কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, কলকাতা: রাজ্যজুড়ে শুরু হয়েছে স্নাতকস্তরে ভর্তি। ক্যাম্পাসে পড়ুয়াদের সশরীরে উপস্থিতির প্রয়োজন না থাকলেও, একাধিক কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে (College-University Admission) দেখা গেল ছাত্রনেতাদের তৎপরতা। ভর্তি হতে আগ্রহী পড়ুয়াদের সাহায্য করতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে (Jadavpur University) হেল্পডেস্কও (Help Desk) চালু হয়েছে। এর জেরে ভর্তির প্রথম দিনেই বিধিভঙ্গের অভিযোগ ঘিরে তুঙ্গে তরজা।
ভর্তি প্রক্রিয়ার প্রথম দিনই বিধিভঙ্গের অভিযোগ: সোমবার থেকে রাজ্যে শুরু হল স্নাতকস্তরে অনলাইনে ভর্তির প্রক্রিয়া। কিন্তু, প্রথম দিনেই উঠল বিধিভঙ্গের অভিযোগ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল, ক্যাম্পাসের মধ্যেই চেয়ার-টেবিল পেতে বসে আছেন ছাত্রনেতারা। ভর্তি হতে আসা পড়ুয়াদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে, প্রবেশিকার পুরনো প্রশ্নপত্র। অন্যদিকে, প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের যোগেশচন্দ্র চৌধুরী কলেজে, স্টুডেন্টস ইউনিয়ন রুমের বাইরে দেখা গেল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতাদের তৎপরতা।
উচ্চশিক্ষা দফতর বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আগেই জানিয়েছে, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে, স্নাতক স্তরে ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করা যাবে ৫ অগাস্ট পর্যন্ত। ভর্তি হওয়ার জন্য, ক্যাম্পাসে সশরীরে উপস্থিত থাকার কোনও প্রয়োজন নেই। তারপরও, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা গেল SFI ও আইসার হেল্পডেস্ক। অন্যদিকে যোগেশচন্দ্র চৌধুরী কলেজে, ইউনিয়ন রুমের আশপাশে দেখা গেল শাসকদলের ছাত্র নেতাদের আনাগোনা। যা মোটেই ভালভাবে নিচ্ছেন না কলেজ কর্তৃপক্ষও।
যোগেশচন্দ্র চৌধুরী কলেজের অধ্যক্ষ পঙ্কজ রায়ের কথায়, “সরকার বলেছে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যলয় বলেছে, তারপরও কেন ইউনিয়ন রুমে থাকবে? দেখা যাক কী হয়, এরপর কর্তৃপক্ষকে জানাব।’’ বিতর্কের মুখে অবশ্য ছাত্র নেতাদের কেউ বললেন পরীক্ষার্থীদের সাহায্য করার কথা, কেউ আবার ভর্তিতে আগ্রহী পড়ুয়াদের সহযোগিতার সাফাই দিলেন। ওই কলেজের টিএমসিপি ইউনিট সভাপতি রিয়া দেবনাথের বক্তব্য, “আমরা পরীক্ষা চলছে,পরীক্ষার্থীদের সাহায্য লাগে, তাদের জন্য বসেছি, ভর্তি হওয়ার জন্য তো কেউ আসছেন না। অনলাইনেই ভর্তি হচ্ছে।’’ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএফআই নেত্রী জুন গুহঠাকুরতা বলেন, “২ বছর পর অ্যাডমিশন টেস্ট হচ্ছে। তাই তাঁদের সাহায্য করতে এসেছি। জিজ্ঞাসা করলে বলছি। শেষ বছরের প্রশ্নপত্র দিচ্ছি, শুধু জেরক্সের দাম নিচ্ছি।’’
বিভিভঙ্গের অভিযোগ যেমন উঠেছে, তেমনি এদিন ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে দিল্লি বোর্ডের পরীক্ষার্থীদের উৎকণ্ঠাও ধরা পড়েছে। ভর্তির আবেদন শুরু হয়ে গেলেও, এখনও প্রকাশিত হয়নি CBSE’র দ্বাদশ ও ISC’র ফল। রেজাল্ট হাতে না পেলেও, ভর্তির খোঁজখবর নিতে সোজা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে এসেছিল, ক্যালকাটা পাবলিক স্কুলের ছাত্রী সপ্তশ্রী মণ্ডল। ওই ছাত্রীর কথায়, “আমাদের রেজাল্ট বেরোয়নি, কতদিন অপেক্ষা করব। এই ভাবে ঘুরছি, খোঁজ নিতে এসেছি।’’
রাজ্যে স্নাতকস্তরে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হবে ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। প্রথম সিমেস্টারের ক্লাস চালু হওয়ার কথা ১৯ সেপ্টেম্বর। কিন্তু সেই ভর্তি প্রক্রিয়ার পয়লা দিনেই উঠল বিধিভঙ্গের অভিযোগ। কেউ কেউ বলছেন, ক্যাম্পাসে ছাত্র সংগঠনের হেল্পডেস্ক বা ভর্তির সময় ছাত্রনেতাদের আনাগোনা থাকলে, নবাগত পড়ুয়াদের ভিড় বাড়বেই। যা দেখে শিক্ষাবিদদের একাংশ মনে করছেন, এই সমস্যার একমাত্র সমাধান কেন্দ্রীয়ভাবে অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া। যা চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েও, এবছরের মতো পিছিয়ে এসেছে রাজ্য সরকার।
আরও পড়ুন: West Burdwan News: বাঁধ ভাঙায় চরম সমস্যা, দ্রুত ব্যবস্থা নিক প্রশাসন, আর্জি কৃষকদের