মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর : সাইবার ক্রাইম, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রতারণা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি এক অভিনব ধরনের সাইবার স্ক্যামের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। রীতিমতো অফিস তৈরি করে চলছিল প্রতারণা। যাঁরা নতুন কিছু কিনেছেন, যেমন- গাড়ি কিংবা বাড়ি অথবা আসবাবপত্র, কোনও বৈদ্যুতিন জিনিস, এইসব জিনিস কিনলে, সেইসব ক্রেতাদের ফোন নম্বর জোগাড় করা হতো। এরপর এইসব ব্যক্তিদের ফোন করতেন মহিলারা। প্রলোভন দেখানো হতো। বলা হতো, ওই ব্যক্তিরা উপহার পাবেন। আর তার জন্য সামান্য কিছু টাকা দিতে হবে। এভাবে একবার যদি কিউআর কোডের ফাঁদে ফেলা যেত, তাহলেই কেল্লাফতে। অ্যাকাউন্ট ফাঁকা হতে বেশি সময় লাগত না।
আসানসোল দুর্গাপুর অঞ্চল থেকে এই জাতীয় বেশ কিছু অভিযোগ আসছিল। তদন্তে নামে সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ। দুর্গাপুরের বেনাচিতি বাজারের কমলপুর এলাকায় হানা দিয়ে একটি চারতলা বিল্ডিংয়ে এক অফিসের হদিশ পান তদন্তকারী আধিকারিকরা। চারতলা বাড়ির যে তলায় সাইবার প্রতারণার এই অফিস ছিল সেখানে চিরুনি তল্লাশি চালায় পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় সাতজন মহিলাকে। তাঁদের মধ্যে পাঁচজনকে ছেড়ে দেওয়া হলেও, দুই মহিলাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আজ তাঁদের আদালতে পেশ করা হবে এবং এই দুই সন্দেহভাজন মহিলাকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানাবে আসানসোল দুর্গাপুর কমিশনারেটের সাইবার ক্রাইম শাখা।
এই ঘটনায় আর কে বা কারা যুক্ত রয়েছে, এই অফিস কারা তৈরি করেছিল, মালিক কে, কীভাবে চলত পুরো প্রতারণা চক্র, কাদের থেকে কত টাকা হাতানো হয়েছে, এই সাইবার প্রতারণার ফাঁদে ঠিক কী কী চলছিল, সবটাই খতিয়ে দেখতে জোরকদমে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
পশ্চিমবঙ্গে অনেকদিন ধরেই দেখা গিয়েছে এই সাইবার প্রতারণার জাল। লোভের বশবর্তী হয়ে একবার ফাঁদে পা দিলে আর রক্ষে নেই। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের টাকা ফাঁকা হতে বিশেষ সময় লাগবে না। এইসব প্রতারণার ফাঁদে পা না দেওয়ার জন্য সরকারের তরফেও বারংবার সতর্ক করা হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। কোনও অজানা, অচেনা লিঙ্কে ক্লিক না করা, অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন বা মেসেজ এলে তাতে সাড়া না দেওয়া, ব্যাঙ্কের নাম করে ফোন, সরকারি কোনও দফতরের নাম করে ফোন, প্রিয়জনের বিপদ হয়েছে এমন খবর দিয়ে ফোন- এইসবের মাধ্যমে টাকা চাইলে অবিলম্বে বুঝতে হবে এগুলি আদতে প্রতারণার ফাঁদ। একবার পা দিলে আর রক্ষা নেই।