আব্দুল ওয়াহাব, বসিরহাট: নৈহাটি গ্রাম থেকে ইসরোর দূরত্ব কি পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্বের চেয়েও বেশি? প্রশ্নটা অবান্তর বলে হতে পারে। কিন্তু নয়। বসিরহাটের নৈহাটি গ্রামের সরকার পরিবারের কাছে তো নয়-ই। কারণ তাঁদের ছেলে, মানস সরকার, এই গ্রাম থেকেই পৌঁছেছেন ইসরোয়। চন্দ্রযান-৩-এর সাফল্যের অন্যতম কারিগর তিনি। গত কালের পর থেকে তাই ফুরফুরে মেজাজ বসিরহাটের সরকার পরিবারে। 


মানস সম্পর্কে...
ইসরোর পদস্থ ইঞ্জিনিয়ার মানস সরকার শুধু চন্দ্রযান-৩ নয়, চন্দ্রযান-১ এবং চন্দ্রযান-২-এর সময়ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তবে গত কালের ব্যাপারটা ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। মানসের বাবা, শচীন্দ্রনাথ সরকার প্রাক্তন সেনাকর্মী। '৭১-এর যুদ্ধের স্মৃতি স্পষ্ট মনে রয়েছে তাঁর। কিন্তু বিহ্বল বৃদ্ধ মেনে নিলেন, '৭১-সালে যুদ্ধ জয়ে যে আনন্দ পেয়েছিলাম, তার থেকে বেশি আনন্দ ছেলের কৃতিত্বে পেলাম।' বাস্তবিক। একেবারে সাধারণ পরিবার থেকে নানা লড়াই করে ইসরো পৌঁছনো, সেখান থেকে চাঁদের মাটিতে দুরন্ত অভিযানের অন্যতম কারিগর হয়ে ওঠা, এ তো যে কোনও গল্পকথাকেও হার মানায়। ছেলের সাফল্যে আবেগ ধরে রাখতে পারলেন মা  রঞ্জিতা সরকার। গৃহবধূ তিনি। সাফল্যের এমন দিনে তাঁর মুখে ঘুরেফিরে এল, ছেলের লড়াইয়ের কথা। শচীন্দ্রনাথের সীমিত পেনশন। তার মধ্যে ছেলেকে ভাল জায়গার পড়াতে পারলেও মেধাবী মেয়ের জন্য সে ব্যবস্থা করতে পারেননি। সেই আক্ষেপ যাওয়ার নয়, তবু মানসের এমন সাফল্যে কিছুটা হয়তো ঢাকা পড়ে। 
বাড়ির বড় ছেলে, মানসের দাদা তাপস সরকারও অত্যন্ত গর্বিত। চাঁদে ল্যান্ডার 'বিক্রমের' সফল অবতরণ দেখে তাঁর মনে হল, জীবনের সেরা আনন্দ টের পেয়েছেন। তার পর ভাইয়ের সঙ্গে কথাও হয়েছে, জানালেন তাপস। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার টেলিম্যাট্রিক ট্রাকিং এবং কমান্ড নেটওয়ার্কের পদস্থ কর্তা মানস সরকার চন্দ্রযান–‌৩ মিশনে একজন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ইসরোর 'চন্দ্রজয়ে' তাঁরও সাধনার সাফল্য দেখছে পরিবার, বসিরহাট তথা গোটা বাংলা। 


হাঁটল 'প্রজ্ঞান'...
এদিকে এদিন সকালে রোভার 'প্রজ্ঞান'-এর সৌজন্যে চাঁদের মাটিতে একপ্রস্ত হাঁটাহাঁটি করে ফেলল ভারত। বৃহস্পতিবার সকালে এই খবর দিয়ে সোশ্য়াল মিডিয়ায় পোস্ট ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO-এর। তবে আপাতত এটুকুই। 'প্রজ্ঞান' কী দেখল, কী জানল, কী পেল তা বিশদ জানাতে 'more updates soon' বলে টানটান অ্যাডভেঞ্চার ধরে রাখলেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। যে অভিযানের দিকে নজর রেখেছিলেন তামাম ভারতবাসী, এবার তাঁরাই চোখ রাখছেন 'প্রজ্ঞান'-এর পরবর্তী কাজকর্মে। 


 


আরও পড়ুন:চন্দ্রাভিযানে জেলার জয়জয়াকার, প্রজ্ঞানের নেভিগেশন ক্যামেরা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন উত্তরপাড়ার জয়ন্ত লাহা