রানা দাস, পূর্ব বর্ধমান: রাতের অন্ধকারের আড়ালে ট্রাকের পর ট্রাকে বালি পাচার। তা না আটকে তোলা হচ্ছে টাকা। সামনেই রয়েছেন পুলিশ অফিসার, কিন্তু তাঁর চোখে নাকি কিছুই পড়েনি। মুখ্যমন্ত্রীর কড়াবার্তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এই ছবি ধরা পড়ল কাটোয়ায়।


কী বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী?
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, 'গরু, কয়লা, পাথর, বালি সবথেকে বেশি খায় বিজেপি। টাকা যায় পুলিশের মাধ্য়মে। ওভারলোডিং ট্রাক থেকে যায়। আমাদের কিছু লোক আছে…যাতে ইডি-সিবিআই না ধরে।'


সোমবার বিকেলে কয়লা-বালি পাচার নিয়ে বিজেপির পাশাপাশি প্রশাসনের একাংশকে এইভাবে তীব্র ভর্ৎসনা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে, পুরনো ছবিই দেখা গেল পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া-কালনা রোডে। মুখ্যমন্ত্রীর কড়াবার্তার পরও একদিকে যেমন অবাধে চলছে বালি পাচার। অন্যদিকে, বালি বোঝাই ট্রাক থেকে আদায় করা হচ্ছে টাকা।


সোমবার রাত ১০টা ৪৫:
কাটোয়া-কালনা রোডের জাজিগ্রাম মোড়ে রাখা রয়েছে পুলিশের নাকা চেকিং লেখা গার্ডরেল। আর রাস্তা দিয়ে সারি দিয়ে যাচ্ছে বালি বোঝাই লরি, ডাম্পার। সেই সময়েই দেখা গেল সেই লরি, ডাম্পার দাঁড় করিয়ে টাকা নিচ্ছেন একজন। কিন্তু কেন টাকা নেওয়া হচ্ছে? কীসের টাকা? সেই প্রশ্ন করতেই দে দৌড়।


গরু, কয়লা, বালি পাচার নিয়ে বলতে গিয়ে প্রশাসনের একাংশেও কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার রাতে কাটোয়াতেও দেখা গেল, ঠিক যেখানে দাঁড়িয়ে টাকা নিচ্ছিলেন এই ব্যক্তি, তার সামান্য দূরেই দাঁড়িয়ে ছিল পুলিশের গাড়ি। ওই ঘটনার পরে পুলিশ আধিকারিককে প্রশ্ন করা হয়, সামনে দাঁড়িয়ে তিনি টাকা তুলতে দেখেছেন কি না। তখন সরাসরি অস্বীকার করেন ওই পুলিশকর্মী। তাঁর দাবি, এখানে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকলেও তিনি না কি কিছুই দেখেননি। 


কিন্তু কেন টাকা তোলা হচ্ছে বালি বোঝাই লরি-ডাম্পার থেকে? নির্দিষ্ট কিছু বলতে চাইলেন না এক ডাম্পার চালকও। দীর্ঘদিন ধরেই চরখিব্রিজের কাছে অজয়ের বাঁশতলা বালিঘাট থেকে অবৈধভাবে বালি তোলা হয়। এ কথা কারও অজানা নয়। তারপর সেই বালি রাতে লরি কিংবা ডাম্পারে করে কাটোয়া-কালনা রোড ধরে নদিয়ার নবদ্বীপের দিকে চলে যায়। 


কাটোয়ার BLRO জানিয়েছেন, কাটোয়ায় যে বালিঘাট রয়েছে, তার কোনওটির লাইসেন্স নেই। সেখানে অবৈধভাবে বালি তোলা হয়। কাটোয়া-কালনা সাংগঠনিক জেলা বিজেপি সভাপতি গোপাল চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, 'মুখ্যমন্ত্রী বলার পরও দেখা গেল পুলিশের সামনে দাঁড়িয়েই টাকা তোলা হচ্ছে। আসলে এরা মুখ্যমন্ত্রীকে মানে না। এখানে মাথায় তৃণমূল ও প্রশাসনের হাত রয়েছে বলেই অবৈধভাবে টাকা তোলা হয়েছে।' পূর্ব বর্ধমানের তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'কাটোয়াতে বালিঘাট নেই, বাইরে থেকে বালির গাড়ি এখান থেকে যায়। কিন্তু কারা টাকা তুলছে জানি না। যদি তুলে থাকে ভুল করছে, আমি এসপি, ডিএমকে জানাব।'


পুলিশের সামনেই বালি বোঝাই লরি থেকে তোলা হচ্ছে টাকা। অথচ কিছুই জানেন না পুলিশ আধিকারিক। তা কীভাবে সম্ভব? জেলার পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, বালি পাচারের বিষয়টি তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন। থানার যত বড়ই আধিকারিক হন কেন, বালি পাচারে সাহায্য় করার সঙ্গে কোনও পুলিশ যদি যুক্ত থাকেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


তবে এবারই প্রথম নয়, এর আগেও একাধিকবার অবৈধ বালি খাদান নিয়ে সরব হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।  বালি মাফিয়ার দৌরাত্ম্য ঠেকাতে, ২০২১ সালের জুলাই মাসে, ‘স্যান্ড মাইনিং পলিসি’র ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ২০২১ সালের ২২ জুলাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'বালি খনন নিয়ে অনেক অভিযোগ সামনে আসছে। স্যান্ড মাইনিং পলিসি ২০২১ এনেছি। স্থানীয় সম্পদ লুঠ করা যাবে না।' কিন্তু তারপরেও বদলায়নি কিছুই।


আরও পড়ুন: হলং অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত 'নস্টালজিয়া'! বাতাসে ভাসছে বহু প্রশ্ন! কতটা মিলল উত্তর?