প্রকাশ সিনহা, কলকাতা: যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করতে বলা হয়েছিল, তাঁদের কয়েকজনকে চার্জশিটে দেখানো হয়েছে সাক্ষী হিসেবে! আর এ নিয়েই প্রাথমিক দুর্নীতি মামলায় ফের একবার আদালতের ভর্ৎসনার মুখে পড়ল সিবিআই। গতকালই কুন্তল ঘোষ, তাপস মণ্ডল, নীলাদ্রি দাসদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছিল সিবিআই। যা নিয়ে এদিন প্রশ্ন তোলেন আলিপুর বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক।  


প্রাথমিকে দুর্নীতি মামলায় বৃহস্পতিবারই বহিষ্কৃত যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ, তাপস মণ্ডল ও OMR শিট মূল্যায়নকারী সংস্থা ভাইস প্রেসিডেন্ট নাইসার নীলাদ্রি দাসের বিরুদ্ধে ২০ পাতার চার্জশিট পেশ করেছিল সিবিআই। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেই চার্জশিট নিয়ে আদালতের তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়ল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। তদন্তকারী অফিসারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলল আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালত। এভাবে আদালতকে অপমান করা হচ্ছে, মন্তব্য করলেন বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক। 


বৃহস্পতিবার সিবিআইয়ের চার্জশিটে কুন্তল ঘোষ, তাপস মণ্ডল ও নীলাদ্রি দাসের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, প্রতারণা, জালিয়াতি এবং নথি জাল করা-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কারও বিরুদ্ধেই দুর্নীতিদমন আইনে কোনও ধারা দেওয়া হয়নি। যদিও ধৃতদের বিরুদ্ধে FIR রুজুর সময় দুর্নীতিদমন আইনে মামলা করা হয়েছিল। শুক্রবার শুনানির শুরুতেই এ নিয়ে প্রশ্ন তুলে আলিপুর বিশেষ আদালতের বিচারক সিবিআইয়ের আইনজীবীর উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, 'কেন আমি এই চার্জশিট গ্রহণ করব?এই চার্জশিট কি গ্রহণযোগ্য?' এদিন ২০১৪-র প্রাথমিক নিয়োগে দুর্নীতি মামলার তদন্তকারী অফিসারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলে আদালত। বিচারক বলেন, 'আপনার IO-কে জিজ্ঞেস করুন, আদালতের নির্দেশ তিনি মানেননি কেন?'


অতীতের শুনানির একটি তারিখ উল্লেখ করে বিচারক বলেন, ২০১৪ সালে প্রাথমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে যাঁরা টাকা দিয়ে চাকরি পেয়েছিলেন এবং এখনও চাকরি করছেন, তাঁদের বয়ান রেকর্ড করার আবেদন জানিয়েছিলেন তদন্তকারী অফিসার। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমি পরিষ্কার নির্দেশ দিয়েছিলাম সেইসমস্ত ব্যক্তিদের অভিযুক্ত হিসেবে দেখাতে হবে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করতে হবে। কিন্তু সেটা করা হয়নি। 


সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার সিবিআইয়ের চার্জশিটে ৬২ জন সাক্ষীর নাম রয়েছে। তার মধ্যে বেশ কয়েকজন এমন রয়েছেন, যাঁরা টাকা দিয়ে চাকরি পাওয়ায় অভিযুক্ত এবং এখনও চাকরিতে বহাল রয়েছেন। আর এতেই এদিন ক্ষুব্ধ হন বিচারক। তিনি বলেন, 'এভাবে তো আদালতকে অপমান করা হচ্ছে। এটাকে আমি আদালত অবমাননা হিসেবেই দেখছি। আপনার তদন্তকারী অফিসারের এত সাহস হয় কী করে?'


সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, এক ঘণ্টা সময় দেওয়া হোক। তিনি সিনিয়র অফিসারদের সঙ্গে কথা বলে জানাচ্ছেন। কিন্তু এদিন আর কোনও সময় দিতে রাজি হননি বিচারক। তিনি নির্দেশ দেন, পরবর্তী শুনানির দিন এই মামলায় যাবতীয় নথি নিয়ে হাজির থেকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে হবে সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসারকে। ৩০ মে এই মামলার পরবর্তী শুনানি। 


আরও পড়ুন: রাতভর ঘুম হয়নি! সকালে কাজে মন কীভাবে? রইল সহজ টিপস