শুভেন্দু ভট্টাচার্য, কোচবিহার : কোচবিহারের ( Cooch Behar ) ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে বড় দেবী বা বড় মা । কথিত আছে মহারাজা বিশ্ব সিংহ প্রথমে খেলার ছলে বড় দেবীর ( Boro Devi )পুজোর সূচনা করেন। পরবর্তীকালে মহারাজা নরনারায়ণের আমলে এই পুজো শুরু হয় আনুমানিক ১৫৩০ সাল নাগাদ। সেই দিক থেকে এসব করলে এই পুজো প্রায় ৫০০ বছর।
কোচবিহারের এই পুজোকে কেন্দ্র করে জড়িয়ে রয়েছে নানা রকম কথা ও কাহিনি। একসময় এই পূজোয় নরবলি প্রচলিত ছিল বলে জানা যায়। তবে একবার মাত্র হয়েছিল নরবলি, এরপর থেকে বন্ধ হয়ে যায় নরবলি। তবে পুজোতে এখনও মানুষের রক্তের প্রয়োজন হয়। এখনও অনুষ্ঠিত হয় গুপ্ত পুজো আর সেখানেই মানুষের রক্তে তুষ্ট করা হয় দেবীকে।
এই পুজোর সূচনা হয়ে যায় শ্রাবণ মাসের শুক্ল অষ্টমীতে। গুঞ্জবাড়ির ডাঙ্গর আই মন্দিরে ময়না কাঠের পুজোর মধ্য দিয়েই শুরু হয় বড় দেবীর আবাহন। এই ময়না কাঠের উপরেই তৈরি হয় বড়দেবীর প্রতিমা। ডাঙ্গর আই মন্দিরে ময়না কাঠটি পূজো করে সন্ধেবেলা নিয়ে আসা হয় মদনমোহন মন্দিরে। সেখানে এক মাস চলে সেই ময়না কাঠের পুজো, তারপরে তাকে প্রতিস্থাপন করা হয় বড়দেবী মন্দিরে, সেখানে তিনদিন ময়না কাঠকে হাওয়াতে রাখার পর শুরু হয় প্রতিমা নির্মাণের কাজ।
এই পুজো পদ্ধতি এবং প্রতিমা দুটোই স্বতন্ত্র। বড় দেবী এখানে রক্তবর্ণা, সঙ্গে থাকে না তাঁর ছেলে মেয়ে লক্ষ্মী, সরস্বতী কার্তিক, গণেশ। তার বদলে তার সঙ্গে থাকেন দুই সখি জয়া ও বিজয়া। দেবীর বাহন এখানে বাঘ ও সিংহ। প্রাচীন রীতিমেনে পুজো করা হয় বড় দেবীকে। প্রাচীন তালপাতার পুঁথি থেকে মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে আবাহন করা হয় কোচবিহারের বড় দেবীকে।
এই পুজোতে রয়েছে বলি প্রথা অষ্টমীর দিন মহিষ বলি হয়। এছাড়াও পায়রা , পাঠা, এবং বিসর্জনের সময় শুকর বলি দেওয়া হয়। একসময় কোচবিহারের মহারাজারা এই পুজো করতেন এখন তো মহারাজারা নেই, তাই পুজোর দায়িত্বে দেবত্র ট্রাস্টবোর্ড। এই দেবত্র ট্রাস্টবোর্ড রাজ্যের পর্যটন দপ্তরের অধীনে। প্রথা অনুযায়ী অষ্টমীতে জেলা শাসক প্রথমে বড় দেবীকে অঞ্জলি দেন তারপরে অঞ্জলি দিতে পারেন অন্য ভক্তরা।
প্রতিবছর কয়েক হাজার মানুষ ভিড় করে এই বড় দেবী পূজা উপলক্ষে, শুধুমাত্র কোচবিহার জেলা নয় পার্শ্ববর্তী আসাম থেকেও প্রচুর ভক্ত আসেন এই পুজো দেখতে। দশমীর পুজোর পর সকাল সকাল বড় দেবী মন্দিরের পাশেই যমুনা দীঘিতে বিসর্জন দেওয়া হয় দেবীকে। ট্রলিতে চাপিয়ে রশি টেনে শয়ে শয়ে ভক্ত মাকে নিয়ে আসে যমুনা দিঘির পারে, সেখানে খণ্ডিত করা হয় দেবীর শরীরের বিভিন্ন অংশ। তারপর একে একে বিসর্জন দেওয়া হয় বড় মাকে।
এই পুজোকে কেন্দ্র করে কোচবিহারের মানুষের আবেগ জড়িত রয়েছে, কোচবিহারের অনেকেই আগে বড় দেবীকে প্রণাম করে তারপর অন্য দুর্গাদর্শন করেন। এছাড়াও বড় দেবী বিসর্জন হওয়ার পরেই বিজয়ার শুভেচ্ছা বিনিময় শুরু করেন কোচবিহারের মানুষজন। বছরের পর বছর ধরে এই ধারা অব্যাহত রয়েছে । শত শত বছরের ঐতিহ্য পরম্পরা আজও অমলিন।
আরও পড়ুন, এবার ঘোড়ায় আগমন দেবী দুর্গার, দেখে নিন বাঙালির প্রাণের উৎসবের নির্ঘণ্ট !
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন