ঝিলম করঞ্জাই ও সমীরণ পাল, ডায়ামন্ড হারবার: হাজার চেষ্টা করলেও, বাংলার মানুষকে ভাতে মারতে পারবে না কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বঞ্চনার অভিযোগে ফের মোদি সরকারকে নিশানা করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের দাবি, শীঘ্রই তিনি ১০০ দিনের  প্রকল্প থেকে বঞ্চিতদের সুরাহা করবেন। এদিকে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য নিয়ে পাল্টা কটাক্ষ করেছে বিজেপি। 


২০২৪-এর মহাযুদ্ধের প্রাক্কালে, প্রায় ৫৩ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট অধ্যুষিত ডায়মন্ড হারবারে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়বার ইচ্ছাপ্রকাশ করে, রাজনৈতিক আলোড়ন ফেলে দিয়েছেন ISF বিধায়ক নৌশাদ সিদ্দিকি। ঠিক এইরকম আবহে, ফলতার সভা থেকে, ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। নাম না করে নিশানা করেছেন ভাঙড়ের বিধায়ককে! পাশাপাশি কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বঞ্চনার অভিযোগকে হাতিয়ার করে বিঁধেছেন মোদি সরকারকে।


এ দিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমি আপনাদের বলছি, কেন্দ্র হাজার চেষ্টা করলেও, ডায়মন্ড হারবারের একটা লোককেও ভাতে মারতে পারবে না। আর আপনাদের টাকা আটকে রেখে, আপনাদের শিক্ষা দিতে যদি চায় কেন্দ্র, যতদিন আমি আছি, আমি এটা হতে দেব না। আমি কাজ করে দেখিয়েছি। আগামী দিনেও দেখাব। যদি ৭০ হাজার বয়োঃজ্যেষ্ঠ মহিলার বার্ধক্য ভাতার ব্যবস্থা আমি করতে পারি, তাহলে যারা ১০০ দিনের কাজে বঞ্চিত, তাদের ব্যবস্থাও আমি খুব শিগগিরই করব, আপনাদের কথা দিয়ে যাচ্ছি, নিশ্চিন্তে থাকুন


তাৎপর্যপূর্ণভাবে বার্ধক্য ভাতার মতো সরকারি প্রকল্পের প্রসঙ্গ তুলে ধরে, ডায়মন্ড হারবারবাসীর প্রতি নিজের কমিটমেন্ট মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। 


অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, সরকার যবে দেবে দেবে, আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি, আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী, ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের ১ থেকে ১.৫ লক্ষ সক্রিয় কর্মী রয়েছে। তাদের থেকে সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে, এই ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে যে ৭০ হাজার মহিলা নিজেদের নাম নথিভূক্ত করেছে, নতুন বছরের পয়লা জানুয়ারি থেকে আমাদের সীমাবদ্ধ সামর্থ্য অনুযায়ী, আর্থিক সহায়তা করে তাদের পাশে আমরা দাঁড়াব এবং প্রতি মাসে আর্থিক সাহায্য করব। তাদের সহযোগিতা করব। এটাই তো  জনপ্রতিনিধির কাজ।


সম্প্রতি, রেশন বণ্টনে দুর্নীতির অভিযোগে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে গ্রেফতার করেছে ইডি। তা নিয়ে তৃণমূলের অস্বস্তি তো রয়েইছে। এরই মধ্যে ছত্তীসগঢ়ে ভোট প্রচারে গিয়ে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও, আগামী ৫ বছর বিনামূল্যে রেশন বণ্টনের কথা ঘোষণা করেছেন। 


কোভিড পরিস্থিতির মধ্যে দেশজুড়ে বিনামূল্যে রেশন প্রকল্প চালু করে মোদি সরকার। এদিন ফলতার সভামঞ্চে, কোভিডের সময়কার পরিস্থিতিতে কীভাবে ডায়মন্ড হারবার লোকসভা এলাকায় তৃণমূলের নেতা ও কর্মীরা মানুষের পাশে থেকেছিলেন, সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।


২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে প্রায় ৫৭ শতাংশ ভোট পেয়ে ছিলেন। আর দ্বিতীয়স্থানে থাকা বিজেপি পেয়েছিল প্রায় ৩৪ শতাংশ ভোট। সবমিলিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়ের ব্যবধান ছিল প্রায় ৩ লক্ষ ২০ হাজারের বেশি।


শেষপর্যন্ত ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে ডায়মন্ড হারবারের মতো কেন্দ্রে, কোন দল, কী রণকৌশল নিয়ে এগোয়, নির্বাচন কতটা আকর্ষণীয় হয়, সেটাই দেখার বিষয়।