সৌভিক মজুমদার, মোহন প্রসাদ, মুন্না আগরওয়াল: দার্জিলিং পুরসভায় (Darjeeling Municipal Corporation) চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রক্রিয়ায় স্থগিতাদেশ দিল না কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) সার্কিট বেঞ্চ। তৃণমূলের (TMC) সমর্থনে অনীত (Anit Thapa) থাপার দল, নাকি হামরো পার্টি (Hamro Party)? দার্জিলিং পুরসভার রাশ কার হাতে থাকবে? বুধবারই অনাস্থা ভোট। হাইকোর্টের নির্দেশের পর বিজ্ঞপ্তি জারি করল মহকুমা শাসকের দফতর। 


অনাস্থা প্রক্রিয়ায় স্থগিতাদেশ দিল না কলকাতা হাইকোর্ট


এ বার কি দার্জিলিং পুরসভাতেও পালাবদল? তৃণমূলের সমর্থনে দার্জিলিং পুরসভা দখল করবে অনীত থাপার দল? দলবদলের খেলায় পাহাড়েও রং বদল আসন্ন? পাহাড়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে এমন একাধিক প্রশ্ন উঠে আসছে। সেই আবহেই সোমবার কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়ে দিল, দার্জিলিং পুরসভায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনতে কোনও বাধা নেই।হামরো পার্টির আর্জি খারিজ করে জানিয়ে দিল হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ।

দল তৈরির চার মাসের মধ্যেই চলতি বছর পুরভোটে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ৩২ আসনের দার্জিলিং পুরসভায় বোর্ড গঠন করে অজয় এডওয়ার্ডের হামরো পার্টি। তার ন'মাসের মধ্যেই হামরোর ছয় জন কাউন্সিলর অনীত থাপার ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চায় (Bharatiya Gorkha Prajatantrik Morcha) যোগ দেন। তার পর গত ২৪ নভেম্বর চেয়ারম্যানের পদত্যাগ চেয়ে নোটিস দেন প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার ছয় জন কাউন্সিলর।


আরও পড়ুন: Oxygen Service Situation: ফের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে করোনা, রাজ্যের হাসপাতালগুলির অক্সিজেন পরিষেবা কী অবস্থায়? প্রশ্ন কেন্দ্রের

এর পর, ১৫ দিনের মধ্যে মিটিং না ডাকায় গত ১৩ ডিসেম্বর ফের ভাইস চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন জানানো হয়। তাতেও কাজ না হওয়ায়, বুধবার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনায় বসেন কয়েকজন কাউন্সিলর। অনাস্থা আটকাতে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চে যায় হামরো পার্টি। তাদের দাবি, অনাস্থা আনতে গেলে এক তৃতীয়াংশ কাউন্সিলরকে নোটিস দিতে হবে।

যদিও সোমবার বিচারপতি কৌশক চন্দ হামরো পার্টির আর্জি খারিজ করে জানিয়ে দেন। জানিয়ে দেন, পুর-আইন মেনেই অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছে। এটা চেয়ারম্যানের ব্যর্থতা, যে তিনি মিটিং ডাকেননি। ফলে, বুধবার অনাস্থা প্রস্তাব আনতে কোনও বাধা রইল না।

২০২২ সালের পুরভোটে দার্জিলিংয়ের ৩২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৮টিতেই জয়ী হয় হামরো পার্টি। নয়টি আসনে জেতে অনীত থাপার ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা। বিমল গুরুংয়ের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা পায় তিনটি আসন। দু'টি আসনে জয়ী হয় তৃণমূল। 


এ বার কি দার্জিলিং পুরসভাতেও পালাবদল!

এর পরই, GTA-র নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায়, গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার কাউন্সিলর অমর লামা পদত্যাগ করেন। তার কয়েক মাসের মধ্যে বদলে যায় ছবি।
দার্জিলিং পুরসভায় ম্যাজিক ফিগার ১৬। দলবদলের ফলে হামরো পার্টির কাউন্সিলর সংখ্যা কমে হয় ১২। অন্য দিকে, ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার পক্ষে কাউন্সিলরের সংখ্যা বেড়ে ১৪ হয়। তৃণমূলের দুই কাউন্সিলরও জানিয়ে দেন, তাঁরা অনীত থাপার দলকেই সমর্থন করবেন। ফলে, ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার ঝুলিতে এখন রয়েছে ১৬ জন কাউন্সিলরের সমর্থন। অর্থাৎ ম্যাজিক ফিগার ছুঁয়ে ফেলেছে বিজিপিএম ও তৃণমূল। 
এই রাজনৈতিক সমীকরণে বড় ধরনের পরিবর্তন না হলে, অনাস্থা ভোটের পর দার্জিলিং পুরসভার রাশ বিজিপিএম ও তৃণমূলের হাতে যাওয়া কার্যত সময়ের অপেক্ষা।