শুভেন্দু ভট্টাচার্য, কোচবিহার: মাটি ফুঁড়ে আবির্ভূত হয়েছে দেবীমূর্তি। জানাজানি হতেই উপচে পড়েছিল ভিড়। মহামারি,দুর্দশার অবসান এ বার ঘটল বলে ধরে নিয়েছিলেন সকলে। তাই নতজানু হয়ে মাথা ঠুকেছিলেন সকলেই। প্রণামী বাক্সেও ঝুলি উপুড় করে দিতে তাই দ্বিধা করেননি কেউ। শেষমেশ হাটে হাঁড়ি ভাঙল পুলিশ এসে। তাতে শাপ-শাপান্ত করতে শুরু করেছেন অনেকেই। কিন্তু অনেকেই আবার আশা ছাড়াতে নারাজ। দৈব ঘটনা ছাড়া এ অন্য কিছু হতে পারে না বলে এখনও আশায় বুক বেঁধে রয়েছেন তাঁরা।
রাতারাতি হইচই পড়ে যায় গোটা এলাকায়
কোচবিহার (Coochbehar News) জেলার তুফানগঞ্জের ১ নম্বর ব্লকের বলরামপুর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘটনা। গত সোমবার আচমকাই হইচই পড়ে যায় গোটা এলাকায়। মুখে মুখে প্রচার হয়ে যায় গ্রামের একটি বাড়িতে কালীমূর্তি (Goddess Kali Idol) আবির্ভূত হয়েছে বলে। তাতেই ওই বাড়িতে ভিড় জমাতে শুরু করেন দলে দলে মানুষ। বাড়ি মালিকের নাম-ঠিকানা জোগাড় করে আশেপাশের গ্রাম থেকেও ছুটে আসেন অনেকে। এমন দৈব ঘটনার সাক্ষী হতে রীতিমতো লাইন দিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন তাঁরা, যাতে এক ঝলক দর্শন পাওয়া যায় দেবী মূর্তির।
ফলে দু’দিন আগে পর্যন্ত যাঁরা চোখাচোখি হলেও এড়িয়ে যেতেন, ভক্তিভারে সকলে এসে ওই বাড়ির আঙিনায় জড়ো হতে শুরু করেন। নতজানু হয়ে দেবীমূর্তির সামনে দুঃখ-দুর্দশার কথা তুলে ধরেন। রক্ষা পাওয়ার উপায় জানতে চান। সেই বাবদ প্রণামী বাক্সে হাত উপুড়ও করে দিতে পিছপা হননি কেউ। ফলে সকাল থেকে রাত, এক দিকে পুজো-অর্চনা, অন্য দিকে পয়সার ঝনঝন শব্দে মুখরিত হতে থাকে চারিদিক। কিন্তু এমন দৈবযোগের কথা চাপা থাকেনি। লোকমুখএ প্রচার হতে হতে তা কানে পৌঁছয় পুলিশ-প্রশাসনেরও।
আরও পড়ুন: Santragachi: ছাত্র সংসদের দখল নিয়ে সাঁতরাগাছিতে কলেজে দু’দল ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষ। Bangla News
কৌতূহল মেটাতেই ওই বাড়িতে উপস্থিত হন সরকারি কর্মী-আধিকারিকরা। এমন ঘটনা অসম্ভব, সরাসরি তা বলার উপায় ছিল না। তাই গ্রামবাসীদের বুঝিয়ে কোনও রকে মূর্তিটি উদ্ধার করে পুলিশ এবং প্রশাসন। তার পর শুরু হয় সেটির হাল-হাকিকত জানার প্রচেষ্টা। তাতেই ঝুলি থেকে বেরিয়ে পড়ে বিড়াল। জানা যায়, কিছু দূরের একটি দোকান থেকে ১৬০০ টাকা দিয়ে ধাতব মূর্তিটি কেনে ওই পরিবার। সত্যতা তুলে ধরতে ওই দোকানদারকে গ্রামে নিয়ে আসা হয়। তিনি এসে হাটে হাঁড়ি ভাঙেন। বিষয়টি তাঁর কানেও এসেছিল এবং সন্দেহ হয়েছিল বলেও জানান ওই মূর্তি বিক্রেতা।
দলে দলে মানুষ এসে ভিড় করেন
পুলিশ জানিয়েছে, গ্রামের বাসিন্দা বাসুদেব বর্মনের পরিবারের দাবি ছিল মাটি ফুঁড়ে আচমকাই আবির্ভূত হয় মূর্তিটি। তাঁর স্ত্রী জোৎস্না বর্মন গ্রামবাসীদের জানান, বাড়ির মন্দিরে নিয়মিত পুজো করতেন তাঁদের ছেলে তপন বর্মন। সম্প্রতি মন্দিরের ভিতর এখটি ইঁদুরের গর্ত দেখতে পান তিনি। কোনও রকমে মুখটি বন্ধ করে দেন তিনি। পরে সেই গর্ত দিয়েই মূর্তিটি আবির্ভূত হয় বলে দাবি করেন জোৎস্নাদেবী। সাদা মনে সকলে তা মেনেও নেন। ভক্তিভারে লুটিয়ে পড়েন দেবীমূর্তির চরণে। কিন্তু তপনই নিজেহাতে মূর্তিটি দোকান থেকে কিনেছিলেন বলে জানা গিয়েছে।
বিষয়টি সামনে আসার পর, ওই পরিবারের কেউ প্রকাশ্যে মন্তব্য করেননি। তবে এই গোটা ঘটনায় দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে গিয়েছেন গ্রামের মানুষ। সাজানো ঘটনাকে দৈবযোগ বলে চালিয়ে ওই পরিবার মানুষকে ঠকিয়েছেন বলে মনে করছেন কেউ কেউ। এমন বুজরুকিতে কী ভাবে সকলে বিশ্বাস করলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অনেকে। তবে এখনও দৈব যোগের তত্ত্ব ঝেড়ে ফেলতে পারছেন না অনেকেই।