বিটন চক্রবর্তী, বালেশ্বর : ওড়িশার বালেশ্বরে দুর্ঘটনার কবলে শালিমার থেকে চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস, হাওড়া-যশোবন্তপুর হামসফর এক্সপ্রেস এবং একটি মালগাড়ি। ভয়াবহ দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, জানাল রেল। আহতর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৬০০।


এভাবেও ফিরে আসা যায়...


অভিশপ্ত করোমণ্ডল এক্সপ্রেসে ছিলেন বালিগঞ্জের অনুজা। পরিবারের সঙ্গে যাচ্ছিলেন চেন্নাইয়ে। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন তিনি। এখনও আতঙ্কের রেশ চোখেমুখে।


স্বামী থাকেন চেন্নাাইয়ে। তাঁর কাছেই যাচ্ছিলেন। সন্ধেবেলায় বসেছিলেন জানলার কাছে। হঠাৎ বিকট আওয়াজ। তারপরই কী হল তিনি জানেন না। ট্রেন গেল হেলে। এরপর সব অন্ধকার। ভাগ্যক্রমে ছিল প্রাণ। জানলা কেটে টেনে হিঁচড়ে তাঁকে বের করে আনে উদ্ধারকারী দল। তারপর হসপাতালে। 


মুখে ও শরীরে অনেক ব্যান্ডেজ। জামাভরা রক্তে ছোপ। মেয়ের পাশে দাঁড়িয়ে বাবা বললেন, প্রাণটুকু বেঁচে গিয়েছে, এটাই সৌভাগ্যের।  


মেয়েকে আঁকড়ে প্রাণে বাঁচলেন সায়ন্তনীও 


১১ বছরের মেয়ের জন্মদিন পালন করে চেন্নাইয়ে স্বামীর কাছে ফিরছিলেন। বালেশ্বরে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলেন পিকনিক গার্ডেনের বাসিন্দা মা-মেয়ে। একবার নয়, দু’-দু’বার ধাক্কা।
পাশের কামরার শৌচাগার ভেঙে ঢুকে যায় তাঁদের কামরায়। মেয়েকে আঁকড়ে কীভাবে ফিরেছেন, তা ভাবলেই শিউড়ে উঠছেন এই মহিলা। 


মৃতদেহের নিচে চাপা পড়ে ছিলেন বলেই হয়তো প্রাণে বেঁচেছেন ক্যানিংয়ের পারুল !









ত্রস্ত  পারুল বিবি বলছেন, মৃতদেহের নিচে চাপা পড়ে ছিলেন বলেই হয়তো প্রাণে বেঁচেছেন। ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে শুয়ে এমনইটাই মনে হচ্ছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীর নেবুখালির বাসিন্দা এক মহিলা।


স্বামী ব্যাঙ্গালোরে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করেন। সেখানে কাজ করেন খুড়শ্বশুর শহিদুল ইসলাম মোল্লাও। করমণ্ডল এক্সপ্রেসে চড়ে খুড়শ্বশুরের সঙ্গে ব্যাঙ্গালোরে যাচ্ছিলেন পারুল। দুর্ঘটনার পর গাড়ি ভাড়া করে এখানে ফেরেন। শ্বশুর-বৌমা দু’জনেই ভর্তি রয়েছেন হাসপাতালে। গোসাবা থেকে কাজের খোঁজে চেন্নাই পাড়ি দিয়েছিলেন ১২ জন পরিযায়ী শ্রমিক। এখনও কারও খোঁজ মেলেনি।                                                     


দুর্ঘটনাগ্রস্ত করমণ্ডল এক্সপ্রেসের কামরা যেন দেশলাইয়ের বাক্স। ধাক্কার অভিঘাতে রেললাইন ভেঙে ঢুকে গেছে কামরার ভিতর। ভেঙেচুরে, দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে গোটা কামরা। এর মধ্যেও যাঁরা প্রাণে বেঁচেছেন, তাঁরা নিজেদের ভাগ্যবানই মনে করছেন।