সনৎ ঝা, শিলিগুড়ি : বিধানসভা নির্বাচনের আগে ফের মহাকাল মন্দির ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। এবার ৭০০ কোটি টাকা মূল্য়ের জমি মাত্র ১ টাকায় ট্রাস্টকে দিয়ে দেওয়ার অভিযোগে সরব হল সিপিএম। বৃহস্পতিবার, এ নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন সিপিএম নেতা ও SJDA-এর প্রাক্তন চেয়ারম্য়ান অশোক ভট্টাচার্য। যার পাল্টা জবাব দিয়েছে তৃণমূল-ও।

Continues below advertisement

ক'মাস পরই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে মন্দির-মসজিদ, হিন্দু-মুসলিম নিয়ে সরগরম রাজ্য় রাজনীতি। এই আবহে শিলিগুড়িতে মুখ্য়মন্ত্রী যেখানে মহাকাল মন্দির তৈরির ঘোষণা করেছেন, সেই জমি নিয়ে সরব হল সিপিএম। তাদের অভিযোগ, ৭০০ কোটি টাকা মূল্য়ের জমি, মাত্র ১ টাকায় ট্রাস্টকে দেওয়া হয়েছে। অশোক ভট্টাচার্য বলেন, "এই জমিটা থাকলে, আজকের দিনে এটা যদি কোনও প্রকল্প যদি SJDA হাতে নিত, ৭০০ কোটি টাকা মিনিমাম পেত, জমির যা দাম। ৫০ লাখ টাকা কাঠা ওখানে। সেই জমিটা দিয়ে দেওয়া হল হিডকোকে। আর হিডকোকে দেওয়া হল ১ টাকার বিনিময়ে। আর হিডকোর মাধ্য়মেই জমিটা পেল আরেকটা কোম্পানি।" যদিও তৃণমূল নেতা ও শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র গৌতম দেব বলেন, "ওখানে একটা স্টেডিয়াম হচ্ছে। সেটা অশোকবাবু বলেননি। একটা কনভেনশন সেন্টার হচ্ছে কাওয়াখালিতে। সেটা বলেননি। অশোকবাবু লন টেনিসের জন্য জায়গাটা দিয়েছেন, ঝোপ জঙ্গল আর শিয়াল থাকে। সেটার উত্তর কে দেবে?"

১৬ অক্টোবর, দার্জিলিঙে মহাকাল মন্দিরে পুজো দিয়ে বেরিয়ে, শিলিগুড়িতে মহাকাল মন্দির তৈরির ঘোষণা করেন মুখ্য়মন্ত্রী। তিনি বলেছিলেন, "আমি একটা জমি জেলাশাসককে দেখে রাখতে বলেছি শিলিগুড়ির পাশাপাশি ভাল জমি, যেখানে কনভেনশন সেন্টার হবে, তার পাশেই আমি একটা বড় মহাকাল মন্দির করব। যেটা সবচেয়ে বড় শিব করব।" রাজ্য সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, প্রথমে পর্যটন দফতরের হাতে এই জমি তুলে দেবে SJDA। এরপর, পর্যটন দফতর একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করবে। সেই বোর্ডের কাছে জমি হস্তান্তর করা হবে। তারাই মহাকাল মন্দিরের যাবতীয় দায়িত্ব পালন করবে। অশোক ভট্টাচার্যের দাবি, বাম আমলে এই জমি ভবিষ্যতে IT পার্ক তৈরির কথা ভেবে, ঘিরে রাখা ছিল। তাঁর প্রশ্ন, সেখানে হঠাৎ মন্দির কেন ?

Continues below advertisement

অশোক ভট্টাচার্য বলেন, "একটা জমিতে মুখ্য়মন্ত্রী ক্য়াবিনেটে সিদ্ধান্ত নিলেন, একটা মন্দির করার জন্য়। মহাকাল মন্দির। সেই জায়গাটা একটা তথ্য়প্রযুক্তি পার্ক হওয়ার কথা ছিল। শিল্পের জন্য় জায়গা। এই জায়গাটা উনি SJDA-র হয়ে... কেনই বা একটা শিল্পের জমি, যেখানে কর্মসংস্থান হতে পারে, শিল্পের থেকে যেখানে কর্মসংস্থান হতে পারে, মন্দির তার থেকে বড় নয়।"

পাল্টা গৌতম দেব বলেন, "অশোকবাবু ওখানে এই চাঁদমনির একটা বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সবুজ ধ্বংস করে সেখানে গুলি চলেছে। জায়গাগুলো হ্যান্ডওভার করা হয়েছিল। সেসময়, তিনি নিজের ইচ্ছে খুশি মতো, জমিগুলো তাঁর পছন্দের লোকেদের তিনি দিয়েছেন।  হঠাৎ করে অশোকবাবু আজকে যেটা বলেছেন, সেটা ঠিক নয়।"

তৃণমূল সরকার চাইছে মন্দির তৈরি করতে। সিপিএম প্রশ্ন তুলছে, শিল্পের জমিতে কর্মসংস্থানের ব্য়বস্থা না করে মন্দির কেন ? এই প্রেক্ষিতে বিজেপিও লড়াইয়ে নেমে পড়েছে। তবে সেই লড়াই মন্দির কে তৈরি করবে, তা নিয়ে। শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ বলেন, "মুখ্যমন্ত্রীর সময়সীমা ২০২৬ অবধি। ফলে ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার আসার পরে নিশ্চিতভাবে শিবভক্তরাই এই কাজ নিজের দায়িত্বে, নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে করবে।" এই বিতর্কের জল আগামী দিনে কোনদিকে গড়াবে ? সেটাই দেখার।