প্রকাশ সিন্হা, আশাবুল হোসেন ও প্রবীর চক্রবর্তী, কলকাতা : যাঁরা টাকার বিনিময়ে নম্বর বাড়িয়েছেন, তাঁদের গ্রেফতার করছেন না কেন? এরাও তো বৃহৎ ষড়যন্ত্রের অংশ। ৬৭৭ জনের মধ্যে কেন শুধু ৪ জনের বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে? বাকিদের কবে বয়ান রেকর্ড হবে? নবম-দশমে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সোমবার CBI-এর উদ্দেশে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নই ছুড়ে দিলেন আলিপুর কোর্টের বিচারক শেখ কালামুদ্দিন।
৭ জনকে আলিপুর কোর্টে পেশ
সোমবার, নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত ২টি মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুবীরেশ ভট্টাচার্য, মিডলম্যান প্রসন্ন রায়-সহ ৭ জনকে আলিপুর কোর্টে পেশ করা হয়। SSC-র নবম-দশমে নিয়োগে দুর্নীতি মামলায় CBI-এর তদন্তকারী অফিসার কোর্টে জানান, নম্বরে কারচুপি করে চাকরি পাওয়া ৬৭৭ জনের হদিশ মিলেছে।
তারমধ্যে ৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। হার্ডডিস্ক থেকে উদ্ধার হয়েছে অনেক তথ্য। এরপরই বিচারক শেখ কালামুদ্দিন প্রশ্ন করেন, ৬৭৭ জনের মধ্যে শুধু ৪ জনের বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে? এদের গ্রেফতার করলেন না কেন? গ্রেফতার করেও তো বয়ান রেকর্ড করা যেত! তদন্ত কি অনন্তকাল চলবে?
প্রসন্ন রায়ের বাড়ি থেকে উদ্ধার দিলীপ ঘোষের দলিল!
তখন জেলবন্দি সুবীরেশ ভট্টাচার্যের আইনজীবী বলেন, এখনও শুধু ৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ হয়েছে, ৬৭৭ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে কি তবে ৬৭৭ মাস লাগবে? ইতিমধ্যেই সিবিআই দাবি করেছে, মিডলম্যান প্রসন্ন রায়ের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে দিলীপ ঘোষের দলিল!
সোমবার সেই প্রসঙ্গ তুলে, SSC’র প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিন্হার আইনজীবী বলেন, CBI যে সিজার লিস্ট দিচ্ছে সেখানে এসপি সিনহার নাম নেই। কিন্তু শুনছি নাকি দিলীপ ঘোষ নামে কারও একজনের নাম আছে। তখন সিবিআই-এর আইনজীবী বলেন, তদন্তে প্রতিদিন নতুন নতুন তথ্য বেরিয়ে আসছে। আমাদের উদ্দেশ্যে তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করা।
পাল্টা বিচারক সিবিআইকে প্রশ্ন করেন, কতদিন সময় লাগবে? CBI’এর আইনজীবী তখন বলেন, পরিকল্পনা করে দুর্নীতি করা হয়েছে। ৪ নম্বর থেকে বাড়িয়ে ৫৪ করা হয়েছে। এরপরই ৬৭৭ জনের প্রসঙ্গ তুলে বিচারক বলেন, এদের তো পার্টি করতে পারেন!
এদিন অন্য একটি মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় CBI-এর আইনজীবীকে বলেন, কাল এক জায়গায় গিয়েছিলাম। সমাজের উপর তলার বহু মানুষ সেখানে ছিলেন। তারা একের পর এক আমাকে জিজ্ঞেস করছেন, তদন্ত কবে শেষ হবে?
বিচারপতি আরও বলেন, লোক কোথায়? CBI’কে লোক বাড়াতে হবে। এই প্রসঙ্গেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, আমার চোখে যা পড়ছে, তাতে আরও দুর্নীতির ইঙ্গিত আসছে। সেক্ষেত্রে SIT-এ লোক না বাড়ালে হবে না। প্রয়োজনে অর্ডার দেবো। কারণ CBI আরও বহু মামলার তদন্ত করছে।
এদিন, দুর্নীতি মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ ৭ জনের ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয় আলিপুর কোর্ট।