মোহন প্রসাদ, দার্জিলিং : দেশের স্বাধীনতার (Independence) ৭৫ বছর পূর্তি। জাতীয় পতাকা (National Flag) ঝলমলিয়ে উঠল সুদূর অ্যান্টার্কটিকার (Antarctica) সর্বোচ শৃঙ্গের বেসক্যাম্পে। তেরঙ্গা বিছিয়ে দিলেন দার্জিলিং হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের (Darjeeling Himalayan Mountaineering Institute) ৩ প্রশিক্ষক। দুধ সাদা বরফের পাহাড়ের ওপর ঝলমল করল বিশাল তেরঙ্গা। সুদূর অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট ভিনসন ম্যাসিফেই (Mount Vinson Masif) বিছিয়ে দেওয়া হল তেরঙা।
দক্ষিণ গোলার্ধের কুমেরু বৃত্তের দক্ষিণে অবস্থিত অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে এ যেন এক নতুন জয় হো। ৪ হাজার ৮৯২ মিটার উঁচু বিখ্যাত স্তূপ পর্বতের শীর্ষে শোভা পেল সবচেয়ে বড় জাতীয় পতাকা। যার আয়তন সাড়ে ৭ হাজার বর্গফুট। দুর্গম পাহাড়ের চড়াই ভেঙে গত ২৭ নভেম্বর এই তেরঙ্গা তুলে ধরেছেন দার্জিলিং হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের তিন প্রশিক্ষক। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে সেখানে জাতীয় পতাকা বিছিয়ে দিয়েছেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন জয় কিষণ, নায়েক সুবেদার মহেন্দ্র যাদব এবং সৌমেন্দু মর্ডুন্যা।
মাইনাস ২৫ থেকে মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা, সঙ্গে তীব্র মেরুঝড়, মোটেই সহজ ছিল না এই অভিযান। মাউন্ট ভিনসন ম্যাসিফে পতাকা বিছনোর পর তিনদিন খারাপ আবহাওয়ার কারণে সামিট ক্যাম্পে আটকে থাকতে হয়েছিল তিন ভারতীয়কে। দুজন জার্মান পর্বতারোহীকেও উদ্ধার করেন তাঁরা। গোটা অভিযান পর্ব জুড়ে ছিল অ্যাডেভেঞ্চার আর রোমাঞ্চ।
২০ নভেম্বর বাগডোগরা থেকে শুরু হয়েছিল ২৬ দিনের অভিযান। দিল্লি, দোহা, সাও পাওলো, সান্তিয়াগো, দক্ষিণ মেরুর শহর পুন্টা অ্যারেনাস হয়ে শেষ পর্যন্ত অ্যান্টার্কটিকার প্রবেশদ্বার ইউনিয়ন গ্লেসিয়ারে পৌঁছন তাঁরা। ৭ নভেম্বর বেসক্যাম্পে জাতীয় পতাকা মেলে ধরার পর, ৩০ নভেম্বর ভিনসন ম্যাসিফ শিখর জয় করেন। ইউনিয়ন গ্লেসিয়ারে সাইকেল সফর, সান্তিয়াগোতে আন্দিজ পর্বতের ১৭ হাজার ফুট উঁচু থেকে স্কাই ডাইভ, ১২৫ বার সূর্য নমস্কার, কী ছিল না এই অভিযানে! বরফের দেশে ভারতের গৌরব মেলে ধরে ১৬ ডিসেম্বর বাগডোগরা ফেরেন তিন পর্বতারোহী।
জয় কিষণ দার্জিলিংয়ের হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর। বাকি দুজন ওই প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষক। তিনি বলেছেন, 'হোয়াইট কন্টিনেন্ট, বরফের ওপর শুনসান জায়গা, খারাপ আবহাওয়া, তার মধ্যে দেশের জাতীয় পতাকা তুলে ধরাই ছিল লক্ষ্য। সাত হাজার ৫০০ বর্গ ফুট এলাকা তিরঙ্গা দিয়ে রঙিন করে দিই আমরা। মাইনাস ৩৫ থেকে ৪০ ডিগ্রিতে নেমে গিয়েছিল তাপমাত্রা। জার্মান ক্লাইম্বাররা রিকোয়েস্ট করেছিল। ওদের দুজনকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি। ৪ ডিসেম্বর আমরা যখন যোগা করি, তখন ওরাও অংশ নেয় জোগায়।'