আবির দত্ত, অর্ণব মুখোপাধ্যায়, বিটন চক্রবর্তী, কলকাতা: কুন্তলের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় নিয়মে বদল। হাসপাতালে গেলেন না নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত যুব তৃণমূল নেতা। উল্টে ইডি অফিসে এসে তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করল তিন সদস্যের চিকিৎসক দল। আর এই নিয়ম বদলে প্রশ্ন উঠেছে, কেমন আছেন কুন্তল? যদিও চিকিৎসকরা কেউই এবিষয়ে মুখ খুলতে চাননি। আর এসবের মধ্যেই কুন্তলকে নিয়ে রাজনৈতিক তরজা চরমে। 


নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে ধৃত হুগলির যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষের নানা দাবি ও অভিযোগ খতিয়ে দেখছে ইডি। চাকরি দেওয়ার নামে কারা কারা টাকা তুলেছেন? এই প্রশ্নের উত্তরে প্রায়ই নতুন নতুন নাম নিচ্ছেন হুগলির ধৃত যুব তৃণমূল নেতা, যা ধন্দে ফেলছে ইডি-র গোয়েন্দাদের। সূত্রের খবর, বিভিন্ন সময় কুন্তলের বিভিন্ন রকম বয়ান তদন্তকারীদের সামনে ধোঁয়াশা তৈরি করছে। এবার ধোঁয়াশা তৈরি হল যুবনেতার শারীরিক অবস্থা নিয়ে! 


নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ কেমন আছেন? তাঁর শারীরিক অবস্থা কী রকম? আর এই সংশয়ের নেপথ্যে রয়েছে রুটিনে ব্যতিক্রম। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গত ২১ জানুয়ারি, নিউটাউনের ফ্ল্যাট থেকে কুন্তল ঘোষকে গ্রেফতার করে ইডি। তারপর থেকে সিজিও কমপ্লেক্সে কেন্দ্রীয় সংস্থার হেফাজতেই রয়েছেন শাসকদলের যুব নেতা। 


আদালতের নির্দেশ, ইডি হেফাজতে থাকা কুন্তলের ৪৮ ঘণ্টা অন্তর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে।  সেইমতো প্রতিবার বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করায় ইডি। কিন্তু এদিন নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত যুব তৃণমূল নেতাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়নি। উল্টে বিধাননগর মহকুমা হাসপাতাল থেকে ৩ সদস্যের চিকিৎসক দল সিজিও কমপ্লেক্সে আসেন। কুন্তলের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সকাল সোয়া ১১টা নাগাদ আসেন চিকিৎসকরা। 


মিনিট ১৫ পর তাঁরা সিজিও কমপ্লেক্স থেকে বেরিয়ে যান। কুন্তলের শারীরিক অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, চিকিৎসকরা কোনও মন্তব্য করতে চাননি। কুন্তলের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় কেন নিয়মে বদল? কুন্তল কি হাসপাতালে যেতে চাননি?নাকি ইডি-র হেফাজতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি? 


উঠে আসতে থাকে এমন নানা প্রশ্ন। চাকরি দেওয়ার নামে প্রার্থীদের থেকে প্রায় সাড়ে ১৯ কোটি টাকা তুলেছেন কুন্তল ঘোষ।  হুগলির যুব তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি ও ধৃত তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যর ঘনিষ্ঠ তাপস মণ্ডল। কুন্তলের গ্রেফতারির পর, ব্যাঙ্কশাল আদালতে ইডির আইনজীবীও দাবি করেন, তদন্তে দেখা গেছে, ৩০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে! 


টাকা নিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন কুন্তল ঘোষ। এহেন যুব নেতার সঙ্গে যুব তৃণমূলের রাজ্য সভানেত্রী সায়নী ঘোষের ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। তা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কের পারদ চড়ছে। যুব তৃণমূলের রাজ্য সভানেত্রী সায়নী ঘোষ বলছেন, কুন্তল হুগলির যুব নেতা। ওর সঙ্গে ছবি আছে। যেখানে যাই সঙ্গে লক্ষ লক্ষ লোক যায়। তার মানে এই নয় যে ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট নিয়ে যাই। ইন্টেলিজেন্স দিয়ে হিস্ট্রি জিওগ্রাফি চেক করে তো কাজ করি না।


বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কথায়, যারা সাদা খাতা দিয়ে চাকরি পেয়েছে, যাদের চাকরি গিয়েছে, তাদের পরিবার কালীঘাটে যাবে মিছিল করে। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতারির এক সপ্তাহের মধ্যে প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছিল দল। কিন্তু গ্রেফতারির এক সপ্তাহ পরেও, কুন্তলের বিরুদ্ধে এখনও বহিষ্কারের পথে হাঁটেনি তৃণমূল। নিয়োগ দুর্নীতিতে কোটি কোটি টাকার খেলায় আসল মাথার নাগাল পেতে কুন্তল, শান্তনুর মতো শাসক-নেতার এজেন্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় ইডি।