কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, কলকাতা : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) জন্যই বাংলায় বিজেপির বাড়বাড়ন্ত। ভারত জোড়ো যাত্রার মাঝেই তৃণমূল নেত্রীকে নিশানা করলেন কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশ। বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ছে একমাত্র তৃণমূল (TMC)! গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে কংগ্রেস! পাল্টা আক্রমণ তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেনের।
মমতার মোদি স্তুতি ঘিরে কটাক্ষ
বিজেপিকে তুলোধনা। কিন্তু নরেন্দ্র মোদি সম্পর্কে ‘নরম সুর’। CBI-ED’র বিরুদ্ধে অতিসক্রিয়তার অভিযোগে চড়া সুর! কিন্তু, এই ইস্যুতে মোদিকে কার্যত ‘ক্লিনচিট’। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই অবস্থান সামনে আসার পর থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে নিজেদের কড়া অবস্থান দিনে দিনে স্পষ্ট করে দিচ্ছে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। এতদিন অধীর চৌধুরীর গলায় মমতা-মোদি আঁতাঁতের অভিযোগ শোনা যেত, এখন কংগ্রেসের (Congress) দিল্লি নেতৃত্বও সেই পথে হেঁটেই স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে।
‘বাংলায় বিজেপির বাড়বাড়ন্ত হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্যই’
রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রার অন্যতম কৌশলী ও কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়কে। তাঁর কটাক্ষ, 'কেরালায় রাজ্যপাল আর মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে যে টক্কর চলছে, তা সম্পূর্ণ লোক দেখানো লড়াই! কেরালায় সিপিএমের একটাই লক্ষ্য, বিজেপিকে শক্তিশালী করা আর কংগ্রেসকে দুর্বল করা! পশ্চিমবঙ্গে ঠিক সেই পন্থাই নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার জন্যই বাংলায় বিজেপির এত বাড়-বাড়ন্ত।'
সোমবার বিধানসভায় কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির বিরুদ্ধে অতি সক্রিয়তার অভিযোগে আনা তৃণমূলের প্রস্তাবের ওপর আলোচনা হয়। সেখানে তাৎপর্যপূর্ণভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সারা ভারতবর্ষ থেকে ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যাচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি না এটা (কেন্দ্রীয় এজেন্সির অতিসক্রিয়তা) নরেন্দ্র মোদি করেছেন। অনেকেই জানেন না, সিবিআই এখন আর প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নেই। এখন সিবিআইকে পরিচালনার দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের হাত চলে গিয়েছে।
বিজেপি ‘খারাপ’, নরেন্দ্র মোদি ‘ভাল’?
রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন ওঠে তাহলে কি বিজেপি ‘খারাপ’, নরেন্দ্র মোদি ‘ভাল’? এমনটাই মনে করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরই তাঁর অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলে কংগ্রেস। তাদের সোশাল মিডিয়া সেলের চেয়ারপার্সন সুপ্রিয়া শ্রীনেত বলেছেন, 'প্রধানমন্ত্রীর মোদির নির্দেশ ছাড়া একটা পাখিও ওড়ে না! তাহলে প্রধানমন্ত্রীকে যখন আপনি ক্লিনচিট দিচ্ছেন, সেক্ষেত্রে কি তাঁর বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিযোগ উঠছে, সেই সমস্ত অভিযোগ থেকেও ক্লিনচিট দিচ্ছেন? যদি বিরোধী আসনে থাকেন, তাহলে এমন লুকোচুরি খেলা যায় না! আর এই ব্যাপারে আমাদের অবস্থান একেবারে স্পষ্ট'।
কংগ্রেসের কটাক্ষ
কংগ্রেসের আক্রমণ ঘিরে তাঁদের পাল্টা কটাক্ষ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন বলেছেন, 'কংগ্রেস তো কিছুই করতে পারেনি, এ রাজ্যে কংগ্রেস কিছু নয়, দেশেও তাই, ওরা নিজেদের দিকটা দেখুক, বিজেপির বিরুদ্ধে একমাত্র শক্তি তৃণমূল'।
সম্প্রতি উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধীদের জোট প্রার্থীকে সমর্থন করেনি তৃণমূল। রাজ্যপাল থাকাকালীন জগদীপ ধনকড়ের তীব্র বিরোধিতা করলেও উপ রাষ্ট্রপতি পদে তাঁর বিরুদ্ধে ভোট দেয়নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। যারপরই বিজেপি-তৃণমূল গোপন আঁতাঁতের অভিযোগে সরব হয় সিপিএম-কংগ্রেস। মঙ্গলবার রাজস্থান বিধানসভায় উপ রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়ের উপস্থিতিতে, তা নিয়েই ঘুরিয়ে কটাক্ষ করেন কংগ্রেস শাসিত রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত। বলেন, ৩ বছর ধরে আপনার সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্ক গোটা দেশের আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল। আপনি যখন উপরাষ্ট্রপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নামলেন, তখন কি এমন ম্যাজিক দেখালেন যে সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই ভোট দিলেন না! দয়া করে সিক্রেটটা আমাদের জানান! কী এমন ম্যাজিক দেখালেন যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো শক্ত নারীও ভোটদানে বিরত রইলেন? যার পাল্টা শান্তনু সেন বলেছেন, 'রাজ্যপালের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল যখন, তখন বিরোধিতা করেছি, তারপর আমাদের সাংসদরা সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেন যে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দেওয়া হবে না।'
সম্প্রতি আরএসএস নিয়েও ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, 'আরএসএস-এ সবাই খারাপ নয়। ওরাও বুঝবে বিজেপি খারাপ'। ১৯৯৮ সালে কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে তৃণমূল তৈরি করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে অটলবিহারী বাজপেয়ী ও মনমোহন সিং দুই সরকারেই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বর্তমানে প্রকাশ্যে বিজেপি ও কংগ্রেসের থেকে সমদূরত্বের অবস্থান অবলম্বন করে চলে তৃণমূল। সিবিআই-ইডির তদন্ত এগোনোর সাথে সাথে, রাজনৈতিক সমীকরণ কোনওভাবে পাল্টায় কি না, তার উত্তর দেবে সময়ই।
আরও পড়ুন- আজ রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ মামলার রায়, একঝলকে ফিরে দেখা