বিটন চক্রবর্তী, কৃষ্ণেন্দু অধিকারী ও আশাবুল হোসেন, কলকাতা: প্রায় ছয় বছর ধরে রাজ্যে ডিএ নিয়ে টানাপড়েন চলছে রাজ্য সরকার ও সরকারি কর্মীদের মধ্যে। তা গড়িয়েছে আদালতেও। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার রাজ্য সরকারের পুনর্বিবেচনার আর্জি খারিজ করে, কর্মচারীদের দাবির পক্ষে রায় দিল হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। এর ফলে, রাজ্য সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী মিলিয়ে ছয় লক্ষের বেশি মানুষ উপকৃত হবেন।
স্যাট থেকে সিঙ্গল বেঞ্চ হয়ে ডিভিশন বেঞ্চে গড়িয়েছে ডিএ মামলা। লাগাতার ধাক্কা খাওয়ার পর এবার কি বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দেবে রাজ্য সরকার? না কি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবে? এই নিয়েই এখন জল্পনা বাড়ছে।
ডিএ দেওয়া হলে কতজন উপকৃত হবে?
পরিসংখ্যান বলছে, ডিএ দেওয়া হলে রাজ্য সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী মিলিয়ে ৬ লক্ষের বেশি মানুষ উপকৃত হবেন। আর উল্টোদিকে বর্ধিত হারে ডিএ দিতে রাজ্য সরকারের প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। সরকারি কর্মচারীরা বলছেন, হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ রায়ের মধ্যে দিয়ে পুজোর উপহার দিয়ে দিয়েছে।নএবার রাজ্য সরকার বকেয়া ডিএ মিটিয়ে তার তরফে পুজোর উপহার দিক।
কোথায় কত ডিএ:
কেরল ৩৬ শতাংশ তামিলনাড়ু ও মধ্যপ্রদেশে ৩৪ শতাংশ হারে উত্তরপ্রদেশে ৩১ শতাংশ হারে সরকারি কর্মীচারীরা DA পান। মহারাষ্ট্রে ৩৪। ছত্তীসগঢ় ও ঝাড়খণ্ডে ২৮। কর্ণাটকে ২৭.২৫। অন্ধ্রপ্রদেশে ৩৮। হরিয়ানায় ২৮ শতাংশ হারে DA দেওয়া হয়। পড়শি রাজ্য ওড়িশায় ৩৪ শতাংশ হিমাচল প্রদেশ ৩১ শতাংশ
কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের সঙ্গে রাজ্য সরকারের কর্মীদের ডিএ বৈষম্যর বিরুদ্ধে ২০১৬ সালে স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল বা স্যাট (SAT)-এ মামলা করেছিল কংগ্রেস প্রভাবিত কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্মেন্ট এমপ্লয়িজ-সহ সরকারি কর্মীদের ২টি সংগঠন।
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি-তে স্যাট (SAT) রায় দেয়, ডিএ (DA) দয়ার দান। তা দেওয়া বা না দেওয়া রাজ্য সরকারের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে! সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ওই বছর ৩০ মার্চ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় সরকারি কর্মী সংগঠন।
বক্তব্য ঘিরে বিতর্ক:
২০১৭-র ৭ সেপ্টেম্বর। এই দিন রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের জন্য ১৫% ডিএ ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু, এরইসঙ্গে তাঁর করা একটি মন্তব্য ঘিরে বিতর্কের ঝড় ওঠে। সেদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, 'ঘেউ ঘেউ করে লাভ হবে না। আমি যতটা দিতে পারি সেটা আমাকে বলতে হয় না।'
কবে কীভাবে এগিয়েছে মামলা:
এরপর ডিএ মামলায়, ২০১৮ সালের ৩১ অগাস্ট হাইকোর্ট রায় দেয়, মহার্ঘ ভাতা সরকারি কর্মীদের অধিকার। কীভাবে তা দেওয়া হবে, ২ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করুক স্যাট (SAT)। ২০১৯-এর ২৬ জুলাই স্যাটের তৎকালীন বিচারপতি রঞ্জিত কুমার বাগ ও সুরেশ কুমার দাস নির্দেশ দেন, ১ বছরের মধ্যে সরকারি কর্মীদের DA মেটাতে হবে। কিন্তু, রাজ্য সরকার তা না দেওয়ায় সরকারি কর্মী সংগঠন আদালত অবমাননার মামলা করে ফের SAT-এর দ্বারস্থ হয়। ২০১৯-এর অক্টোবরে SAT’এ রিভিউ পিটিশন দাখিল করে রাজ্য সরকার। ২০২০-র ৮ জুলাই সেই পিটিশন খারিজ করে স্যাট। তার পর রাজ্য সরকার আবেদন জানায় হাইকোর্টে। হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, স্যাটের নিয়ম মেনে বকেয়া ডিএ (DA) মিটিয়ে দিতে হবে। ডিভিশন বেঞ্চের এই রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানায় রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার সেই আর্জি খারিজ করে আগের রায়ই বহাল রাখল কলকাতা হাইকোর্ট।
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, 'ডিএ-তো সরকারি কর্মচারী ও শিক্ষকদের অধিকার, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে স্টাইলে পশ্চিমবঙ্গ চালাতে চান, সেই স্টাইলে তো বিচারব্যবস্থা চলবে না। উনি ডিএ অস্বীকার করেন, আবার হলফনামা দিয়ে বলেন ডিএ বাকি নেই।'
তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায় বলেন, 'এটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু, পাশাপাশি দেশের যা অর্থনৈতিক অবস্থা, না দেওয়ার তো কথা মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী বা রাজ্য সরকার কখনও ভাবেননি, বলেননি। আমাদের সরকার, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী সবসময় কর্মচারীদের পক্ষে।'
আরও পড়ুন: 'আন্দোলেনর পেছনে তৃণমূলের মদত', কুর্মি আন্দোলন নিয়ে আরও বিস্ফোরক মন্তব্য দিলীপের