সন্দীপ সরকার, সুকান্ত মুখোপাধ্য়ায় ও ঝিলম করঞ্জাই, কলকাতা : একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধনের তীব্র প্রতিবাদ করলেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। বললেন, বিহারে ৪০ লক্ষের বেশি লোকের নাম বাদ দিয়ে দিয়েছে। বাংলাতেও করতে চলেছে। যদি করে, তাহলে ঘেরাও কর্মসূচি করব। নাম কাটতে দেব না। বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায় বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে এরকম ইলেক্টোরাল রোল ডিভিশন হলে অন্তত ৩০ লক্ষ লোক বাদ যাবে। নির্বাচন কমিশন ও বিজেপির আঁতাঁতের অভিযোগেও সরব হয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। পাল্টা জবাব দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী।
আরও পড়ুন, নতুন পরীক্ষা বিধি নিয়ে এবার সুপ্রিম কোর্টে স্বস্তিতে রাজ্য সরকার ও স্কুল সার্ভিস কমিশন
একদিকে বাংলা-বাঙালি আবেগে শান, অন্য়দিকে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে জোরালভাবে সরব হতে এবং ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধনের কড়া প্রতিবাদ করতে দেখা গেল মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়কে। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বিহারে ৪০ লক্ষের বেশি লোকের নাম বাদ দিয়ে দিয়েছে। বাংলাতেও করতে চলেছে। যদি করে, তাহলে ঘেরাও কর্মসূচি করব। পুরো ঘেরাও হবে। পুরো আন্দোলন হবে। আমি নাম কাটতে দেব না। আমরা ডিটেনশন ক্যাম্পে ঢোকাতে দেব না। যারা বাইরে আছে আমরা তাদের ছাড়িয়ে নিয়ে এসেছি। আমরা কোর্ট কেস করে ছাড়িয়ে নিয়ে এসেছি। আর এই যে আপনার আইন, সেটা আমরা বাতিল করব। আমরা এটা বদল করব। আমরা এটা মানব না। আমরা এটা মানব না। আমরা এটা মানব না।
তমলুক বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, আমরা চাইব পশ্চিমবঙ্গে এরকম ইলেক্টোরাল রোল ডিভিশন হোক, হলে পরে অন্তত ৩০ লক্ষ লোক বাদ যাবে। আমরা দেখব জাল ভোটারে কতদিন ধরে কতজন...কতগুলো পার্টি, কতদিন ধরে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসতে পারে।' বিজেপি যখন বারবার দাবি করছে, পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন হলে লক্ষ লক্ষ অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশির নাম বাদ যাবে, তখন পাল্টা নির্বাচন কমিশন ও বিজেপির আঁতাতের অভিযোগে সরব হলেন! দাবি করলেন, ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে!
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বিজেপির চক্রান্ত তো চলছে। নির্বাচন কমিশনের ষড়যন্ত্র চলছে।এখানে নাকি ১৭ লক্ষ রোহিঙ্গা আছে। তাদের নাম নাকি ভোটার লিস্ট থেকে বাদ দিতে হবে। আমি জিজ্ঞেস করছি, সারা পৃথিবীতে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা কত? স্টাডি করে বলবেন তো! ইউনাইটেড নেশন লাস্ট জানিয়েছিল ১০ লক্ষ সারা পৃথিবীতে। এখন বড়জোর বেড়ে ওটা ১৩-১৪ হতে পারে। তো আপনি ১৭ লক্ষ রোহিঙ্গা পেলেন কোথায়? আর তারা তো মায়ানমারের লোক। সবাই রোহিঙ্গা? বাংলায় কথা বললে, বাংলা ভাষায় কথা বললে, আপনারা বেছে বেছে বলছেন, চুন চুন কে, কে হিন্দু, কে মুসলমান...। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, 'বিহারের মতো 'SIR' চাই। 'SIR' মানে কী? ..নিশ্চিন্ত থাকুন, ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণে যারা বাংলাদেশ থেকে হিন্দুরা এসেছেন, তাঁরা মোদিজির চোখে শরণার্থী, অনুপ্রবেশকারী নয়। এখানে ভারতীয় মুসলিমরা আছেন, আপনাদের কোনও চিন্তা নেই। এঁরাও রাষ্ট্রবাদী মুসলিম। আমরা আপনাদের সাথে আছি। কিন্তু রোহিঙ্গা মুসলমান, বাংলাদেশি মুসলমান, একটাকেও ভোটার তালিকায় থাকতে দেব না, দেব না, দেব না। সংবিধানকে আক্রমণ করছেন। নির্বাচন কমিশনকে আক্রমণ করছেন। রোহিঙ্গাদের সমর্থন করছেন। বাংলাদেশি মুসলমানদের সমর্থন করছেন। বাঙালিরা, ভারতীয়রা এটা মেনে নেবেন না। রোহিঙ্গা মুসলমান, বাংলাদেশি মুসলমান পশ্চিমবঙ্গে থেকে বাদ গেলে মমতার জেতার কোনও সুযোগ নেই।'
বিহারে ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধনী নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা খেয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। আগে তারা জানিয়েছিল, পরিচয়ের প্রমাণ হিসেবে আধার কার্ড, ভোটার কার্ড বা রেশন কার্ডের মতো নথি বিবেচিত হবে না। কিন্তু, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা পর্যবেক্ষণে পরিষ্কার জানান, তাঁদের মতে, এই নথিগুলিকে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে ২৮ জুলাই।