শুভেন্দু ভট্টাচার্য, শীতলকুচি: গত বছরের ১০ এপ্রিল রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের (West Bengal Assembly Elections 2021) চতুর্থ দফার ভোটগ্রহণের সময় রক্তে রাঙা হয়েছিল কোচবিহারের (Cooch Behar) শীতলকুচি (Sitalkuchi)। গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় পাঁচজনের। আর কয়েকদিন পরেই সেই ভয়ঙ্কর ১০ এপ্রিলের বর্ষপূর্তি। এই পরিস্থিতিতে ওই দিনটিকে ‘শহিদ দিবস’ হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল। কোচবিহার জেলা তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) সভাপতি পার্থপ্রতিম রায় জানিয়েছেন, ‘গত বছর ১০ এপ্রিল পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনার এক বছর পূর্তিতে শহিদ দিবস পালন করা হবে। ১০ এপ্রিল সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে।’ 


শহিদ দিবস ঘিরে তরজা


তৃণমূলের শহিদ দিবস পালনের সিদ্ধান্তকে ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। কোচবিহার সাংগঠনিক জেলা বিজেপি সহ সভাপতি সঞ্জয় চক্রবর্তী বলেছেন, ‘রাজনীতি করার জন্য, সহানুভূতি পাওয়ার চেষ্টা। প্রকৃত সত্য তদন্তে উঠে আসবে। যারা আনন্দ বর্মনকে মারল তারা তো তৃণমূলের লোক।’


শীতলকুচির ঘটনা রাজনীতি চলছেই। আর এসবের মাঝে প্রিয়জনকে হারানোর যন্ত্রণা নিয়ে বিচারের অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছে আনন্দ, সামিউল, মণিরুজ্জামানদের পরিবার। 


কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে মৃত্যু


কোচবিহারের শীতলকুচির জোড় পাটকি গ্রাম পঞ্চায়েতের আমতলির ১২৬ নম্বর বুথে মোতায়েন কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে মৃত্যু হয় ২০ বছরের সামিউল মিঞা, ১৮ বছরের খেতমজুর নুর আলম মিঞা, কাঠমিস্ত্রী ২৮ বছরের মণিরুজ্জামান মিঞা ও ২৮ বছরের রাজমিস্ত্রী হামিদুল মিঞার। এই ঘটনায় উত্তাল হয়ে ওঠে রাজ্য রাজনীতি। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোচবিহারে গিয়ে নিহতদের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে দেখা করেন। পরে নিহতদের পরিবারকে পাঁচ লক্ষ টাকা করে সাহায্য করেছে রাজ্য সরকার। পরিবারের একজনকে হোমগার্ড হিসেবে চাকরিও দেওয়া হয়। কিন্তু অভিযোগ, কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে চার-চারটে শরীর ঝাঁঝরা হয়ে গেলেও, মোদি সরকারের তরফে এখনও কোনও সাহায্য মেলেনি। কেন্দ্রের তরফে আর্থিক সাহায্যে এবং অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ির সার্কিট বেঞ্চের দ্বারস্থ হওয়ার কথা জানায় নিহতদের পরিবার।


আরও পড়ুন রাজনৈতিক হিংসা অব্যাহত কোচবিহারে, শীতলকুচিতে বিজেপির কর্মিসভায় হামলা, অভিযুক্ত তৃণমূল


শীতলকুচিতে নিহত মনিরুজ্জামানের আত্মীয় আলিজার রহমানের কথায়, ‘রাজ্য সরকার চার পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করেছেন। একজন করে হোমগার্ডের চাকরিও পেয়েছে। কিন্তু যাদের গুলিতে মারা গেল, সেই কেন্দ্রীয় সরকার এখনও কোনও ক্ষতিপূরণ দেয়নি। আমরা চাই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক এবং দোষীদের শাস্তি দেওয়া হোক। সিআইডি তদন্তের উপর ভরসা আছে, সিআইডি তদন্ত চলুক।’