কলকাতা: বিশ্বভারতীর ফলক বিতর্কে এবার হস্তক্ষেপ কেন্দ্রীয় সরকারের। UNESCO হেরিটেজ ঘোষিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তদানীন্তন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর নামাঙ্কিত যে ফলক বসানো হয় বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে, সেটি পাল্টানোর নির্দেশ দেওয়া হল। কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রকের তরফে ফলক পাল্টানোর নির্দেশ এল। (Visva Bharati Plaque Row)


কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রকের তরফে চিঠি দিয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, বর্তমানে যে ফলক আছে তা পাল্টাতে হবে। তার পরিবর্তে বসাতে হবে নতুন ফলক, যাতে আচার্য তথা প্রধানমন্ত্রীর নাম থাকবে না। থাকবে না উপাচার্যের নামও। নতুন ফলকে কী লেখা হবে, তা ঠিক করতে কর্তৃপক্ষকে কমিটি গড়ার নির্দেশও দিয়েছে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রক। তবে ফলকে তিনটি প্রতীকচিহ্ন রাখতে হবে, প্রথমটি UNESCO-র, দ্বিতীয়টি দেশের জাতীয় প্রতীক এবং তৃতীয়টি বিশ্বভারতীর। শিক্ষামন্ত্রকের চিঠি পাওয়ার পরেই চার জন অধ্যাপককে নিয়ে কমিটি গড়েছে বিশ্বভারতী। (Visva Bharati University)


বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার কেন্দ্রের তরফে চিঠি দেওয়া হয় বিশ্বভারতীকে, তাতেই ফলক বিতর্কের অবসান ঘটেছে। পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, নতুন ফলক বসাতে হবে, যাতে আচার্য এবং উপচার্যের নাম থাকবে না।  লেখা ঠিক করে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রককে পাঠাতে হবে। সেটি অনুমোদিত হলে তবেই বসানো যাবে। দ্রুত এই নির্দেশ কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। তবে হিন্দি এবং ইংরেজি ভাষার ব্যবহার করতে বলা হয়েছে, বাংলা নয়। সেই নিয়ে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। ঠাকুর পরিবারের সদস্য, সুপ্রিয় ঠাকুর জানিয়েছেন, ফলকে বাংলা রাখার জন্য আবেদন জানাবেন তিনি।


আরও পড়ুন: Coochbehar News : বেআইনি বালি তোলার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গিয়ে দলীয় কর্মীদেরই বিক্ষোভের মুখে তৃণমূল নেতা


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাতে তৈরি বিশ্বভারতী এবছর UNESCO হেরিটেজের স্বীকৃতি পেয়েছে। বিশ্বভারতীর এই প্রাপ্তিতে বাঙালির বুক গর্বে ভরে গেলেও, সেই নিয়ে রাজনৈতিক তরজা শুরু হতে সময় লাগেনি।  বিশ্বভারতীর উপাসনা গৃহ, ছাতিমতলা এবং রবীন্দ্রভবনের উত্তরায়ণের সামনে বসানো শ্বেতপাথরের ফলককে ঘিরেই বিতর্কের সূত্রপাত। 


কারণ UNESCO হেরিটেজ হওয়ার পর বিশ্বভারতী চত্বরে যে ফলকগুলি বসানো হয়, তাতে UNESCO-র স্বীকৃতিপ্রাপ্তির কথা উল্লেখের পাশাপাশি, আচার্য হিসেবে প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং উপাচার্য হিসেবে বিদ্যুতের নাম লেখা হয়। কিন্তু যে রবীন্দ্রনাথ তিল তিল জমা করে বিশ্বভারতীকে দাঁড় করিয়েছিলেন, কোথাও তাঁর নামের উল্লেখ  নেই। 


বিষয়টি সামনে আসতেই তাই বিতর্ক শুরু হয়। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এর তীব্র নিন্দা করেন। ফলক পাল্টানোর দাবি নিয়ে, কবিগুরুর ছবি বুকে নিয়ে আন্দোলনের ডাক দেন। সেই মতো বিশ্বভারতীর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ধর্না, বিক্ষোভ শুরু হয়। তৃণমূলের নেতা-কর্মী এবং সমার্থকরা টানা দুই সপ্তাহ আন্দোলন করেন। তৃণমূলের পাশাপাশি, বাম এবং কংগ্রেসও প্রতিবাদে সরব হয়। এমনকি বিজেপি নেতা অনুপম হাজরাও বিদ্যুতের তীব্র সমালোচনা করেন। তার পরই বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করল কেন্দ্র।