কলকাতা: মালদায় চোর অপবাদ দিয়ে হাটের মধ্যে দুই জনজাতি মহিলাকে মারধর এবং বিবস্ত্র করার চেষ্টার অভিযোগ। হিংসাদীর্ণ মণিপুরের দুই মহিলার সঙ্গে পাশবিক আচরণের পর, এই ঘটনা ঘিরে তোলপাড় শুরু হয়েছে। রাজ্যের তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে একদিকে সরব হয়েছেন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এবং মন্ত্রীরা (Malda Incident)। অন্য দিকে, গোটা ঘটনাকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেছে তৃণমূল। সেই আবহে মালদা নিয়ে মুখ খুললেন সিপিএম নেত্রী তথা পলিটব্যুরোর সদস্য বৃন্দা কারাট (Brinda Karat)। 


মালদার ঘটনা নিয়ে শনিবার সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলেন বৃন্দা। বলেন, "দেশের যে কোনও প্রান্তে মহিলাদের উপর নির্যাতনের ঘটান নিন্দনীয়। আমরা সকলেই এই ধরনের ঘটনার নিন্দা করি। বাংলায় আদিবাসী হাটের মধ্যে এই ঘটনা ঘটেছে, যেখানে আদিবাসী মহিলারাই আদিবাসী মহিলাদের মারছেন। চেষ্টা করছেন কাপড় কেড়ে নেওয়ার। বিজেপি-র সাংসদ রয়েছেন ওই এলাকায়। বিষয়টি নিয়ে হস্তক্ষেপ করা উচিত। বাংলায় আইনশৃঙ্খলা নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের উচিত বিষয়টি দেখার। "


মালদার ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করে ইতিমধ্যেই পুলিশ পাঁচ জনকে আটক করেছে। পরিবারের দাবি, হাটে লেবু বিক্রি করতে গিয়েছিলেন ওই দুই জা। সেই সময় চোর সন্দেহে তাঁদের বিবস্ত্র করে মার ধরা হয় বলে অভিযোগ। চুরির অভিযোগে দুই মহিলাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে বলেও দাবি পরিবারের। 


আরও পড়ুন: Malda News: 'মমতা নির্মমতার প্রতীক', মালদাকাণ্ডের পর বিস্ফোরক অনুরাগ ঠাকুর


যদিও বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক তরজা চরমে। বিজেপি-র তরফেই ওই ভিডিও সামনে আনা হয়। দলের আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য এ নিয়ে ট্যুইটারে সরব হন। উপজাতি সম্প্রদায়ের দুই মহিলার সঙ্গে এমন আচরণের পরও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন নিশ্চুপ প্রশ্ন তোলেন তিনি। এর পর একে একে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি, অনুরাগ ঠাকুররা রাজ্যের সরকারকে নিশানা করা শুরু করেন। 


এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলেছেন রাজ্যের নারীকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা। তাঁর বক্তব্য, "মালদায় একটি বিশাল হাট রয়েছে। বিক্রিবাটা, কেনাকাটার জন্য বহু মানুষ আসেন। এই দুই প্রান্তিক মহিলাও এসেছিলেন। সেখানে চুুরির ঘটনা ঘটে থাকবে। তাতে মহিলাতে মহিলাতে ঝগড়া, ঝামেলা বাধে। এতে রাজনীতির কী আছে? কী বক্তব্য বিজেপি-র? ওখানে মহিলা সিভিক পুলিশ ছিলেন। তাঁরা ঝামেলা মেটানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ভিড় তাঁদের পরোয়া করেনি। পরে ওই দুই মহিলা চলে যান। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। মানুষ নিজে হাতে আইনশৃঙ্খলা তুলে নিয়েছেন, যা কোনও অবস্থাতেই কাম্য নয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। "


রাজ্যে তৃণমূলের (TMC) সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারও (Jay Prakash Majumdar ) এ নিয়ে বিজেপি-কে একহাত নেন। তিনি বলেন, "আমি যেহেতু বিজেপি-তে ছিলাম, অনুরাগ ঠাকুর এবং বাকিদের ভাল করে জানি। বিজেপি-র একটি আলাদা বিভাগ রয়েছে, যেখানে ভুয়ো খবর তৈরি হয়, ভুয়ো খবর প্রচার করা হয় এবং তার ভিত্তিতে রাজনৈতিক অভিমত তৈরি করা হয়। পৃথিবীর আর কোনও দলের এমন বিভাগ রয়েছে বলে জানা নেই, কিন্তু বিজেপি-র আছে। এমন কোনও ঘটনা ঘটেছে বলে পাঁচলার স্থানীয় মানুষরাও জানেন না। বিজেপি বিষয়টিকে তৈরি করেছে। মণিপুর চোখ ঘোরাতে এখন উঠেপড়ে লেগেছেন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। রাজনীতির সঙ্গে কোনও যোগই নেই এই ঘটনার। রাজ্যের নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।"