হিন্দোল দে, জয়দীপ হালদার, সুকান্ত দাস, দক্ষিণ ২৪ পরগনা:  কোথাও জরাজীর্ণ নদীবাঁধ! কোথাও সমুদ্রবাঁধ তৈরিই হয়নি! অশনির (Cyclone Asani) প্রভাবে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনায় ত্রস্ত নামখানা থেকে ফ্রেজারগঞ্জ (Fraserganj News)। জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভাঙলে কী হবে, সেই দুশ্চিন্তায় ঘুম উড়েছে নদীপাড়ের বাসিন্দাদের। বাঁধের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলাশাসক।


'অশনি' আতঙ্কে উপকূল এলাকা তটস্থ


অশনির প্রভাবে ক্রমশ উত্তাল হচ্ছে সমুদ্র। দুর্যোগের মেঘ যত ঘনীভূত হচ্ছে, জলোচ্ছ্বাসে বানভাসি হওয়ার আশঙ্কা দক্ষিণ ২৪ পরগনার সমুদ্র ও নদী উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে ততই যেন জাঁকিয়ে বসছে। এবারও বাঁধ ভেঙে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ভুক্তভোগী মানুষগুলো।


শঙ্কার একটিই কারণ - বাঁধের শোচনীয় অবস্থা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফ্রেজারগঞ্জ (South 24 Parganas News)। গত বছর ইয়াসে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল এই এলাকা। বছর ঘোরার পরেও দেখা যাচ্ছে, সেখানে এখন বালির বস্তা আর শাল খুঁটি পুঁতে তৈরি হচ্ছে বাঁধ। ফ্রেজার সাহেবের বাড়ির কাছ থেকে প্রায় ৮০০ মিটার এলাকা জুড়ে বাঁধ এখনও তৈরিই হয়নি। 


একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসে। সব এলোমেলো করে দিয়ে চলে যায়। কিন্তু বাঁধের দুরবস্থা একই থাকে। ফ্রেজারগঞ্জে সমুদ্র বাঁধের ছবিতেই তা স্পষ্ট।স্থানীয়দের বলতে শোনা যায়, "আতঙ্কে, ভয়ে আছি। রাতে ঘুম আসে না। ভোট এলে শুধু ভোট দাও। আসল সময়ে কাজে নেই।"


আরও পড়ুন: Lalbazar on Cyclone Asani : দ্রুত ব্যবস্থার উদ্যোগ, অশনির-আশঙ্কায় লালবাজারে তৈরি ইউনিফায়েড কম্যান্ড সেন্টার


নামখানা ব্লকের অন্তর্গত পাতিবুনিয়া গ্রাম। বঙ্গোপসাগর ও চিনাই নদীর মোহনায় অবস্থিত এই গ্রামে নদীবাঁধের যা অবস্থা, তাতে প্রবল জলোচ্ছ্বাস তো দূরের কথা, একটু জোরাল স্রোতের ধাক্কাও সামলাতে পারবে কি না, তা নিয়ে গ্রামবাসীদেরই সন্দেহ রয়েছে। গ্রামের বাসিন্দা নন্দন বর্মন বলেন, "কোনও কাজ হয় না। যখনই দুর্যোগ আসে, তখনই জেসিবি এনে কাজ দেখানো হয়।"


দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সেচ দফতর সূত্রে খবর, বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগে শুধু সাগরদ্বীপেই ১১টি জায়গায় নদীবাঁধ ভেঙেছে।  তার মধ্যে ২টি জায়গায় পাকা বাঁধ নির্মাণ হচ্ছে। বাকি ৯টি জায়গায় কাঁচা বাঁধই থাকছে।  মৈপীঠ কোস্টাল থানার পূর্ব গুড়গুড়িয়ার হালদারঘেরি গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে মাকড়ি নদী। ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে সেখানে বাঁধ সংস্কার শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার বাঁধের পরিস্থিতি নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠকের পর দ্রুত সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দিয়েছেন জেলাশাসক। 


তথৈবচ অবস্থা বাঁধের


 দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক পি উলগানাথন বলেন, "ফ্রেজারগঞ্জে ৮০০ মিটার নদীবাঁধ তৈরি বাকি। যত দ্রুত সম্ভব তৈরির চেষ্টা চলছে। কোন কোন বাঁধ দুর্বল রয়েছে তা খতিয়ে দেখে তালিকা তৈরি করে পাঠানো হবে।" নদীপাড়ের দুঃখের বারোমাস্যা অশনির আঘাতে যেন আরও প্রকট না হয়, অসবহায় পরিবারগুলোর এটাই প্রার্থনা।