কলকাতা: ডিএ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলছে মামলা। স্যাট, হাইকোর্ট পেরিয়ে এবার সুপ্রিম কোর্টে রাজ্যের সরকারি কর্মীদের ডিএ মামলা। সম্প্রতি ডিএ নিয়ে রাস্তায় নেমেছিল রাজ্য সরকারি কর্মী এবং রাজ্য সরকারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের সংগঠনগুলি। সেই মিছিল ঘিরে ধুন্ধুমার বেঁধেছিল। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি, আন্দোলনকারীর পেটে পুলিশের ঘুষি। এমন নানা ছবি দেখা গিয়েছিল। তারপরে একাধিক জামিনঅযোগ্য ধারায় গ্রেফতার করা হয়েছিল বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারীকে। যদিও আদালত থেকে তাঁদের সকলেরই জামিন হয়ে যায়। এরপরে ডিএ  নিয়ে মুখ  খোললেন খোদ রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।


কী বললেন মন্ত্রী?
এদিন ডিএ নিয়ে বলতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, 'ডিএ নিয়ে অবহেলা করা হচ্ছে এমন নয়। একটা গেল গেল রব তৈরি করা হচ্ছে। ডিএ দেওয়ার বিষয়ে আমরা সংবেদনশীল।' ডিএ নিয়ে বলতে গিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগের কথাও তুলে ধরেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, 'কিন্তু কেউ বলছেন না, কেন্দ্র অর্থনৈতিক অবরোধ করছে। কেন্দ্রের কাছে ১ লক্ষ ১৮ হাজার কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁদের হক আছে। কিন্তু একটু তো কনসিডার করুন।' 


সম্প্রতি আন্দোলনে ধুন্ধুমার:
সম্প্রতি DA আন্দোলনে সরকারি কর্মচারীদের ৩০টি সংগঠনের বিধানসভা অভিযান হয়। ওই ঘটনায় কার্যত ধুন্ধুমার বেঁধেছিল। ৪৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে সকলেই জামিন পেয়ে যান।   ধৃতদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৩ ধারা - কর্তব্যরত পুলিশকর্মীকে কাজে বাধা, ৩২৩ ধারা - পুলিশকর্মীকে মারধর, ১৪৭, ১৪৮, ১৪৯ ধারা - হিংসা ছড়ানো, ৫০৯ ধারা - মহিলা পুলিশকর্মীকে উদ্দেশ্য করে অশালীন অঙ্গভঙ্গি ও কটূক্তি এবং ৫০৬ ধারা - হুমকি, এই সমস্ত জামিন অযোগ্য ধারায় DA আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে পুলিশ।  


এই বকেয়া ডিএ (DA) নিয়ে আইনি লড়াইও চলছে দীর্ঘদিন ধরে। বর্তমানে সেই মামলা রয়েছে সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court)। বুধবার এই সরকারি কর্মচারীরা, আন্দোলনে নেমেছিলেন, ষষ্ঠ বেতন কমিশন অনুযায়ী বকেয়া ডিএ’র দাবিতে। সেই অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের থেকে ৩৫ শতাংশ কম ডিএ পান রাজ্য সরকারি কর্মীরা। DA নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা হয়েছিল পঞ্চম বেতন কমিশনের ভিত্তিতে। সেই অনুযায়ীও, রাজ্য সরকারি কর্মীরা, কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের থেকে ৩৪ শতাংশ পিছিয়ে। DA সংক্রান্ত মামলায় এ বছরের ২০ মে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, ৩ মাসের মধ্যে রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া DA মেটাতে হবে। কিন্তু, সময়সীমা শেষের আগেই ১২ অগাস্ট, ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়ে, হাইকোর্টে যায় রাজ্য। ৬ সেপ্টেম্বর কলকাতা হাইকোর্টে   হলফনামা দিয়ে, রাজ্য সরকার দাবি করে, সরকারি কর্মীদের কোনও DA বকেয়া নেই! ২২ সেপ্টেম্বর রাজ্য সরকারের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করে পুরনো রায় বহাল রাখে দেয় আদালত। এর পর হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের  দ্বারস্থ হয় রাজ্য সরকার। 


ডিএ দেওয়া হলে কতজন উপকৃত হবে? 
পরিসংখ্যান বলছে, ডিএ দেওয়া হলে রাজ্য সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী মিলিয়ে ৬ লক্ষের বেশি মানুষ উপকৃত হবেন। আর উল্টোদিকে বর্ধিত হারে ডিএ দিতে রাজ্য সরকারের প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। সরকারি কর্মচারীরা বলেছিলেন, হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ রায়ের মধ্যে দিয়ে পুজোর উপহার দিয়ে দিয়েছে। এবার রাজ্য সরকার বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দিক। কিন্তু তা হয়নি। এবার সুপ্রিম কোর্টে ফের চলবে আইনি লড়াই।

আরও পড়ুন: 'আমাদের এখানে, ফর দ্য পার্টি, অফ দ্য পার্টি, বাই দ্য পার্টি’ বিধানসভায় দাঁড়িয়ে শাসকদলকে আক্রমণ শুভেন্দুর