বিজেন্দ্র সিংহ, নয়াদিল্লি: সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচয়, তারপর বিয়ে। আর সেই বিয়ের পরই গুপ্তচরবৃত্তির আশঙ্কা চন্দননগরের বসু পরিবারের। রাশিয়ান তরুণী চন্দননগরের বধূ ওই মহিলা ভিক্টোরিয়া জিগালিনার বিরুদ্ধে এবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলেন তাঁর স্বামী সৈকত বসু। অভিযোগ, তাঁদের সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছেন ভিক্টোরিয়া। 

প্রথমে সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচয়। সেখান বন্ধুত্ব হয়ে শেষ পর্যন্ত বিয়ে। ২০১৭ সালে রাশিয়ান বান্ধবীকে বিয়ে করেছিলেন হুগলির চন্দননগরের বাসিন্দা সৈকত বসু।  যুবকের দাবি, বিয়ের পর তিনি জানতে পারেন, তাঁর স্ত্রী ভিক্টোরিয়া রাশিয়ার এক প্রাক্তন গুপ্তচরের মেয়ে। এরপরই শুরু হয় অশান্তি। সৈকতের বাবা সমীর বসু প্রাক্তন নৌসেনা অফিসার। অভিযোগ, ভারতীয় সেনার সদর দফতরে বারবার যেতে চান ভিক্টোরিয়া। কিন্তু তাঁর পারিবারিক ইতিহাস জানার পর সাড়া দেয়নি বসু পরিবার। অভিযোগ এরপরই নানাভাবে ওই পরিবারকে বিপাকে ফেলার চেষ্টা করেন তরুণী।

সৈকতের অভিযোগ, "রাশিয়ান এক তরুণীর সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। ওঁর নাম ভিক্টোরিয়া জিগালিনা। কিন্তু ওঁর বাবা ছিলেন রাশিয়ান গুপ্তচর। যা বিয়ের পর আমি জানতে পারি। বিয়ের পর থেকেই চাপ দিতে থাকেন, ভারতীয় সেনার সদর দফতরে নিয়ে যেতে বলেন। কিন্তু ওঁর পরিবার সম্পর্কে জানার পর তাতে রাজি হইনি। আমাদের সন্তান হওয়ার আগে রাশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করেন ভিক্টোরিয়া। যাতে সন্তান রাশিয়ার নাগরিকত্ব পায়। করোনাকালে সন্তান হওয়ায় সেটা সম্ভব হয়নি। এমনকী সন্তানকে ব্যবহার করেও ভারতীয় সেনার সদর দফতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। আবার ওঁর কথায় আমরা পাত্তা দিইনি। এর বদলা নিতে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেন। ২০২৩ সালে ভিক্টোরিয়ার মা আসেন চন্দননগরে। এরপর চন্দননগরের বাড়িতে বাচ্চাকে ফেলে রেখে, ভিক্টোরিয়া এবং ওঁর মা মামলা সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করেন। কিন্তু আইনি লড়াইয়ে সন্তানকে রাশিয়া নিয়ে যেতে পারেনি। বেআইনিভাবে সন্তানকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।''

এখানেই শেষ সৈকতের অভিযোগ, এই বিষয়ে ওঁকে সাহায্য করছে রাশিয়ার দূতাবাস। এমনকী দূতাবাসের বিরুদ্ধে মামলা প্রভাবিত করার মতো অভিযোগও তুলেছেন তিনি। সৈকতের দাবি, "রাশিয়ার দূতাবাস ওঁকে সাহায্য করে। ভারতীয় সন্তানের জন্য রাশিয়ার পাসপোর্টেরও ব্যবস্থা করে দিয়েছে। যার জন্য আমাকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। আইনি লড়াইয়ে সন্তানকে দিনের ২০ ঘণ্টা বাবার কাছে ও ৪ ঘণ্টা মায়ের কাছে রাখতে হবে। সন্তানের উপরও অত্যাচার করা শুরু করে। ড্রাগ দিতে শুরু করে। কুকুর কামড়ালেও কোনও ভ্রুক্ষেপ করত না। ওঁর বিরুদ্ধে ১৩টা FIR দায়ের করেছি আমরা। যার মধ্যে একটা খুনের চেষ্টার অভিযোগও রয়েছে। ওঁর বিরুদ্ধে একাধিক প্রমাণ সহ সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছি। গত ২২ মে-র শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট রায় নির্দেশ দেন, সপ্তাহে তিন দিন ছেলে ভিক্টোরিয়ার কাছে এবং চার দিন আমার কাছে থাকবে। ওই তিন দিন পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হবে আমার সন্তানকে। যদিও কোনও পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হয়নি। এমনকী এই ১৩টা FIR-এর বিরুদ্ধে পুলিশ কোনও পদক্ষেপও নেয়নি। আমার সন্তানের অ্যাজ়মার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। কারণ ওকে ভিক্টোরিয়া গাঁজাও দিত। ডাক্তার দেখানো হলেও ঠিক সময় ওষুধ দিত না। ভিক্টোরিয়া এই গোটা বিষয়টাতে সাহায্য করার জন্য পাশে থেকে রাশিয়ার সরকার।  গত ৭ জুলাই থেকে আমার বাচ্চা আমার কাছে আর নেই। ভিক্টোরিয়া পালিয়ে গেছে। আমি ভিক্টোরিয়াকে ফলো করে জানতে পারি রাশিয়া দূতাবাসে ঢুকেছিল ব্যাগ নিয়ে। আমি বাচ্চাকে ফেরত পেতে চাই। এটা সুপ্রিম কোর্টের কাছে অনুরোধ যে কোনওভাবে আমার সন্তানকে ফিরিয়ে দেওয়া হোক।''