বেহালা: বাবার হাত ধরে স্কুল যাওয়ার পথে লরি পিষে দিয়েছিল সাত বছরের সৌরনীলকে। সেই দুর্ঘটনা শুধু তার মা-বাবাকে সন্তানহারা করেনি। গোটা পরিবারটাকে ছারখার করে দিয়েছে। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে সৌরনীলের বাবা এখনও হাসপাতালে। তাঁর একটা পা বাদ দিতে হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা। এরপর সংসার চলবে কীকরে, ভেবে SSKM-এর ট্রমা কেয়ারের বাইরে চোখের জল ফেলছেন সৌরনীলের মা।


৪ অগাস্টের সকালটা বিপর্যয়ের মতো এসেছিল বেহালার সরকার পরিবারের কাছে! বাবার সঙ্গে স্কুল যাওয়ার পথে লরিতে পিষ্ট হয়ে মৃত্য়ু হয়েছিল সাত বছরের সৌরনীল সরকারের। ছেলের সকুল ব্য়াগ আঁকড়ে ধরে মায়ের সেই বুক ফাটা কান্না দেখে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি অনেকেই। তার পর প্রায় একমাস পেরিয়ে গেছে। কিন্তু, বেহালার সরকার পরিবারের বিপদ কাটছে না! সন্তানহারা মায়ের ওপর দিয়ে এখনও বয়ে যাচ্ছে তুমুল ঝড়! যে লরির চাকায় পিষ্ট হয়ে সৌরনীলের মৃত্য়ু হয়, সেই লরির চাকা চলে গেছিল মৃত শিশুটির বাবার পায়ের ওপর দিয়ে। 


এসএসকেএমে একাধিক অস্ত্রোপচারের পর ১৫ অগাস্ট তিনি বাড়িতে আসেন। কিন্তু, কয়েকদিনের মধ্য়ে ক্ষতস্থানে আবার সংক্রমণ ছড়ায়। ফের ভর্তি করতে হয় হাসপাতালে। এখন চিকিৎসকরা ভয় পাচ্ছেন, পা-টা আদৌ বাঁচানো যাবে তো? আর এসব শুনে এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ার সেন্টারের বাইরে দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলছেন তাঁর স্ত্রী দীপিকা সরকার। 


ছেলে হারানোর শোক থেকে বেরোতে পারেননি। তার মধ্য়ে এই ধাক্কা! বাড়িতে একমাত্র রোজগেরে বলতে ছিলেন তাঁর স্বামী। একটা ছোট্ট দোকান চালাতেন। কিন্তু, টানা হাসপাতালে ভর্তি থাকায় সেই দোকান বন্ধ। রোজগারও নেই। এই অবস্থায় বাড়ি-হাসপাতাল দৌড়োদৌড়ি, চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে গিয়ে নাকানিচোবানি খাচ্ছেন দীপিকা সরকার। এরপর স্বামীর পা বাদ গেলে কী হবে? সেটা ভেবেই বুক কাঁপছে তাঁর।


২৫ অগাস্ট ছিল সৌরনীলের জন্মদিন। যে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে আদর করার কথা ছিল, তার খেলনা নিয়ে মা গেছিলেন সমাধিস্থলে। ছোট্ট সোনাইকে যেখানে শোওয়ানো আছে, খেলনাগুলো সেখানেই রেখে এসেছেন। কিন্তু, দুদণ্ড যে বসে চোখের জলটুুকু ফেলবেন, সেই উপায়ও তো নেই! আবার স্বামীর জন্য় হাসপাতালে ছুটতে হয়েছে। 


ছেলে চলে গেছে। এখন সংসারটা বাঁচবে তো? চোখের জল মুছতে মুছতে দীপিকা সরকার বলছেন, আর কত ঝড় বাকি কে জানে?