কলকাতা : 'আমফানে'র মতো নয়, প্রভাবের দিক থেকে 'রেমালে'র মতো হতে পারে বলে আগেই অনুমান করেছিল আবহাওয়া দফতর। তা সত্ত্বেও পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে এই আশঙ্কায় আগাম সব ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছিল প্রশাসন। তবে, আশঙ্কা থাকলেও ঘূর্ণিঝড় 'দানা'র বিশেষ প্রভাব পড়ল না বাংলায়। উত্তর ওড়িশা অভিমুখে এগোনোর পাশাপাশি, গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে চলেছে এই ঘূর্ণিঝড়। গতকাল রাতে ওড়িশার ধামারার কাছে ল্যান্ডফল করে ওড়িশাতেই 'অ্যারেস্ট' হল ঘূর্ণিঝড়। সকালেই ল্যান্ডফলের প্রক্রিয়া শেষ করে ধীরে ধীরে শক্তি হারাচ্ছে দানা। 


ঝড়ের দাপট না থাকলেও বৃষ্টিতে ভাসছে দক্ষিণবঙ্গ। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব সবথেকে বেশি পড়েছে পূর্ব মেদিনীপুরে। উপকূলবর্তী এলাকায় ৮০ থেকে ৯০ কিমি বেগে বইতে পারে ঝোড়ো হাওয়া। নন্দীগ্রাম-খেজুরি-এগরায় ভেঙেছে গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি। পূর্ব মেদিনীপুরে উপড়ে গেছে প্রায় ১৭৫টি বিদ্যুতের খুঁটি। বিদ্যুৎ সংযোগ নেই অনেক এলাকায়। কলকাতাতেও সকাল থেকে মাঝেমধ্যে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে। হাওড়া, হুগলি-সহ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে আজ বিকেল পর্যন্ত বৃষ্টি চলবে বলে আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে।


পূর্ব মেদিনীপুরে প্রভাব-


ঘূর্ণিঝড় 'দানা'র তাণ্ডবে পূর্ব মেদিনীপুরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।এগরা, খেজুরি ১ নম্বর ব্লক, নন্দীগ্রাম ১ নম্বর ব্লকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সবথেকে বেশি। জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, সাড়ে ৩০০-৪০০টি কাঁচা বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত। আড়াইশোরও বেশি গাছ ভেঙেছে। উপড়ে পড়েছে ১৭৫টি বিদ্যুতের খুঁটি। নন্দীগ্রামের বাহাদুরপুরে ভেঙে পড়েছে বিদ্যুতের খুঁটি, গাছ। এছাড়া, মন্দারমণি-সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় সমুদ্রের জল ঢুকে যায়। চাষের জমিতে নোনা জল ঢোকায় ফসলের ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা। দিঘায় আজ সকাল থেকে মেঘলা আকাশ, মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে। আজও সমুদ্র স্নান ও সৈকতে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। 


কলকাতায় প্রভাব-


ঘূর্ণিঝড় দানার দাপটে কলকাতায় সকাল থেকে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে। কলকাতার অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় জল জমে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। ঘূর্ণিঝড় 'দানা'-র প্রভাবে ভোর থেকে টানা বৃষ্টি। তার জেরে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউর বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট ক্রসিং জলমগ্ন। রাস্তার এক প্রান্ত দিয়ে গাড়ি চলাচল করতে দেখা যায়। কারণ, অন্য প্রান্তে জল জমে একাকার। এর পাশাপাশি শ্যামবাজার-সহ উত্তর কলকাতার বিস্তীর্ণ জায়গা, মুক্তারাম বাবু স্ট্রিট, ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি, স্ট্র্যান্ড রোড সংলগ্ন নর্থ পোর্ট থানা সংলগ্ন জায়গায় জল জমে রয়েছে। ঠনঠনিয়া কালীবাড়ির ঠিক পাশে বিধান সরণিতে জমেছে জল। জল সরানোর জন্য সুপার সাকশন পাম্প পাঠানো হয় কলকাতা পুরসভা থেকে। দক্ষিণ কলকাতারও বিভিন্ন জায়গায় জল জমে গিয়েছে।


দক্ষিণ ২৪ পরগনা-


বাংলার উপকূলেও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব। সকাল থেকে গোটা সুন্দরবনজুড়ে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে, সঙ্গে দমকা হাওয়া। আজ গোটা জেলায় অতি ভারী বৃষ্টির লাল সতর্কতা জারি রয়েছে। গঙ্গাসাগরে কপিলমুনির আশ্রমের ৩, ৪ ও ৫ নম্বর মেলা মাঠ জল থই-থই। সাগর এবং কাকদ্বীপেও তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে। সাগরে বেশ কয়েকটি জায়গায় গাছ ভেঙে পড়েছে। সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা গাছ কেটে রাস্তা পরিষ্কারের কাজ চালাচ্ছেন। পূর্ব ঘোষণা মতো সকাল ১০টা থেকে নামখানা থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। সাগর, কাকদ্বীপ-সহ সুন্দরবনজুড়ে আজও ফেরি চলাচল বন্ধ। গোসাবাতেও বৃষ্টি হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর নেই।