শুভেন্দু ভট্টাচার্য, কোচবিহার: পুরনো শ্লীলতাহানির মামলার জেরে স্বামীকে খুন করিয়েছেন পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য। কোচবিহারের দিনহাটায় দুই দুষ্কৃতীর খুনের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করলেন এক নিহতের স্ত্রী। এই ঘটনাতেও নাম জড়াল তৃণমূলের। পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়ার অভিযোগ তুলে সিবিআই-এর কাছে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেন মহিলা। পঞ্চায়েত সদস্যর বিরুদ্ধে দিনহাটা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পঞ্চায়েত সদস্য। 



Cooch Behar News: 'শ্লীলতাহানির অভিযোগে স্বামীকে খুন পঞ্চায়েতের TMC সদস্যর..' !


মালদার কালিয়াচকে তৃণমূল কর্মীকে থেঁতলে খুনের ঘটনায় তোলপাড় রাজ্য। তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি দুলাল সরকার খুনের মতো, কালিয়াচকের ঘটনাতেও সামনে এসেছে তৃণমূল সঙ্গে তৃণমূলের দ্বন্দ্বের প্রসঙ্গ।  কালিয়াচক থেকে ৪২৩ কিমি দূরে কোচবিহারের দিনহাটা। সেখানে দুই দুষ্কৃতীর খুনের ঘটনাতেও নাম জড়াল তৃণমূলের। অভিযোগ, খুন করিয়েছেন তৃণমূলের এক পঞ্চায়েত সদস্য। একজনকে মেরেছে পাঁচজন। এই পাঁচজনের আমরা শাস্তি চাই। ' পুরনো শ্লীলতাহানির অভিযোগের জেরে খুন? নাকি বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে ২ দুষ্কৃতীর মারামারির জের? উত্তর খুঁজছে পুলিশ। চলছে তদন্ত। মৃতেরা হল ইউসুফ মিয়া ওরফে আইসার(৫০) ও বছর ৩৫-এর আর এক দুষ্কৃতী। ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলহার রাত পৌনে ১০টা নাগাদ দিনহাটার ভেটাগুড়িতে।


স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর জখম অবস্তায় রাস্তার ধারে পড়েছিল ওই দুই দুষ্কৃতী। তাদেরকে উদ্ধার করে দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। নিহত এক দুষ্কৃতীর স্ত্রীর অভিযোগ, পুরনো একটি শ্লীলতাহানির ঘটনায় মামলা করা হয় ভেটাগুড়ি ১ নম্বর পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য পঞ্চায়েত সদস্য জাকির মিয়ার অনুগামীদের বিরুদ্ধে। তার জেরেই স্বামীকে খুন করিয়েছেন জাকির মিয়া।স্বামীকে বাঁচাতে গিয়ে খুন হয়েছে ইউসুফ ওরফে আইসার। অভিযোগ করেছেন, পুলিশি নিষ্ক্রিয়তারও। 


এদিন অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সদস্যর বিরুদ্ধে দিনহাটা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন অভিযোগকারিণী। যদিও জোড়া খুনে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য। ভেটাগুড়ি ১ অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সদস্য  জাকির মিয়া বলেন,'না, ওটা অভিযোগ করে নাই। আমরা তো বাজার থেকে চলে গিয়েছিলাম। এই চায়ের দোকানে ছিলাম আমি সন্ধেবেলা। বাড়ি চলে যাওয়ার পর শুনি চিল্লাচিল্লি।  এরা বড় ক্রিমিনাল, জেল খাটছে। একে অপরের সঙ্গে মারামারিতে এই ঘটনা। এদের মধ্যে কী হয়েছে কী করে জানব । পকসো কেস দিয়ে আমাকে ফাঁসিয়ে দিল।'ঘটনাকে ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।


বিজেপি জেলা কমিটির সদস্য  দিব্যনাথ বর্মন বলেন,'আজকে যেটা বলা হচ্ছে যে, একে অপরকে খুন করেছে। এটা কখনওই হতে পারে না। কারণ, সেখান থেকে কোনও অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। অস্ত্র পাওয়া যায়নি।এখানে গভীর কোনও চক্রান্ত রয়েছে, ষড়যন্ত্র রয়েছে। পুলিশ সঠিত তদন্ত করুক, এবং দোষীরা গ্রেফতার হোক, এটাই আমরা চাইছি।' তৃণমূল জেলা সাধারণ সম্পাদক শুভঙ্কর দে বলেন , 'প্রাথমিকভাবে পুলিশ যেটা বলল, সেটা হল যে- ঘটনাটা দু'জনের মধ্যেই ঘটেছে। এবং দু'জনের মধ্যেই খুন-জখমের এই ঘটনাটা ঘটেছে। তারপরে যদি কোনও কিছু থেকে থাকে সেরকম বিষয়, সেটা পুলিশ তদন্ত করে দেখবে।  এবং তদন্ত করার পর কেউ দোষী প্রমাণিত হয়, হবে। সেক্ষেত্রে আমাদের দলীয়ভাবে কোনও কিছু বলার নেই।' 


আরও পড়ুন, প্রপেট্রোলের দরে বড় বদল ! মূল্যবৃদ্ধি এই জেলায় ! আজ জ্বালানি ভরাতে খরচ কত ?


পুলিশ সূত্রে দাবি, ১২ বছর আগে মাথাভাঙার একটি ডাকাতির মামলায় একসঙ্গে জেল খাটে ইউসুফ ও অপর যুবক। অপর যুবক আগে ছাড়া পেয়ে ইউসুফের স্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর চেষ্টা করে। প্রতিবাদ করলে মহিলাকে হেনস্থা করা হয় বলেও অভিযোগ। তা নিয়ে আক্রোশ ছিল ইউসুফের। মঙ্গলবার তা নিয়ে মত্ত অবস্থায় মারামারি করতে গিয়ে মৃত্যু হয় দুই দুষ্কৃতীর। যে যুবক আসানুরকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়, সেই লালচাঁদ বেপাত্তা।