সত্যজিত বৈদ্য, কলকতা :  ফের বউবাজারে ফিরছে সেই আতঙ্ক। এবার দুর্গা পিতুরি লেনের পাশের গলি মদন দত্ত লেনে একাধিক বাড়িতে বড় বড় ফাটল ধরে। রাতারাতি আশ্রয়হীন হয়েছে বহু পরিবার। হাতের কাছে যেটুকু পেয়েছেন, সেই সম্বলটুকু নিয়েই ঘর ছেড়েছেন মানুষজন। চোখের সামনে শুধু অনিশ্চয়তা ।

গৃহহারা হলেন সদ্য স্বামীহারা 
গত ১৮ সেপ্টেম্বর স্বামী মারা গিয়েছেন। ছেলে পড়ে অষ্টম শ্রেণিতে। পরিবারের কেউ সঙ্গে নেই। এই অবস্থায় শুক্রবার সকালে মাথার উপরের ছাদটাও অনিশ্চিত হয়ে পড়ল নবনীতা বড়ুয়ার। বউবাজারের মদন দত্ত লেনে তাঁর বাড়িতে দেখা গিয়েছে বিপজ্জনক ফাটল ! আতঙ্কে কিশোর পুত্রকে নিয়ে ঘর ছাড়তে হয়েছে তাঁকে। 



সন্তানকে নিয়ে রাস্তায়
শুক্রবার ছেলেকে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে এসে দাঁড়িয়েছেন নবনীতা বড়ুয়া। কোথায় আশ্রয় নেবেন, জানেন না।  ভোরেই ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ চলার সময় মদন দত্ত লেনের কয়েকটি বাড়িতে ভয়াবহ ফাটল ধরা পড়ে তাঁর বাড়িতে। 


শুক্রবার  ভোরে বিরাটাকার ফাটল স্থানীয় বাসিন্দাদের চোখে পড়ে। তারপরই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে। ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে  ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আতঙ্কে বাড়ি ছেড়ে জিনিসপত্র নিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন তাঁরা। ইতিমধ্যেই বাসিন্দারা ১০টি বাড়ি খালি করে দিয়েছেন। 


স্থানীয় সূত্রে দাবি, KMRCL কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, ১৫ দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। মেট্রোর ইঞ্জিনিয়ারদের প্রাথমিক অনুমান,  গ্রাউটিং এর কাজ চলার সময় সুড়ঙ্গে জল ঢুকে বিপত্তি ঘটেছে। ভোর চারটের পর সুড়ঙ্গে জল ঢুকতে শুরু করে। তার জেরেই ঘটে বিপত্তি।  


ইস্ট ওয়েন্ট মেট্রোর সুড়ঙ্গ নির্মাণে বিপত্তির জেরে, বহু মানুষগুলোর জীবনে নেমে এসেছে চরম অনিশ্চয়তা। একটার পর একটা বাড়িতে ফাটল ধরতে থাকে পরপর। একনিমেষে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় সুখী গৃহকোণ। আগেও এই ঘটনা ঘটে।  তখন কারও ঠিকানা হয়ে যায় অস্থায়ী হোটেল, কারও রুটিরুজিতে কোপ পড়ে। ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি, কয়েকজন আর্থিক সহায়তা পেলেও, অধিকাংশই তা পাননি। 


আতঙ্কের ইতিহাস 
২০১৯-এর ৩১ অগাস্ট। বউবাজারের দুর্গাপিতুরি লেন, স্যাঁকড়াপাড়া লেনে বিকট শব্দে ভেঙে পড়ে একাধিক বাড়ির অংশ। বিপর্যয়ের মুখে পড়ে বাড়ি ছাড়তে হয় বাসিন্দাদের। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ চলার সময় এই বিপর্যয় ঘটে। এরপর গত ১১ মে দুর্গাপিতুরি লেনের কয়েকটি বাড়িতে ফাটল দেখা দেয়। সে সময় ২২টি পরিবারকে ঘর ছাড়তে হয়। ৮-১০টি বাড়িতে ফাটল ধরা পড়ে। শুধু বাড়ি নয়, রাস্তাতেও দেখা দেয় ফাটল। তারপর ফের আজ। আজ ভোররাতে দুর্গা পিতুরি লেনের পাশের গলি মদন দত্ত লেনে একাধিক বাড়িতে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। এলাকাজুড়ে বারবার এমন ঘটনা ঘটনায় আতঙ্কিত ও ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা।