প্রকাশ সিনহা, কলকাতা: গরুপাচার মামলায় BSF-এর পর এবার কাস্টমস অফিসারদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে সিবিআই। সূত্রে খবর, গত তিনদিনে শুল্ক দফতরের ২ জন আধিকারিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে আরও ২ কাস্টমস অফিসারকে তলব করেছে সিবিআই।


সূত্রের খবর, মুর্শিদাবাদে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় যাঁরা কর্মরত ছিলেন, মূলত তাঁদেরকেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এই সীমান্ত দিয়েই বাংলাদেশে বেশিরভাগ গরু পাচার হয়েছে বলে অভিযোগ। গরুপাচার মামলায় এর আগে BSF-এর আধিকারিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই। কয়লা পাচারকাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় CISF-এর আধিকারিকদের। এবার আরও এক কেন্দ্রীয় এজেন্সি সিবিআইয়ের নজরে। 


কীভাবে গরু পাচার হত? কোন রুটে পাচার হত গরু? কীভাবে চলত এই চোরা কারবার? এর আগে চার্জশিটে তা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছে ED। ইডি-র চার্জশিট অনুযায়ী, স্থানীয়-পুলিশ প্রশাসনের মদতে এবং BSF-এর যোগসাজশে বীরভূম থেকে মুর্শিদাবাদ হয়ে বাংলাদেশে পাচার হত গরু। চার্জশিটে দাবি করা হয়েছিল, ২০১৫ সাল থেকে কাস্টমসের নিলাম করা গরু কিনে নিতেন এনামুল হক এবং তাঁর দলবল। 


লালগোলা, ডোমকল, জঙ্গিপুরের পাশাপাশি ঔরঙ্গাবাদের কাস্টমস অফিস থেকে গরু কেনা হত। এর পাশাপাশি ইলামবাজার, পাইকর, সাগরদিঘি-সহ বিভিন্ন পশুহাট থেকে কেনা হত গরু। ED-র চার্জশিটে বলা হয়েছে, বীরভূম, মুর্শিদাবাদের পাশাপাশি উত্তর দিনাজপুরের পশু হাট থেকেও গরু কিনত এনামুল এবং তাঁর দলবল। চার্জশিটে আরও দাবি করা হয়েছে, বীরভূমের ইলামবাজারের পশুহাট থেকে গরু কেনার দায়িত্ব ছিল আব্দুল লতিফ ওরফে হিঙ্গলের ওপর। শুধু গরু কেনাই নয়, গরু নিয়ে যাওয়ার দায়িত্বও ছিল তাঁর উপরেই। 


বীরভূম থেকে লরিতে করে গরু পাঠানো হত মুর্শিদাবাদের ওমরপুরের 'সোনার বাংলা' অফিসে। এই 'সোনার বাংলা'র মালিক এনামুল হক। এছাড়াও, মুর্শিদাবাদের JHM ব্রাদার্সের অফিসেও গরু পাঠানো হত। এটাই ছিল গরু পাচারের সেন্টার। একেবারে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অফিস 'সোনার বাংলা'র। এই অফিসটি দেখভাল করতেন, পিন্টু হাজি ওরফে হুমায়ুন কবি। এই সিন্ডিকেটের সব চালক, যাঁরা গরু ভর্তি ট্রাক আনতেন, তাঁদের একটি 'প্যাড' অর্থাৎ টোকেন দেওয়া হত। যেটা দেখলে স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসন কিছু করত না।


কোন বর্ডার আউটপোস্টে যেতে হবে, মুর্শিদাবাদের নিমতিতা, খান্ডুয়া নাকি গিরিয়া? তা প্রত্যেক ট্রাক চালককে 'সোনার বাংলা' অফিস থেকে বলে দেওয়া হত। এরপর, স্থানীয় রাখালরা গরুগুলিকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিত। আর, BSF-এর অফিসারদের ম্যানেজ করত এনামুল ও তার সঙ্গীরা। গরুপাচার মামলায়, CBI-এর চার্জশিটেও নাম ছিল আব্দুল লতিফের।