প্রবীর চক্রবর্তী, কলকাতা: জলবণ্টন ইস্যুতে ক্রমেই বাড়ছে কেন্দ্র-রাজ্য জটিলতা। ১৯৯৬ সালের গঙ্গা জলবন্টন চুক্তির পুনর্নবীকরণের সিদ্ধান্ত নিয়ে যে অভিযোগ রাজ্যের তরফে করা হচ্ছে, তা নস্যাৎ করে পাল্টা বিবৃতি দিয়েছে কেন্দ্র। এদিকে নিজেদের অবস্থানেই অনড় রাজ্য় সরকার।


মুখ্য়মন্ত্রীর (Chief Minister Office) দফতরের উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'মিনিস্ট্রি অফ জলশক্তি, ভারত সরকারের মন্ত্রক, এই কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর, সেই মন্ত্রক পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে কোনও চিঠি দেননি।' ১৯৯৬ সালের গঙ্গা জলবণ্টন চুক্তির পুনর্নবীকরণের সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্রমশ বাড়ছে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত। 


বাংলাকে না জানিয়ে জলবণ্টন চুক্তি (Ganga Water Treaty) পুনর্নবীকরণের অভিযোগ তুলে, সোমবারই তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিও দিয়েছেন তিনি। আগেরদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'একদিকে কেন্দ্রীয় সরকার বাংলার জল বিক্রি করে দিচ্ছে। তিস্তায় ১৪ টা হাইড্রাল পাওয়ার হয়েছে তখন চোখে দেখেনি। ফরাক্কা নিয়ে আবার চুক্তি রিনিউয়াল হচ্ছে, আমাদের জানাল না!'


এরপরই কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, এই চুক্তি পুনর্নবীকরণের ক্ষেত্রে ভারতের কৌশল প্রণয়নের জন্য ২০২৩ সালের ২৪ জুলাই একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এই কমিটিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের চিফ ইঞ্জিনিয়ার পদমর্যাদার একজন প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পর্যালোচনা প্রক্রিয়ায় রাজ্যের বক্তব্য ও ভাবনাচিন্তাকে যে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, কমিটিতে রাজ্য সরকারের প্রতিনিধির অন্তর্ভুক্তি থেকেই তা স্পষ্ট। 


শুধু তাই নয়, রীতিমতো রাজ্য সরকারের প্রতিনিধির নাম উল্লেখ করে কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়, সেচ ও জলপথ নির্দেশনালয় ডিজাইন অ্যান্ড রিসার্চের চিফ ইঞ্জিনিয়র  মানস চক্রবর্তীকে সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে মনোনীত করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। তার সঙ্গে কেন্দ্রের তরফে এও বলা হয় যে, কেন্দ্রীয় জল কমিশনের কাছে আগামী ২৫ থেকে ৩০ বছরে পশ্চিমবঙ্গের জলের চাহিদা কত হবে, তার অনুমানও পেশ করা হয়। ২০২৪ সালের ৫ এপ্রিল কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রকের কাছে সেই তথ্য দেন সেচ ও জলপথ দফতরের যুগ্মসচিব বিপ্লব মুখোপাধ্যায়। মঙ্গলবার অবশ্য় কেন্দ্রীয় সরকারের এই দাবি নস্যাৎ করে দিয়েছে রাজ্য় সরকার।


মুখ্য়মন্ত্রীর দফতরের উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী ভারতবর্ষের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে যে সকল গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক জলবণ্টন সংক্রান্ত এবং রাজ্যের মানুষের অন্ন-বস্ত্র-সংস্থানের সঙ্গে যুক্ত নদীক্ষয়, নদীভাঙনজনিত যে সকল গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন, টেকনিক্যাল রিপোর্টে তার যে উল্লেখ নেই, তা ছাড়াও, ভারত সরকারের নীতি নির্ণায়ক ও নীতি নির্ধারক স্তরের কোনও কমিউনিকেশন কিছুভাবেই নেই এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইন্দো-বাংলাদেশ ট্রিটি বা সামগ্রিকভাবে ভারত-বাংলাদেশ জলবণ্টন ইস্যুকে নিয়ে। 


জলবণ্টন ইস্যুতে এই সংঘাতের জল এরপর কোন দিকে গড়ায়, সেটাই দেখার।


আরও পড়ুন: ডাম্পার আটকে তোলা হচ্ছে টাকা! সামনে দাঁড়িয়েও 'দেখতে পেল না' পুলিশ