পার্থপ্রতিম ঘোষ, সমীরণ পাল ও ময়ূখ ঠাকুর চক্রবর্তী, কলকাতা: পার হয়ে গিয়েছে এক সপ্তাহ। শক্তিগড়ে কয়লা মাফিয়া খুনে এখনও অধরা আততায়ীরা। তার মধ্যেই আরও একটি প্রশ্ন মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। প্রশ্ন উঠছে, শক্তিগড় থেকে ওই দিন কোথায় যাচ্ছিলেন নিহত কয়লা মাফিয়া রাজু ঝা (Raju Jha Murder)? কলকাতা হয়ে রাজু দিল্লি যাচ্ছিলেন বলে খবর মিলেছে। কিন্তু বিগত সাত দিন ধরে বিস্তর কাটাছেঁড়ার পরও এখনও তা নিয়ে কাটেনি ধন্দ (Saktigarh Shootout)।
রাজুর সঙ্গীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে পেয়েছে পুলিশ।
রাজুর সঙ্গী ব্রতীন মুখোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে পেয়েছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, জিজ্ঞাসাবাদে ব্রতীন জানিয়েছেন, "ঘটনার গিন রাতে কলকাতার ফ্ল্যাটে আসার কথা ছিল রাজুর। আব্দুল লতিফও সেখানে আসবেন বলে কথা ছিল। পর দিন দিল্লি রওনা দেওয়ার কথা ছিল রাজু এবং লতিফের।" দিল্লিতে রাজু কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের সঙ্গে কথা বলতে যাচ্ছিলেন বলে সূত্র মারফত জানা গিয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য ও কয়লা মাফিয়া রাজুর সঙ্গী ব্রতীন মুখোপাধ্য়ায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, কলকাতাতেও রাজুর একটি ফ্ল্যাট ছিল। ইএম বাইপাসের ধারে 'সিলভার স্প্রিং' নামের অভিজাত আবাসনে। কলকাতায় এলে সেখানেই থাকতেন রাজু। গত শনিবারও সেখানে ওঠার কথা ছিল। কিন্তু আবাসনের নিরাপত্তারক্ষী বলেন, "আমরা জানি না। উনি খুন হওয়ার পর জানতে পারলাম এখানে থাকতেন বলে।"
এখানে প্রশ্ন উঠছে, রাজু এবং লতিফ একসঙ্গে কলকাতা আসার পরিকল্পনা কেন করেন? কলকাতা থেকে কি কোথাও যাওয়ার কথা ছিল তাঁদের?
পুলিশ সূত্রের খবর, ব্রতীনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে, পরের দিন অর্থাৎ ২ এপ্রিল দিল্লি যাওয়ার কথা ছিল তাঁদের। কিন্তু কেন?
পুলিশ সূত্রের খবর, জিজ্ঞাসাবাদে ব্রতীন জানিয়েছেন, কোনও কেন্দ্রীয় এজেন্সির সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল। যদিও কোনও নোটিস দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেব ব্রতীন।
আরও পড়ুন: Suvendu Adhikari: 'পুলিশ না থাকলে TMC-কে খুঁজে পাওয়া যাবে না', শুভেন্দুর নিশানায় কে এবার ?
পুলিশ সূত্রের খবর, কোন এজেন্সির সঙ্গে দেখা করার ছিল জিজ্ঞাসাবাদে তা বলতে পারেননি ব্রতীন। তবে রাজু খুনের তিন দিন আগে
গত ২৯ শে মার্চ, ইলামবাজারের পশুহাটের মালিক লতিফকে তলব করেছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। কেমোথেরাপি চলছে, তাই বাড়ি থেকে বেরোচ্ছেন না বলে, ED-র হাজিরা এড়ান গরুপাচারে অভিযুক্ত লতিফ। আগামী সপ্তাহে লতিফকে ফের তলব করেছে ED। প্রশ্ন উঠছে, লতিফকে ED-র তলব ও কোনও এজেন্সির সঙ্গে রাজুদের সাক্ষাৎ-সম্ভাবনার মধ্য়ে কি কোনও যোগসূত্র রয়েছে? কলকাতা পৌঁছোনোর আগেই কেন প্রফেশনাল শ্যুটারদের টার্গেট হলেন রাজু ঝা? কয়লা সিন্ডিকেট, ব্যবসায়িক শত্রুতা না কি রহস্য আরও গভীরে? কেনই বা খুনের পর উধাও হয়ে গেলেন লতিফ?
শনিবার ফের, লতিফের অন্তর্ধান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তৃণমূল নেতা তথা ব্য়ারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং। পাশাপাশি, তিনি বলেন, "রাজু ঝা-কে বদনাম করার চেষ্টা চলছে।" রাজুকে দরাজ সার্টিফিকেটও দেন অর্জুন। তাঁর কথায়, "রাজু ছোট ভাইয়ের মতো। বাড়ির লোক কিছুই জানতেন না। মাফিয়া মানে কী? মাফিয়া জেড প্লাস নিরাপত্তায় থাকে? একটা লোক মারা যাওয়ার পর তাঁকে বদনাম করার চেষ্টা চলছে। লতিফ ঘটনার সময় ছিল। পালিয়ে গিয়েছে। সন্দেহ তো তার উপর পড়বেই!"
কোন সংস্থার সঙ্গে কী বিষয়ে কথা বলতে যাচ্ছিলেন রাজু, তা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রাজুর খুন হওয়ার নেপথ্য কারণ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া রাজুকে একদিকে ভাল মানুষ বলে দরাজ সার্টিফিকেট দিয়েছেন বিজেপি-র দিলীপ ঘোষ এবং তৃণমূলের অর্জুন সিংহ। সেই আবহে সিপিএম-এর প্রশ্ন, "দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সংস্থার কাছে মুখ খুলতে যাচ্ছেন ভেবেই কি খুন করা হল রাজুকে?" বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষও প্রশ্ন তোলেন, "এত বড় ব্যবসায়ী খুন হলেন। কেউ গ্রেফতার হল না?"
কয়লা মাফিয়া রাজু খুনের দিনই রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী তথা তৃণমূল বিধায়ক বাবুল সুপ্রিয় ট্যুইটে চাঞ্চল্যকর দাবি করেছিলেন। তিনি লেখেন, 'রাজুরই হোটেলে বিজেপির বড় বড় নেতারা ব্যবহার করতেন। আর আমাকে বদনাম করার জন্য দুর্গাপুরের একটা রোড শো-তে আমার সব ব্যানারের নীচে সৌজন্যে রাজু ঝা, লেখানো হয়েছিল'। এমনকি রাজুকে বিজেপি-তে যোগদান করাতে দিলীপ গোষের উপস্থিতিতে 'ডিল' হয়েছিল বলেও দাবি করেন বাবুল।
রহস্যের সমাধান হবে কবে, কাটছে না অনিশ্চয়তা
এ নিয়ে সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্য বলেন, "পর দিন দিল্লি যাওয়ার কথা ছিল রাজুর। দিল্লি গিয়ে কিছু বললে কি কারও সমস্যা হত? আর উনি ভাল ব্যবসায়ী কিনা, দিলীপ এবং অর্জুনই ভাল বলতে পারবেন।" রাজু হত্যা নিয়ে রাজনৈতিক তরজা চলছেই। কিন্তু রহস্যের সমাধান হবে কবে, কাটছে না অনিশ্চয়তা।