অর্ণব মুখোপাধ্যায়, সৌরভ বন্দোপাধ্যায়, হুগলি: চন্দ্রযান ৩-এর সাফল্যের সঙ্গে জড়াল হুগলির উত্তরপাড়ার নাম। এখানকার খেয়াঘাটের বাসিন্দা জয়ন্ত লাহা বর্তমানে ইসরোর বিজ্ঞানী হিসাবে কর্মরত। চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে বিক্রমের সফল অবতরণে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার এই সাফল্যের অন্যতম কারিগর তিনি।


ছোটবেলা থেকেই জয়ন্ত লাহাকে হাতছানি দিতে মহাকাশের গভীর রহস্য। ছোটবেলায় উত্তরপাড়ার গভর্নমেন্ট স্কুল থেকে পাস করার পর, প্রথমে শিবপুর বিই কলেজ, পরে খড়গপুর IIT থেকে ইলেকট্রনিক্স কমিউনিকেশন নিয়ে লেখাপড়া করেন তিনি। মহাকাশের প্রতি অদম্য আকর্ষণ থেকেই বিজ্ঞানী হিসাবে যোগ দেন ISRO-তে। চন্দ্রযান ২-এর সময় সাফল্য না আসলেও, অবশেষে চন্দ্রযান ৩-এ হাতের মুঠোয় ধরা দিল চাঁদ।


রোভার প্রজ্ঞান চাঁদের মাটিতে পরীক্ষানিরিক্ষা চালানোর সময় যে নেভিগেশন ক্যামেরার কাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তার অন্যতম ভূমিকায় রয়েছেন উত্তরপাড়ার ভূমিপুত্র এই বিজ্ঞানী। বিক্রমের অবতরণের পর জয়ন্ত লাহার ব্যস্ততা তাই আরও বেড়েছে। বিশ্বরেকর্ড গড়া ISRO-র এই কৃতী বিজ্ঞানীর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব না হলেও, ছেলের সাফল্যে গর্বিত বাবা-মা। জয়ন্ত লাহার পরিবারকে শুভেচ্ছা জানাতে বুধবার সাফল্যের মাহেন্দ্রক্ষণের পরেই তাঁর উত্তরপাড়ার বাড়িতে যান স্থানীয় পুরসভার চেয়ারম্যান দিলীপ যাদব।


ছেলের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত বাবা প্রশান্ত লাহাও। এবিপি আনন্দকে প্রশান্তবাবু বলছেন, 'যে কোনও কারণে, চন্দ্রযান ২-এর অভিযান সফল হয়নি। ছেলের সঙ্গে সঙ্গে আমারও ভীষণ মনখারাপ হয়েছিল। এই অভিযানে ওর কাজ ছিল মূলত নেভিগেশন ক্যামেরা নিয়ে। এত গুরুত্বপূর্ণ একটি মিশনে যুক্ত থাকায়, ছেলের সঙ্গে মোবাইল ফোনেও বেশি যোগাযোগ হত না।'


জয়ন্তকে নিয়ে আরও এক অজানা গল্প বললেন প্রশান্তবাবু। বললেন, 'ছোটবেলায় ছেলের পোলিও হয়েছিল। সেসময়ে ও কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিল। চিকিৎসকেরা ওকে পড়াশোনায় চাপ দিতে বারণ করেছিলেন। আমরাও তা মেনে চলতাম। জয়ন্ত ভীষণ গল্পের বই পড়তে ভালবাসে। এখনও সময় পেলে পড়ে। ছেলের সাফল্যে আমরা গর্বিত।'


এলাকার পুরপ্রধান দিলীপ যাদব বলেন, 'চন্দ্রযানের এই সাফল্যে বিজ্ঞানীদের যে টিম কাজ করেছে, তাদের অভিবাদন শুভেচ্ছা জানাচ্ছে গোটা দেশবাসী।আমরাও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। তবে আমাদের কাছে আরও গর্বের উত্তরপাড়া শহরের ছেলে, জয়ন্ত লাহা এই চন্দ্রযান মিশনের অন্যতম সদস্য। এমন একজন গর্বিত সন্তানের মা বাবাকেও আমি শুভেচ্ছা ধন্যবাদ জানাই।'


কেবল হুগলি নয়, 'চন্দ্রযান ৩' -এর গোটা অভিযানেই জেলার জয়জয়াকার। পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার উত্তর কাটাল গ্রামের ছেলে পীযূষকান্তি পট্টনায়ক। ইসরো-র বিজ্ঞানী চন্দ্রযান ৩-এর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে। গর্বিত বঙ্গসন্তান জানিয়েছেন, চন্দ্রযান ২-এর ব্যর্থতাই নতুন অভিযানের আশা জুগিয়েছে। ঘুরে দাঁড়িয়ে মিলেছে সাফল্য। ভবিষ্যতের গবেষণায় এই সাফল্য রসদ জোগাবে বলে মনে করছেন পাঁশকুড়ার প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে পীযূষকান্তি পট্টনায়ক।


অন্যদিকে, চন্দ্রযান ৩-র ক্যামেরার ডিজাইন করেছেন উত্তর দিনাজপুরের  ইসলামপুরের অনুজ নন্দী। স্বাভাবিক ভাবেই এদিন উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলামপুরের আশ্রমপাড়ার বাসিন্দা অনুজ নন্দীর বাড়িতে  খুশির হাওয়া ছড়িয়ে পড়ে। এই ঐতিহাসিক অভিযানের সঙ্গে নাম জুড়ে গিয়েছে জেলার ছেলের। পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে ইসলামপুর হাই স্কুলে  পড়াশোনা শেষ করার পর রায়গঞ্জ কলেজে বিজ্ঞান নিয়ে স্নাতক হন অনুজ। এরপরই আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে৷ বেঙ্গালুরুর ইসরোতে গত আট বছর ধরে কাজ করছেন এই বাঙালি বিজ্ঞানী। ছেলের কাজে গর্বিত কৃতী বিজ্ঞানীর মা সোমাদেবী আজ উচ্ছ্বসিত৷  আজ আমরা আমরা বাড়িতে বসেই টিভিতে চন্দ্রযানের সফল ল্যান্ডিং এর দৃশ্য দেখলাম। খুশি তার পরিবারও। 


ইসরোর সাফল্যে জুড়ে গিয়েছে আরও এক জেলার নাম। বীরভূমের মল্লারপুর। ইসরোর সিনিয়র বিজ্ঞানী বিজয় দাইয়ের বাড়ি মল্লারপুরেই।  ভারতের চাঁদ ছোঁয়ার মূহূর্তে গতকাল গোটা দেশের সঙ্গে টিভির পর্দায় চোখ ছিল বিজয় দাইয়ের বাবা-মায়ের। ছেলের সাফল্যে বাধ মানেনি চোখের জল। যাঁদের নিরলস চেষ্টায় সাফল্য পেল চন্দ্রযান, আগামী ১৪ দিন যেন সেই সাফল্য নিরবিচ্ছিন্ন থাকে, সেই কামনাই এখন সবার। 


আরও পড়ুন: Chandrayaan 2 Update: চাঁদের মাটিতে কোন খনিজ, আবহাওয়াই বা কেমন? দক্ষিণ মেরু থেকে উত্তর পাঠাবে রোভার 'প্রজ্ঞান'