কলকাতা: কোচবিহারে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে যুবকের মৃত্যুতে নতুন করে তেতে উঠেছে বঙ্গ রাজনীতি (Cooch Behar News)। তৃণমূলের (TMC) শাসনে বিএসফ-কে (BSF Firnig) রাজনৈতিক স্বার্থে কাজে লাগানো হচ্ছে বলে অভিযোগ শাসকদলের। তাতে ফের কাঠগড়ায় বিএসএফ-এর ভূমিকা। এই প্রথম নয়,  এই এক বছরে, এই নিয়ে শুধুমাত্র কোচবিহারেই বিএসএফ-এর পাঁচটি গুলি চালানোর ঘটনা এবং তাতে মৃত্যুর ঘটনা সামনে এসেছে।


বিএসফ-কে রাজনৈতিক স্বার্থে কাজে লাগানো হচ্ছে বলে অভিযোগ তৃণমূলের


চলতি বছরের ১৭ মার্চ কোচবিহারেরই মাথাভাঙায় বিএসএফ-এর গুলিতে একজনের মৃত্যুর ঘটনা সামনে আসে। জানা যায়, তিনি বাংলাদেশি নাগরিক। অনুপ্রবেশ রুখতে গুলি বিএসএফ গুলি চালাতে হয় বলে সেই সময়  জানানো হয়। সেই ঘটনার সঙ্গে চোরাচালান সংযোগও তুলে ধরা হয়।


এর পর ১০ এপ্রিল কোচবিহারের সিতাইয়ে বিএসএফ-এর গুলি চালানোর ঘটনা সামনে আসে। তাতে তিন জমের মৃত্যু হয়। কাঁটাতার পেরিয়ে তাঁরা গরুপাচারের চেষ্টা করছিলেন বলে বিএসএফ-এর তরফে জানানো হয়। সে বার বাংলার নাগরিকদের উপর বিএসএফ জুলুম করছে বলে দাবি করেন রাজ্যের মন্ত্রী উদয়ন গুহ। তাঁর অভিযোগ ছিল, সীমান্তের ১৫০ গজ ভিতরে কাঁটাতারের বেড়া রয়েছে। নিজেদের ভূখণ্ড ছেড়ে বেড়া দেওয়া হচ্ছে। তার ফলে ঘোরাঘুরি করতে দেখলেও জুলুম করা হয়। এমনকি তাঁদের মতো নেতারাও বিএসএফ-এর জুলম থেকে ছাড় পান না বলে দাবি করেন উদয়ন।


গত ১৪ ডিসেম্বর কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে বিএসএফ-এর গুলিতে দু’জনের মৃত্যুর ঘটনা সামনে আসে। রাতের অন্ধকারে বৈরাগীহাটে সীমান্ত এলাকায় সে বার গুলি চলে।  দেহ দু’টি উদ্ধার হয় দিনের আলো ফুটতে। সেই ঘটনাতেও গরুপাচারের অভিযোগ তুলে ধরা হয়।


আরও পড়ুন: Police Controversy : পুলিশের লাঠিচার্জ, পরে আইসি-কে সংবর্ধনা, প্যারীমোহন কলেজের ঘটনায় চড়ছে রাজনৈতিক পারদ


চলতি মাসেরই ১৫ ডিসেম্বর ফের কোচবিহারের মাথাভাঙায় বিএসএফ-এর একজনের মৃত্যুর ঘটনা সামনে আসে। তিনি বাংলাদেশি নাগরিক বলে জানা যায়। নিহত ব্যক্তি চোরাচালানে যুক্ত ছিলেন বলে জানায় বিএসএফ।


তাতেই নয়া সংযোজন ২৪ ডিসেম্বরের ঘটনা। শনিবার সকালে গীতালদহের ঘোষপাড়ায়, বিএসএফ-এর গুলিতে মৃত্যু হয় ২৪ বছরের প্রেম বর্মনের। তিনি গরুপাচারে যুক্ত ছিলেন বলে দাবি বিএসএফ-এর। কিন্তু পরিবারের দাবি, বেঙ্গালুরুতে শ্রমিকের কাজ করতেন প্রেম। ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন। দিন দুয়েক পর ফের রওনা দেওয়ার কথা ছিল। তার আগে, শনিবার নিজেদের তামাক চাষের জমিতে কাজ দেখতে বেরিয়েছিলেন। সন্দেহবশতই তাঁকে গুলি করে বিএসএফ।


বিএসএফ-এর ছোড়া গুলি খেয়ে যেখানে লুটিয়ে পড়েন প্রেম, ওই এলাকা ভারত-বাংলাশে সীমান্ত থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে। ঘটনার পর কোনও গরুও উদ্ধার হয়নি বলে জানান স্থানীয়রা। তাতেই প্রশ্ন ওঠে, গরু পাচার আটকাতে সীমান্ত থেকে এত দূরে কেন গুলি চালাল বিএসএফ! দিনহাটা ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল নেতা দীননাথ বর্মন বলেন, “এখানে সন্ধের পর বিএসএফ-এর ভয়ে মানু বাইরে বেরোতে পারেন না।”


এই ঘটনায় অবধারিত ভাবে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। রাজ্যের মন্ত্রী উদয়নের প্রশ্ন, “গরু পাচারকারী হলেও কি গুলি করে মারতে হবে নাকি? গরু পাচারকারী বলে তকমা লাগিয়ে দিচ্ছি বিএসএফ। এলাকায় অত্যাচার চালাচ্ছে স্থানীয়দের শ্লীলতাহানি করছে। প্রেম গরু পাচারকারী হলে, গরু কি উদ্ধার হয়েছে?”


সীমান্ত এলাকায় জুলুম চালাচ্ছে বিএসএফ, দাবি তৃণমূলের


যদিও বিজেপি-র শমীক ভট্টাচার্যের যুক্তি, “শুধুমাত্র সন্দেহের বশে গুলি করা যায় না। নিশ্চয়ই বিএসএফ কিছু দেখতে পেয়েছিল! রাজ্যেপ নেতারা বিএসএফ-কে লাগাতার আক্রমণ করে আসছেন। এই ঘটনাকেও কাজে লাগাতে চাইছেন তাঁরা।” প্রেমের মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে দিনহাটা পুলিশ।