কৃষ্ণেন্দু অধিকারী ও অরিত্রিক ভট্টাচার্য, কলকাতা: ঘূর্ণিঝড় দানার সেরকম কোনও দাপট দেখা গেল না বাংলায়। গত কয়েকদিনে আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস দেখে, অনেকে ভেবেছিলেন, আয়লা, আমফান কিংবা ইয়াসের মতো, দানার প্রভাবেও হতে চলেছে বিধ্বংসী ঝড়। যদিও, আবহবিদদের মতে, ল্য়ান্ডফলের সময় আমফানের গতির ধারেকাছে ছিল না দানার গতি। তার অভিমুখও রাজ্য়ের দিকে ছিল না। তাই বাংলাকে দানা দিয়েছে শুধুই বর্ষণ।
তার নামে কার্যত থরহরি কম্পমান হয়ে বসেছিল বাংলা থেকে ওড়িশা।তবে শেষ অবধি আয়লা-আমফানের মতো বিধ্বংসী চেহারা না নিয়ে, বাংলাকে রেহাই দিল দানা। এযাত্রা ঘরবাড়ি বেঁচে যাওয়ায়, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল উপকূলবর্তী এলাকার গরিব মানুষ। আর মারকাটারি ঝড় না দেখতে পেয়ে, দীর্ঘশ্বাস ফেলল, পুরী-দিঘায় থেকে যাওয়া নাছোড়বান্দা পর্যটকরা। আবহাওয়া দফতরের গত কয়েকদিনের নিয়মিত সতর্কবার্তা, বৃহস্পতিবার সারারাত মুখ্য়মন্ত্রীর নবান্নে থেকে যাওয়া দেখে , অনেকে কার্যত ধরেই নিয়েইছিলেন, আয়লা, আমফান, কিংবা ইয়াসের কাছাকাছি কিছু হতে চলেছে দানা। তার প্রভাবেও জোরাল ঝড় আসতে চলেছে।
কিন্তু, শেষ অবধি দিনভর বৃষ্টি ছাড়া, এরাজ্য়ে দানার আর কোনও প্রভাব দেখা গেল না। ঝড়ের গর্জন নয়, দানা দিল শুধুই বর্ষণ। এমনকী আবহাওয়া দফতর অবধি কার্যত মেনে নিয়েছে, তারা যতটা ভেবেছিল, ঝড়ের তীব্রতা ততটা ছিল না। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা সোমনাথ দত্ত বলেন, 'হাওয়ার গতিবেগ ওড়িশাতে দেখা গেল, যা ভাবা হয়েছিল, সেই মতো হয়নি। কেন হয়নি, অনুসন্ধান করতে হবে।'
২০০৯ সালে আয়লা কিংবা ২০২০ সালে আমফান, কলকাতা এবং জেলাজুড়ে প্রবল তাণ্ডব চালিয়েছিল। ২০২১ সালে ইয়াস কলকাতায় সেরকম প্রভাব না ফেললেও, উপকূলে সমুদ্রকে উত্তাল করেছিল। কিন্তু, দানার প্রভাবে কোথাও সেরকম কিছুই হয়নি। আবহবিদদের মতে, ল্য়ান্ডফলের সময় আমফানের যে গতি ছিল, দানার গতি তার ধারেকাছেও ছিল না। আর আয়লা এবং আমফানের মতো দানার অভিমুখ রাজ্য়ের দিকে ছিল না। এই কারণেই বাংলায় তার সেরকম কোনও প্রভাব দেখা যায়নি।
আরও পড়ুন, দানার জেরে কালীপুজোতেও কি ভোগাবে বৃষ্টি ? জেনে নিন বড় আপডেট
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের প্রাক্তন ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল জি সি দেবনাথ বলেন, 'আমফান ছিল অনেক শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। আমফান যখন সমুদ্রের মধ্য়ে ছিল, তখন ছিল সুপার সাইক্লোন ক্য়াটেগরির। ১৫০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার গতিবেগে প্রবেশ করেছিল। কিনতু, দানা তার থেকে নিম্ন ক্য়াটেগরির ঘূর্ণিঝড়। ল্য়ান্ডফল ওড়িশায় হয়েছে। গতিবেগ ঘণ্টায় ছিল ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার। আয়লা ও আমফান দুটোরই অভিমুখ রাজ্য়ের দিকে ছিল। সোজাসুজি। সাইক্লোন মুভ করার সময় সবচেয়ে বেশি ডিভাস্টেশনের ক্ষতি থাকে ডানদিকে। দানা ধামারা পোর্টে ল্য়ান্ডফলের পরে বেঁকে গেছে। অভিমুখ ওড়িশার দিকে। আমাদের রাজ্য়ের দিকে নয়।'শনিবার থেকে কলকাতায় দুর্যোগ কাটার সম্ভাবনা রয়েছে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।