কলকাতা: দিল্লির নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ নিয়ে জল্পনা চলছেই। এবার আর কোনও রাখঢাক করলেন না অধীর রঞ্জন চৌধুরী। প্রকাশ্যে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন তিনি। প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন অধীর। সেটি গ্রহণ হয়ে কি না, তা জানা যায়নি এখনও পর্যন্ত। কিন্তু সেই আবহেই দলের নেতা তাঁকে 'প্রাক্তন' বলে উল্লেখ করেছেন। আর তাতেই সরাসরি খড়গেকে নিশানা করলেন অধীর। (Adhir Chowdhury)


সম্প্রতি অধীরকে 'প্রাক্তন' প্রদেশ সভাপতি বলে সম্বোধন করেন বাংলায় কংগ্রেসের পর্যবেক্ষক গুলাম মীর। সেই নিয়েই খড়গেকে নিশানা করেছেন অধীর। সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, "কাল আলোচনা শুরুর আগেই, গোলাম প্রাক্তন সভাপতি বললেন। বলেছেন, ইস্তফা দিয়েছি। আমি তো ইস্তফা দিয়েছে খড়গে সাহেবের কাছে। ইস্তফাপত্র গ্রহণ করবেন কি না, সেটা খড়গে সাহেবের ব্যাপার। গ্রহণ করলে আমাকে জানানো দরকার, যা সৌজন্য এবং ভদ্রতার মধ্যে পড়ে। হঠাৎ করে শুনে বুঝতে পারছি, আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছে তাহলে। নইলে প্রাক্তন বলবেন কেন?" (Mallikarjun Kharge)


ইস্তফাপত্র দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন অধীর। কিন্তু তিনি জানিয়েছেন, আনুষ্ঠানিক ভাবে তাঁর ইস্তফাপত্র গ্রহণ করা হয়নি। এ নিয়ে খড়গে দিল্লিতে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সংসদ চলছে বলে এখনও আলোচনা হয়নি। সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে দেখা হলেও, রাহুলের সঙ্গে দেখা হয়নি। সেই আবহে দলের পর্যবেক্ষক যখন 'প্রাক্তন' বলছেন, তার মানে ইস্তফাপত্র গৃহীত হয়েছে বলেই ধরে নিচ্ছেন অধীর। তা-ই যদি হয়ে থাকে, তাঁকে জানানো হল না কেন, প্রশ্ন অধীরের।


আরও পড়ুন: India-China Conflict: পর পর সাজানো বাতিস্তম্ভ, চলছে গাড়িঘোড়া, প্যাংগং হ্রদের উপর ৪০০ মিটার সেতু ব্যবহারও করছে চিন


এ নিয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র শান্তনু সেন বলেন, "যে কোনও রাজনৈতিক দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের কাছে দল সবার আগে, সবার ঊর্ধ্বে। সেটা হওয়াই স্বাভাবিক। সেই কারণেই অধীর চৌধুরী দিল্লিতে ঘুরছেন, কিন্তু সর্বোচ্চ নেতডত্ব দেখা করছেন না। আজ জানলাম, তাঁরা একপ্রকার মেনেই নিয়েছেন, অধীর প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি। কংগ্রেস নেতৃত্ব বুঝেছেন, অধীরের নেতৃত্বে শতাব্দিপ্রাচীন কংগ্রেস, যে কংগ্রেস আমরাও করতাম, তারা শূন্য হয়ে গিয়েছে। এবং সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-কে অক্সিজেন জুগিয়ে গিয়েছেন। জোটের শরিক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লাগাতার বিষোদ্গার করে গিয়েছেন। নেতৃত্ব বার বার সতর্ক করলেও শোনেননি। তাই কংগ্রেস নেতৃত্ব ভেবে দেখবেন, অধীরবাবু কংগ্রেস করার উপযুক্ত কি না।"


এবছর লোকসভা নির্বাচনের আগে জাতীয় স্তরে I.N.D.I.A জোটে শামিল হয় কংগ্রেস এবং তৃণমূল দুই দলই। কিন্তু জাতীয় স্তরে পরস্পরের হাত ধরে চললেও, বাংলায় দুই দলের মধ্যে সম্পর্ক তিক্ত থেকে তিক্ততর হয়ে ওঠে। বাংলায় আসন সমঝোতা নিয়ে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরের মধ্যে সংঘাত বাধে। শেষ পর্যন্ত বাংলায় কংগ্রেসের থেকে আলাদা, ৪২টি আসনেই প্রার্থী দেয় তৃণমূল। 


এর পর লাগাতার মমতাকে আক্রমণ করে গিয়েছেন অধীর। সেই নিয়ে দিল্লি থেকে তাঁকে কড়া বার্তাও দেন খড়গে। অধীর সিদ্ধান্ত নেওয়ার কেউ নন। না পোষালে দল থেকে বেরিয়ে যেতে পারেন বলে মন্তব্য করেন। দলে থাকতে হলে হাই কম্যান্ডের সিদ্ধান্ত মেনেই চলতে হবে সকলকে। তার পরও নিজের অবস্থান থেকে সরেননি অধীর। বাংলায় মমতা এবং তৃণমূলের বিরোধিতার পথ থেকে সরবেন না বলে জানিয়েও দেন প্রকাশ্যে। সেই নিয়ে নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়ছিল বলে শোনা যাচ্ছিল। এদিন অধীর যা বললেন, তাতে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেল। 


তবে এতকিছুর পরও নিজের অবস্থান থেকে সরতে নারাজ অধীর। তিনি বলেন, "আমি কংগ্রেসের কর্মী। পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস কর্মীদের অবস্থা জানি আমি। এখানে অত্যাচার হচ্ছে, সন্ত্রাস হচ্ছে, হিংসার শিকার হতে হচ্ছে। বাংলার প্রত্যেক জেলার কংগ্রেস কর্মী এটা জানেন। কর্মীদের হয়ে বলতে গেলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বলতেই হবে আমাকে। সেই বলার মধ্যে কী ভুল জানা নেই আমার।" অধীরকে সরানো নিয়ে এখনও পর্যন্ত দিল্লির নেতৃত্ব যদিও মুখ খোলেননি।