুলেছিল। ২০১৭ সাল থেকে তদন্ত শুরু করেছে CBI-ED। বিগত পাঁচ বছর ধরে তদন্ত চলছে তো চলছেই। এখনও অবধি একটি চার্জশিট জমা দিয়েছে ইডি। একটি জমা দিয়েছে সিবিআইও। 


এই প্রেক্ষাপটে তাই প্রশ্ন উঠছে যে, এই মামলাগুলোয় কি কোনওদিন কোনও রাঘববোয়াল শাস্তি পাবে, না কি স্রেফ রাজনীতির চাপানউতোরের ইস্যু হয়েই থেকে যাবে কিনা।