মাথাভাঙা: নিয়োগ থেকে গরু, দুর্নীতিকাণ্ডে নাম জড়িয়েছে দলের নেতা-মন্ত্রীদের। পঞ্চায়েত নির্বাচনের (Panchayat Elections 2023) আগে তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে দল। কিন্তু কয়েক জনের কুকর্ম, অপকর্মের জন্য় দলের মাথানত হওয়া বরদাস্ত করবেন না তিনি, কোচবিহারে (Cooch Behar News) গিয়ে জানিয়ে দিলেন তৃণমূলের (TMC) সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। পঞ্চায়েত নির্বাচনে যোগ্যতমকেই টিকিট দেওয়া হবে বলেও জানিয়ে দেন। 


কয়েক জনের কুকর্ম, অপকর্মের জন্য় দলের মাথানত নয়, বললেন অভিষেক


শনিবার কোচবিহারের মাথাভাঙায় জনসভা ছিল অভিষেকের। সেখানেই দলের হয়ে ভুল-ত্রুটি স্বীকার করতে শোনা যায় অভিষেককে। সেখানে তিনি বলেন, "আজকের সমাবেশ শুধু রাজনৈতিক সমাবেশ নয়। বিজেপি-র বিচ্চিন্নতাবাদ, বিভাজন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে, বাংলাতে একমন্ত্রে বাঁধার প্রচেষ্টার পক্ষে মানুষের গণতান্ত্রিক এবং স্বতঃস্ফূর্ত জবাবের সমাবেশ। বাংলাকে ভেঙে যারা দ্বিখণ্ডিত করে আলাদা রাজ্যের দাবি জানায়, নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে নির্লজ্জের মতো মাঠে নেমেছিল, তাদের চক্রান্তের চক্রব্যূহকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে অখণ্ড বাংলার পক্ষে মানুষের সমর্থনের দৃষ্টান্ত স্থাপনের সমাবেশ।"


অভিষেক বলে চলেন, "দীর্ঘ দিন ধরে ভাবছি কোচবিহার আসব। গত বছর ১২ জুলাি সমাবেশ করি ধূপগুড়িতে। দু'মাস অন্তর আসব বলেছিলাম। উত্তরবঙ্গ কথাটিতে আপত্তি রয়েছে, আমার মনে হয়, উত্তরবঙ্গ, গৌড়বঙ্গ, রাঢ়বঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গ বলে কিছু হয় না। একটাই বঙ্গ, পশ্চিমবঙ্গ। এর পর ১ সেপ্টেম্বর এসেছিলাম মালবাজারে। মাঝে পুজো, দিদির কর্মসূচি গিয়েছে। এক-দেড় মাস দেরি হস আসতে। দেরি হওয়ায় সকলের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। মাঝখানে ভাবলাম পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচার কোচবিহার থেকে শুরু করব। আজ বুঝতে পারছি, না এলে কী ভুল করতাম। "


আরও পড়ুন: Abhishek Banerjee: তরতাজা যুবকের শরীরে ১৮০ গুলির টুকরো! BSF ‘উপদ্রব’ নিয়ে সরব অভিষেক, চোখের জল মুছিয়ে দিলেন মায়ের


অভিষেক জানান, শুধুমাত্র ভোট চাইতে কোচবিহারে পা রাখেননি তিনি। বলেন, "এখন লোকসভা বা বিধানসভা নির্বাচন নেই। পঞ্চায়েত নির্বাচনে মাস তিনেক বাকি। আজ শুধু ভোট চাইতে আসিনি। আজ মাথাভাঙার লক্ষাধিক মানুষ সমাবেশে প্রমাণ করেছেন যে, পর পর দু'টি নির্বাচনে আমাদেরই ভুলত্রুটির জন্য, হ্যাঁ আমাদেরই ভুলের জন্য ২০১৯-এর লোকসভা এবং ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন কোচবিহারের মানুষ। তবে আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি, যে প্রত্যয়, উৎসাহ লক্ষ্য করলাম, তাতে আজকের এই সমাবেশ পালাবদল, পরিবর্তনের সমাবেশ। বিজেপি-কে যাঁরা ভোট দিয়েছিলেন, বুঝতে পারছেন, বিজেপি-কে ভোট দেওয়া আর খাল কেটে কুমির আনা একই।"


আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে দলের নেতা-কর্মীদেরও লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেন অভিষেক। বলেন, "যে নেতা-কর্মীরা রয়েছেন আজ, সভামঞ্চে যাঁরা রয়েছেন, কাল থেকেই বাড়ি বাড়ি যাওয়া শুরু করুন। মানুষ তৃণমূলকে চান। কয়েকটা মানুষের কুকর্ম, অপকর্মের জন্য মুখ ফিরিয়েছেন। দলের জন্য মানুষের কাছে মাথানত করতে প্রস্তুত আমি। বাংলার সম্মানের জন্য় মাথানত করব। কিন্তু দু'চারজনের জন্য দলের মাথা নত হলে, আমি ছেড়ে কথা বলব না, সে যতই দাদার ছত্রছায়ায় থাকুন না কেন।"


পঞ্চায়েতের টিকিট বিতরণে কড়া অবস্থান অভিষেকের


পঞ্চায়েত নির্বাচনের টিকিট বিতরণ নিয়ে আগেও কড়া অবস্থান নিতে দেখা গিয়েছিল অভিষেককে। এ দিনও তিনি বলেন, ২০২১-এ তৃণমূলে আসনসংখ্যা ২০০ পেরোবে বলেছিলাম। ফল বেরোলে দেখা গেল, ২০১৬ সালের রেকর্ড ভেঙে জয়ী হয়েছে তৃণমূল। গ্রামের মানুষ যাঁকে সমর্থন করবেন,  যিনি যোগ্যতম বলে বিবেচিত হবেন, আগামী দিনে তিনিই প্রার্থী। কারও ছত্রছায়ায় থেকে, বোতল, ব্যাগ বয়ে প্রার্থী হতে পারবেন না পঞ্চায়েত নির্বাচনে। আজকের এই সমাবেশ রাজনৈতিক পালাবদলের সমাবেশ।"