রাজীব চৌধুরী, মুর্শিদাবাদ: মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ বিধানসভার প্রত্যন্ত এক এলাকা মহব্বতপুরের পুঁটিমারি। সেখানেই একটি ছোট-ছাপোষা দালানবাড়ি। বুধবার সন্ধেয় চন্দ্রযান ৩ (Chandrayaan 3) যখন চাঁদের মাটির দিকে ক্রমশ এগোচ্ছে, সারা দেশ গভীর উৎকণ্ঠা চেপে সেই লাইভ স্ট্রিমিং দেখছে। তখন টিভির পর্দায় তাকিয়েছিলেন পুঁটিমারির 'নিজাম-মঞ্জিল'-এর বাসিন্দারাও। হয়তো বাকিদের থেকে একটু হলেও উৎকণ্ঠা বেশি ছিল তাঁদের। কারণ ইসরোর ওয়াররুমে বসে থাকা বিজ্ঞানীদের মধ্যে একজনও ওই পরিবারেরই সদস্য। তাঁর নাম তোসিকুল ওয়ারা (Tosicul Wara)। মহব্বতপুরের পুঁটিমারির কৃতি সন্তান তোসিকুল। চন্দ্রযান ৩-এর সাফল্য়ের উচ্ছ্বাস তাই একটু হলেও বেশি মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) এই প্রত্যন্ত গ্রামে।
কখনও রাজনৈতিক সংঘর্ষ আবার কখনও বোমা উদ্ধার, এমনই নানা কারণে বারবার খবরের শিরোনামে আসে মুর্শিদাবাদ। ফের খবরের শিরোনামে এল এই জেলা। তবে এবার সম্পূর্ণ অন্য কারণে। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ভারতের পদচিহ্ন ফেলার সঙ্গেই জড়িয়ে গেল মুর্শিদাবাদের নাম। এক মেধাবী সন্তানের কৃতিত্বে ফের মাথা উঁচু করল বাংলা তথা মুর্শিদাবাদ।
সামশেরগঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রাম মহব্বতপুর পুঁটিমারি থেকে ইসরো-র উড়ানে সওয়ার হওয়ার পথটা সহজ ছিল না। কিন্তু ছোট থেকেই মেধাবী তোসিকুলের চেষ্টার খামতিও ছিল না। সামশেরগঞ্জের ভাসাইপাইকর হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করেছেন তোসিকুল ওয়ারা। তারপর জঙ্গিপুর হাইস্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। বিজ্ঞান ভালবেসে বহরমপুর কেএন কলেজে পদার্থবিদ্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। গ্রাজুয়েশন শেষ করার পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ থেকে বি টেক এবং এম টেক পাশ করেন তিনি। একসময় সামশেরগঞ্জের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। ১৯৯১ সালে জুনিয়র সায়েন্টিস্ট হিসেবে ইসরো-য় যোগ দেন তোসিকুল। বর্তমানে ইসরো-র (ISRO) সিনিয়র প্রিন্সিপাল সায়েন্টিস্ট পদে কর্মরত সামশেরগঞ্জের ছেলে চন্দ্রযান ৩-এর গ্রাউন্ড চেকআউট ডিভিশনাল হেড।
গ্রামের ছেলের এই সাফল্য়ে উচ্ছ্বাস বাসিন্দাদের মধ্যেও। ইসরো-র বিজ্ঞানী তোসিকুল ওয়ারার দাদা রফিকুল ওয়ারা বলেন, 'দাদা হিসেবে আমি খুবই গর্বিত। আমার ভাই এতবড় অভিযানের সঙ্গে ছিল। মুর্শিদাবাদের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আমার ভাই ওখানে গিয়ে কৃতিত্ব দেখিয়েছে। ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে, ও এখন ব্যস্ত আছে, মেসেজে কথা হয়েছে।' বহরমপুরের একটি স্কুলের রসায়নের শিক্ষক তোসিকুলের এক ভাই সফিকুল ওয়ারা। তিনিও গর্বিত দাদার এই সাফল্যে।
আরও পড়ুন: গর্বের বঙ্গসন্তান! নৈহাটি গ্রাম থেকে ইসরো ছুঁয়ে চন্দ্রযান-৩ মিশনের ইঞ্জিনিয়ার মানস সরকার